গয়না চুরি

অলংকরণ: এস এম রাকিব

‘পোয়ারো,’ বন্ধুর উদ্দেশে বললাম আমি, ‘হাওয়া বদলালে তোমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।’

‘তা-ই মনে হয় তোমার, বন্ধু?’

‘হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত।’

‘আচ্ছা?’ বন্ধুর মুখে হাসি। ‘পাকা ব্যবস্থা তাহলে করেই এসেছ? তা কোথায় নিয়ে যাবে?’

‘ব্রাইটনে। আমার এক বন্ধু আছে ওখানে। গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনে কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে এলে মন্দ হয় না।’

‘এমন লোভনীয় একটা প্রস্তাব কি ফেলে দেওয়া যায়, হে?’

‘তাহলে ওই কথাই রইল,’ বললাম আমি।

শনিবার সন্ধ্যা। গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনে রেস্তোরাঁয় বসে রাতের খাবার খাচ্ছি আমরা। চারপাশে হাস্যোজ্জ্বল মানুষের ভিড়। মেয়েদের হাত, গলা, নাক, কানে উপচে পড়ছে গয়না।

‘চমৎকার দৃশ্য!’ বিড়বিড় করল পোয়ারো। শান্ত চোখে আশপাশে তাকাল ও। ‘এত গয়নাগাটির বাহার! মনে হচ্ছে, গোয়েন্দা না হয়ে চোর-ডাকাত হলেই ভালো করতাম। চোরদের জন্য কী লোভনীয় সুযোগ! পিলারের কাছের ওই মোটাসোটা মহিলাকে দেখো, হেস্টিংস। মহিলাকে গয়নাগাটি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে একেবারে।’

ওর নির্দেশ অনুসারে সেদিকে তাকালাম। পরক্ষণেই সবিস্ময় চেঁচিয়ে উঠলাম। ‘আরে, উনি তো মিসেস ওপালসেন।’

‘চেনো নাকি?’

‘অল্পস্বল্প পরিচয় আছে আরকি! ওনার স্বামী ধনী স্টকব্রোকার। সম্প্রতি তেলের বাজারেও ভালো পসার জমিয়েছেন।’

ডিনার সেরে, লাউঞ্জে বসা ওপালসেন দম্পতির সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। পোয়ারোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম তাঁদের। কয়েক মিনিট আলাপ করে, কফি খেতে বসলাম একসঙ্গে।

ভদ্রমহিলার গলায় ঝোলানো কয়েকটা অলংকারের প্রশংসা করল পোয়ারো। তাতে মহিলা তো খুশিতে গদগদ।

‘গয়না পরা আমার শখ, মি. পোয়ারো। তাই প্রতিবারই ব্যবসায় লাভ হলে এড আমাকে নতুন একটা-দুটো গয়না কিনে দেয়। মূল্যবান পাথরের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ আছে?’

‘পেশার খাতিরে কয়েকবার এসব পাথর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, মাদাম,’ জানাল পোয়ারো।

রাজপরিবারের এক ঐতিহাসিক গয়নার গল্প শোনাল সে মিসেস ওপালসেনকে। দম বন্ধ করে গল্প শুনলেন মহিলা।

‘জানেন, আমার কাছেও ও রকম কিছু ঐতিহাসিক মুক্তা আছে,’ গল্প শেষ হলে বললেন মিসেস ওপালসেন। ‘ভারি সুন্দর। আমার বিশ্বাস, ওটার মতো সুন্দর নেকলেস খুব কমই আছে। ওটাতে লাগানো মুক্তাগুলো রং ও আকারে একেবারে নিখুঁত। দাঁড়ান, এখুনি দেখাচ্ছি!’

‘ওহ্, মাদাম,’ বাধা দিল পোয়ারো। ‘দয়া করে কষ্ট করবেন না।’

‘কিন্তু জিনিসটা আপনাকে দেখাতে পারলে আমার ভালো লাগবে।’

পৃথুলা শরীর নিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে লিফটের দিকে চলে গেলেন মহিলা। তার স্বামী এতক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। এবার তিনি জিজ্ঞাসু চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালেন।

‘আপনার স্ত্রী তার মুক্তার নেকলেসটা না দেখিয়ে ছাড়বেন না,’ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির জবাবে বলল পোয়ারো।

‘ওহ, ওই সব মুক্তা!’ তৃপ্তির হাসি হাসলেন মি. ওপালসেন, ‘দেখার মতো জিনিসই বটে।’

এমন সময় এক পেজবয় এসে ফিসফিসিয়ে কী যেন বলল ভদ্রলোকের কানে কানে।

‘কী? এখনই আসছি। ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে? ক্ষমা করবেন, আমি একটু আসছি।’

আমাদের রেখে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন তিনি। অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেল, কিন্তু ফিরলেন না ওপালসেন দম্পতি।

শেষমেশ নীরবতা ভেঙে আমি বলে উঠলাম, ‘তাঁরা কখন ফিরবেন ভাবছি।’

পোয়ারো চিন্তিত কণ্ঠে বলল, ‘তাঁরা আর ফিরবেন না।’

‘কেন?’

‘কারণ কিছু একটা হয়েছে।’

‘তুমি জানলে কী করে?’ সাগ্রহ জানতে চাইলাম।

হাসল পোয়ারো, ‘কয়েক মিনিট আগে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে, দৌড়ে ওপরতলায় গেছে ম্যানেজার। ভীষণ উত্তেজিত। ওয়েটাররাও অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। এর অর্থ হলো, গুরুতর কিছু একটা হয়েছে। যা ভাবছিলাম, এই যে এসে গেছে পুলিশ।’

দুজন লোক এইমাত্র ঢুকেছে হোটেলে। একজনের পরনে উর্দি, আরেকজন সাদাপোশাকে। পেজবয়ের সঙ্গে কথা বলেই ছুটল ওপরতলায়।

কয়েক মিনিট বাদে সেই পেজ এসে বলল, ‘মি. ওপালসেন অনুরোধ করেছেন, আপনি কি একবার ওপরতলায় আসবেন?’

লাফিয়ে সিধে হলো পোয়ারো। যেন এতক্ষণ এই ডাকের জন্যেই অপেক্ষা করছিল সে।

ওপালসেনদের কামরা দোতলায়। ভেতরে ঢুকেই অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখলাম। নিজের বেডরুমে আর্মচেয়ারে বসে হাপুস নয়নে কাঁদছেন মিসেস ওপালসেন। রাগে পায়চারি করছেন মি. ওপালসেন। পুলিশ কর্মকর্তা দুজন দাঁড়িয়ে আছে। একজনের হাতে নোটবুক। হোটেলের এক চেম্বারমেইড দাঁড়িয়ে ফায়ারপ্লেসের পাশে। ভয়ে পাণ্ডুর চেহারা। আরেক কোণে এক ফরাসি মেয়ে—মিসেস ওপালসেনের মেইড। দুঃখে সে–ও ঝরঝর করে কাঁদছে।

পোয়ারোকে দেখে তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন মিসেস ওপালসেন। ‘আমার বিশ্বাস, আপনি ছাড়া আর কেউ আমার মুক্তা উদ্ধার করতে পারবে না।’

তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে পোয়ারো বলল, ‘ভাববেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘এবার দয়া করে পুরো ঘটনাটা খুলে বলুন, মাদাম,’ এক পুলিশ ইন্সপেক্টর মুখ খুলল।

চোখের পানি মুছে মিসেস ওপালসেন বললেন, ‘ডিনারের পর মি. পোয়ারোকে দেখানোর জন্য মুক্তার মালাটা নিতে রুমে আসি আমি। চেম্বারমেইড আর আমাদের মেইড সিলেস্টিন বরাবরের মতোই ঘরে ছিল। সিলেস্টিনের অনুপস্থিতিতে এ ঘরে কাউকে ঢুকতে মানা করে দিয়েছি আমি। সকালে ওর উপস্থিতিতেই ঘর পরিষ্কার করে চেম্বারমেইড। ও না থাকলে চেম্বারমেইড ভেতরে ঢোকে না।’

‘যা বলছিলাম,’ আবার শুরু করলেন মিসেস ওপালসেন। ‘ওপরে এলাম। ড্রয়ার খুললাম...’ ইশারায় ডান দিকে, ড্রেসিং টেবিলের নিচের ড্রয়ারটা দেখালেন। ‘...গয়নার বাক্সটা বের করে তালা খুললাম। কিন্তু নেকলেসটা হাতে নিয়ে দেখি মুক্তাগুলো নেই ওতে।’

খসখস করে নোটবুকে লিখে চলেছে ইন্সপেক্টর। ‘ওগুলো শেষ কখন দেখেছেন?’

‘ডিনার করতে যাওয়ার সময়ও জায়গামতো ছিল ওগুলো।’

‘গয়নার বাক্সে তালা মেরেছে কে?’

‘আমিই। চাবিটা গলার চেইনে আটকে রাখি।’ চেইনটা দেখালেন মিসেস ওপালসেন।

চাবিটা খুঁটিয়ে দেখল ইন্সপেক্টর, তারপর কাঁধ ঝাঁকাল। ‘চোরের কাছে নিশ্চয়ই নকল চাবি ছিল। তালাটার গঠন বেশ সহজ। গয়নার বাক্সে তালা মারার পর কী করলেন?’

‘নিচের ড্রয়ারে রেখে দিলাম ওটা। সব সময় তা-ই করি।’

‘ড্রয়ারে তালা মারেননি?’

‘আমি আসার আগপর্যন্ত আমার মেইড থাকে রুমে। তাই আর তালা মারার দরকার পড়ে না।’

ইন্সপেক্টর বলল, ‘অর্থাৎ আপনি ডিনার করতে নিচে যাওয়ার সময় রত্নগুলো জায়গামতোই ছিল। আর তখন থেকে আপনি আসার আগপর্যন্ত মেইড ঘর ছেড়ে বেরোয়নি?’

শিগগিরই নিজের নাজুক অবস্থা টের পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল সিলেস্টিন। পোয়ারোর দিকে ফিরে হড়বড় করে ফ্রেঞ্চে আবোলতাবোল বকতে শুরু করল।

কী ভয়াবহ কথা! ওর মতো বিশ্বস্ত একজন কর্মচারীকে মাদামের গয়নাচোর হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে! পুলিশ তো, জানা কথাই, মহা মূর্খ! কিন্তু মসিয়ে নিজে ফরাসি হয়ে...

‘বেলজিয়ান,’ মাঝপথে শুধরে দিল পোয়ারো। কিন্তু মেয়েটা ওকে পাত্তা দিলে তো!

ওকে ফাঁসিয়ে দিলে মসিয়ে নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে আঙুল চুষবেন না। এদিকে মূর্খ পুলিশের দল চেম্বারমেইডটাকে ছেড়ে দেবে। লালমুখো মেইডটাকে ওর পছন্দ হয়নি। প্রথম থেকেই শুনেছিল, মেইড মেয়েটা সৎ নয়। তাই মাদামের কামরা পরিষ্কার করার সময় তার ওপর কড়া নজর রেখেছে সে! মূর্খ পুলিশের দল ওকে তল্লাশি করে দেখুক, মাদামের মুক্তা ওর কাছে না পেলে সে খুবই অবাক হবে!

সিলেস্টিন বিজাতীয় ভাষায় বললেও, অঙ্গভঙ্গি দেখেই ওর কথার মর্মার্থ বুঝে গেল চেম্বারমেইড। সঙ্গে সঙ্গে রাগে লাল হয়ে গেল মেয়েটার চেহারা।

‘ওই বিদেশি মেয়েটা যদি বলে যে আমিই মুক্তাগুলো চুরি করেছি, তাহলে ডাহা মিথ্যে বলছে সে!’ উষ্মার সুরে বলল সে। ‘ওগুলো আমি কখনো চোখেও দেখিনি।’

‘ওকে তল্লাশি করুন!’ চেঁচিয়ে বলল প্রতিপক্ষ। ‘ওর কাছেই পাবেন রত্নগুলো।’

‘তুমি একটা মিথ্যুক, বুঝলে?’ তার দিকে এগোতে এগোতে জবাব দিল চেম্বারমেইড সমান তেজে। ‘নিজে চুরি করে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছ। মাদাম আসার মাত্র তিন মিনিট আগে কামরায় আসি আমি। সেই পুরোটা সময় তুমি এখানে বসে ছিলে।’

সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে সিলেস্টিনের দিকে তাকাল ইন্সপেক্টর। ‘কথাটা কি সত্যি? তুমি ঘর ছেড়ে একবারের জন্যও বেরোওনি?’

‘ওকে আমি এক সেকেন্ডের জন্যেও একা ফেলে যাইনি, ’ নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে স্বীকার করল সিলেস্টিন। ‘তবে মাঝখানের দরজা দিয়ে নিজের ঘরে গিয়েছিলাম দুবার। একবার সুতা গোটানোর লাটাই আনতে, আরেকবার কাঁচি আনতে। তখনই নিশ্চয়ই কাজটা করেছে ও।’

‘তুমি এক মিনিটের বেশি সময় নাওনি কোনোবার,’ ঝাঁজালো কণ্ঠে প্রতিবাদ করল চেম্বারমেইড। ‘পুলিশ আমাকে তল্লাশি করলে খুশিই হব। কারণ, আমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ল। কে এসেছে দেখতে গেল ইন্সপেক্টর। নবাগতকে দেখে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার চেহারা। মহিলা তল্লাশিকারী এসেছে। চেম্বারমেইডকে পাশের কামরায় নিয়ে তল্লাশি করতে বলল সে নবাগতাকে।

এদিকে ঘরের চারপাশে নজর বোলাচ্ছে পোয়ারো। পাঠকের সুবিধার্থে ঘরটার একটা নকশা এঁকে দিলাম।

‘এই দরজাটা কোথায় গেছে?’ জানালার পাশের একটা দরজার দিকে ইঙ্গিত করল বন্ধুবর।

‘পাশের ঘরে বোধ হয়,’ ইন্সপেক্টর বলল। ‘দরজাটায় এপাশ থেকে হুড়কো তোলা।’

দরজাটার সামনে চলে গেল পোয়ারো। খোলার চেষ্টা করল, পারল না। হুড়কো তুলে আবার চেষ্টা করল। এবারও পারল না।

‘ওপাশ থেকেও হুড়কো তোলা,’ বলল ও।

তারপর সব কটা জানালা পরীক্ষা করে দেখল, ‘এখানেও কিছু নেই। বাইরে ব্যালকনিও নেই।’

‘থাকলেও আমাদের কী লাভ হতো বুঝতে পারছি না,’ অধৈর্য হয়ে উঠল ইন্সপেক্টর। ‘মেইড নাকি ঘর ছেড়ে বেরোয়ইনি।’

‘মাদামোয়াজেল যেহেতু জোর দিয়ে বলছে যে সে ঘর ছেড়ে বেরোয়নি...’

তল্লাশিকারী আর চেম্বারমেইডের পুনরাগমনে বাধা পেল পোয়ারো।

‘নেই,’ এককথায় ফলাফল জানাল তল্লাশিকারী।

‘ওর এবার লজ্জা হবে আশা করি,’ সিলেস্টিনকে দেখিয়ে বলল চেম্বারমেইড।

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে,’ দরজা খুলে ধরল ইন্সপেক্টর, ‘তুমি এবার যেতে পারো।’

চলে গেল চেম্বারমেইড।

তল্লাশিকারীর সঙ্গে পাশের কামরায় চলে গেল এবার সিলেস্টিন। তার কাছেও পাওয়া গেল না কিছু।

গম্ভীর হয়ে গেছে ইন্সপেক্টরের চেহারা। মেয়েটাকে বলল, ‘তোমাকে আমাদের সঙ্গে আসতে হবে, মিস।’ এরপর মিসেস ওপালসেনের দিকে ফিরল লোকটা, ‘দুঃখিত, মাদাম, কিন্তু সব প্রমাণ সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। রত্নগুলো যদি ওই চেম্বারমেইড মেয়েটার সঙ্গে না থাকে, এই ঘরেই কোথাও লুকানো রয়েছে।’

তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে উঠে পোয়ারোর হাত খামচে ধরল সিলেস্টিন। মেয়েটার কানে কানে কী যেন বলল ও ফিসফিসিয়ে। সন্দিগ্ধ চোখে পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে রইল মেয়েটা।

‘নিশ্চিন্ত থাকুন, বাধা না দিলেই বরং তোমার মঙ্গল।’ কথাগুলো বলে ইন্সপেক্টরের দিকে ঘুরল পোয়ারো, ‘ছোট্ট একটা পরীক্ষা চালাব। আপনার আপত্তি নেই তো, মঁসিয়ে?’

‘সেটা নির্ভর করে আপনি কী পরীক্ষা চালাবেন, তার ওপর,’ সাবধানী গলায় উত্তর দিল ইন্সপেক্টর।

আবার সিলেস্টিনের দিকে ফিরল পোয়ারো, ‘একবার তুমি নিজের ঘরে গিয়েছিলে, সুতো গোটানোর লাটাই আনতে। ওটা কোথায় ছিল?’

‘চেস্ট অব ড্রয়ারের ওপর, মঁসিয়ে।’

‘আর কাঁচি?’

‘ওখানেই।’

‘একটু কষ্ট করে জিনিস দুটো আবার নিয়ে আসবে? দুবারে আনবে কিন্তু। এখানে বসে কাজ করছিলে তুমি, না?’

বসে পড়ল সিলেস্টিন। তারপর পোয়ারো ইশারা করতেই উঠে পাশের রুমে চলে গেল। চেস্ট অব ড্রয়ার থেকে একটা জিনিস তুলে ফিরে এল লিভিং রুমে। তারপর আরেকবারে নিয়ে এল কাঁচি।

ঘড়ি ধরে সময় দেখল পোয়ারো। দ্বিতীয়বার পকেটবুকে খসখস করে কী যেন টুকে নিল। তারপর জানাল, কাজ শেষ।

সাদাপোশাকের পুলিশ আর মহিলা তল্লাশিকারীর সঙ্গে চলে গেল সিলেস্টিন। এদিকে ইন্সপেক্টর তল্লাশি শুরু করল ঘরজুড়ে। বলল, ‘হ্যাঁ, স্যার। মুক্তাগুলো ঘর থেকে বের করার সময় পায়নি চোর। ওগুলো এখানেই আছে। মেয়ে দুটোর যেকোনো একজন নিশ্চয়ই করেছে কাজটা। তবে চেম্বারমেইডের চুরির সুযোগ ছিল না বললেই চলে।’

‘আসলে ওর পক্ষে সম্ভবই ছিল না,’ শান্ত কণ্ঠে বলল পোয়ারো। ‘দাঁড়ান, দেখাচ্ছি। হেস্টিংস, আমার ঘড়িটা ধরো তো। খানিক আগে সিলেস্টিন ওই ঘর থেকে এ ঘরে আসার সময় পরীক্ষা করেছি। প্রথমবার বারো সেকেন্ড লেগেছে তার। দ্বিতীয়বার লেগেছে পনেরো সেকেন্ড।’ মিসেস ওপালসেনের দিকে ফিরল বন্ধু, ‘মাদাম, গয়নার বাক্সের চাবিটা দিন। ধন্যবাদ। হেস্টিংস এবার বলবে, ‘‘যাও!”’

ওর কথামতো বললাম, ‘যাও!’

অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলল পোয়ারো। এবার গয়নার বাক্স হাতে নিল। চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিয়ে খুলে ফেলল বাক্সটা। একটা গয়না নিয়ে আবার তালা মেরে দিল। তারপর ড্রয়ারের কাছে ফিরে গেল; ধাক্কা মেরে লাগিয়ে দিল ওটা।

‘কতক্ষণ লাগল, বন্ধু?’ হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল আমাকে।

‘ছেচল্লিশ সেকেন্ড,’ জবাব দিলাম।

‘দেখলেন?’ ইন্সপেক্টরের দিকে তাকাল পোয়ারো, ‘নেকলেস বের করার সময়ই পায়নি চেম্বারমেইড, লুকানো তো অনেক পরের ব্যাপার।’

‘তাহলে তো মেইড মেয়েটাই চোর,’ সন্তুষ্ট চিত্তে রায় ঘোষণা করল ইন্সপেক্টর। তারপর তল্লাশিতে লেগে গেল ফের। সুড়ুত করে লিভিংরুমের লাগোয়া সিলেস্টিনের বেডরুমে ঢুকে পড়ল লোকটা।

পোয়ারোর চোখেমুখে চিন্তার ছায়া, ভুরু কুঁচকে ফেলেছে। আচমকা প্রশ্নের তির ছুড়ে দিল মি. ওপালসেনের দিকে, ‘নেকলেসটার নিশ্চয়ই ইনস্যুরেন্স করানো ছিল?’

‘হ্যাঁ,’ জবাব দিলেন তিনি।

‘তাহলে মসিয়ে নিশ্চয়ই ইনস্যুরেন্সের কথা ভেবে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবেন,’ বলল পোয়ারো।

‘তা ঠিক,’ সায় দিলেন মি. ওপালসেন, ‘তবুও...’

ইন্সপেক্টরের চিৎকারে বাধা পেলেন তিনি। লোকটার হাতে একটা জিনিস।

চেঁচিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন মিসেস ওপালসেন, ‘ওহ, ওহ, আমার নেকলেস।’ জিনিসটা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।

‘কোথায় পেলেন?’ জিজ্ঞেস করলেন ওপালসেন।

‘মেইডের বিছানায়। জাজিমের স্প্রিংয়ের সঙ্গে আটকানো ছিল। চেম্বারমেইড আসার আগেই নিশ্চয়ই চুরি করে ওখানে লুকিয়ে রেখেছিল নেকলেসটা।’

‘একটু দেখতে পারি, মাদাম?’ কোমল স্বরে বলল পোয়ারো। নেকলেসটা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল কিছুক্ষণ। তারপর ফিরিয়ে দিল।

‘মাদাম, নেকলেসটা আপাতত আমাদের কাছে রাখতে হবে,’ ইন্সপেক্টর বলল, ‘অভিযোগ দাখিলের জন্য লাগবে। তবে শিগগিরই ফিরিয়ে দেব।’

ভুরু কুঁচকে ফেললেন মি. ওপালসেন, ‘তার দরকার আছে কি?’

‘জি, স্যার। স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।’

‘ওহ, নিতে দাও তো, এড!’ প্রায় চেঁচিয়ে বললেন ওনার স্ত্রী, ‘আমারও নিরাপদ লাগবে। ওটার চিন্তায় নইলে রাতে চোখের পাতা এক করতে পারব না। কী খারাপ মেয়ে! ও যে এমন একটা কাজ করবে কল্পনাও করতে পারিনি।’

পোয়ারো আমাকে বলল, ‘চলো, বেরোই, বন্ধু।’

বাইরে বেরিয়ে ইতস্তত করতে লাগল পোয়ারো। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘দরজার ওপাশের ঘরটায় একবার উঁকি মারতে চাই।’

দরজায় তালা মারা ছিল না। তাই বেগ পেতে হলো না ভেতরে ঢুকতে। ডাবল সাইজের ঘর, কোনো অতিথি নেই। পুরু ধুলার আস্তর ঘরময়। জানালার কাছে রাখা টেবিলের ওপর একটা আয়তাকার দাগের ওপর আঙুল বোলাতে লাগল পোয়ারো। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে চিন্তিত ভঙ্গিতে।

‘দেখতে চেয়েছিলাম দরজাটার এ পাশেও সত্যি সত্যি হুড়কো তোলা আছে কি না,’ বিড়বিড় করে বলল ও।

‘হ্যাঁ, হুড়কো তো তোলাই আছে দেখছি,’ দরজার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম আমি, ‘তাতে কী এসে যায়? কেস তো খতম।’

মাথা নাড়ল পোয়ারো, ‘কেস খতম হয়নি, বন্ধু। মুক্তাগুলো কে চুরি করেছিল, তা জানার আগে শেষ হবেও না।’

‘সিলেস্টিন চুরি করেছিল!’

‘এ কথা বলছ কেন?’

‘কারণ, ওগুলো পাওয়া গেছে...মেয়েটার বিছানার নিচে।’

‘ধুর,’ অধৈর্য গলায় বলল পোয়ারো। ‘ওগুলো মুক্তা নয়। ইমিটেশন…নকল।’ স্মিত হাসল ও, ‘গয়নাগাটির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই ইন্সপেক্টরের।’

‘চলো, এখুনি ওপালসেনদের জানাতে হবে।’ ওর হাত ধরে টানলাম।

‘না, এখন না।’

‘কিন্তু বেচারি মিসেস ওপালসেন...’

‘তুমি কী করে জানলে, আজ যে মুক্তা নিয়ে মিসেস ওপালসেন হইচই বাধিয়ে দিয়েছেন, সেগুলো নকল মুক্তা নয়? কী করে নিশ্চিত হলে যে আসল চুরিটা আজই হয়েছে? আরও কয়েক দিন আগেও তো হয়ে থাকতে পারে, তাই না?’

কামরা থেকে বেরিয়ে গেল পোয়ারো। বাইরে বেরিয়ে মুহূর্তখানেক কী যেন চিন্তা করল। তারপর চলে গেল করিডরের শেষ প্রান্তে। ছোট্ট একটা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়ল। এই তলায় কর্মরত চেম্বারমেইড আর খানসামারা জড়ো হয়েছে ওখানে। আমাদের সেই চেম্বারমেইড আসরের মধ্যমণি। চুরির ঘটনাটা শোনাচ্ছে সবাইকে। আচমকা পোয়ারোকে দেখে মাঝপথে থেমে গেল মেয়েটা।

‘দুঃখিত, কথার মাঝখানে বিরক্ত করছি,’ বলল পোয়ারো, ‘মি. ওপালসেনের কামরার দরজার তালাটা একটু খুলে দেবে?’

আমাদের সঙ্গে বেরিয়ে এল মেয়েটা। মি. ওপালসেনের কামরা করিডরের অপর প্রান্তে। ঘরটার দরজা তার স্ত্রীর ঘরের মুখোমুখি। দরজাটার তালা খুলে দিল চেম্বারমেইড। ভেতরে ঢুকলাম আমরা।

মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পোয়ারো থামাল ওকে।

‘এক মিনিট। মি. ওপালসেনের ঘরে কখনো এ রকম কোনো কার্ড দেখেছ?’

সাদা একটা কার্ড বাড়িয়ে ধরল পোয়ারো। দেখতে অদ্ভুত। কিছু লেখা নেই ওতে। কার্ডটা নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখল মেইড।

‘না, স্যার, আমি দেখিনি। তবে পুরুষদের কামরার ব্যাপারে খানসামা ভালো বলতে পারবে।’

‘ঠিক আছে। ধন্যবাদ।’

কার্ডটা ফিরিয়ে নিল পোয়ারো। চলে গেল মেয়েটা। কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে, মাথা দোলাল বন্ধুবর।

‘ঘণ্টিটা বাজাও, হেস্টিংস।’

ঘণ্টি বাজালাম ওর কথামতো। পোয়ারো ততক্ষণে ময়লা কাগজ ফেলার ঝুড়িটা উপুড় করে ফেলেছে মেঝেতে। দ্রুত হাতে ঝুড়ি থেকে বেরোনো জিনিসগুলো উল্টেপাল্টে দেখছে।

কয়েক মুহূর্ত বাদে হাজির হলো খানসামা। কয়েকটা প্রশ্ন করল ওকে পোয়ারো। তারপর কার্ডটা তাকে দিল পরীক্ষা করার জন্য। তবে সে-ও কিছু জানে না বলল। মি. ওপালসেনের জিনিসপত্রের মধ্যে কখনো এ রকম কোনো কার্ড দেখেনি সে। লোকটাকে ধন্যবাদ জানাল পোয়ারো। তারপর অনিচ্ছুক, অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওলটানো ময়লার ঝুড়ি আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা কাগজের টুকরাগুলোর দিকে। কাগজের টুকরাগুলো আবার জড়ো করতে লাগল খানসামা।

‘নেকলেসটার ইনস্যুরেন্স করা ছিল...’ চিন্তিত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলল পোয়ারো।

‘পোয়ারো,’ চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। ‘আমার মনে হয়...’

‘তোমার কিছুই মনে হয় না, বন্ধু,’ চট করে আমাকে থামিয়ে দিল ও, ‘অবিশ্বাস্য ব্যাপার...হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য! কিন্তু তা-ই হয়েছে। চলো, নিজেদের রুমে যাই।’

নীরবে রুমে ফিরলাম আমরা। আমাকে অবাক করে দিয়ে বাইরে বেরোনোর কাপড় পরতে লাগল পোয়ারো।

‘লন্ডনে যাব,’ ব্যাখ্যা করল ও, ‘জরুরি কাজে।’

‘কী?’

‘হ্যাঁ। কয়েকটা ব্যাপার নিশ্চিত হতে হবে। তোমার একটা সাহায্য লাগবে।’

‘নিশ্চয়ই,’ সাগ্রহ বললাম, ‘কী করতে হবে?’

‘যে কোটখানা মাত্র খুলে রাখলাম, ওটার হাতা মুছে দেবে? সাদা গুঁড়া লেগে গেছে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে নিশ্চয়ই আমাকে আঙুল বোলাতে দেখেছিলে?’

‘না, দেখিনি,’ জবাব দিলাম, ‘তা গুঁড়াটা কিসের?’

‘ফ্রেঞ্চ চক,’ চোখ টিপল পোয়ারো।

‘ফ্রেঞ্চ চক?’

‘ছুতারেরা ব্যবহার করে। ড্রয়ার মসৃণভাবে খোলার জন্যে।’

আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল ও। দরজা বন্ধ করে ওর কোটখানা নিয়ে, কাপড় ঝাড়ার ব্রাশটা তুলে নিলাম।

পরদিন সকালেও দেখা পেলাম না পোয়ারোর। অগত্যা একা একাই ঘুরতে বেরোলাম। গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা পেরিয়ে গেল।

হোটেলে ঢুকেই পোয়ারোর সঙ্গে দেখা। ওপালসেন দম্পতির সঙ্গে বসে আছে, চেহারায় আত্মতুষ্টির হাসি।

‘বন্ধু...বন্ধু, হেস্টিংস!’ আমাকে দেখেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল, ‘দারুণ কাজ হয়েছে!’

‘দারুণ, বুঝলেন, দারুণ!’ হাসিমুখে বললেন মিসেস ওপালসেন।

অসহায় চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালাম আমি।

‘বসো, বন্ধু, সব ব্যাখ্যা করছি,’ বলল ও, ‘ওদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

‘কাদের?’

‘চেম্বারমেইড আর খানসামাটা। ওদের তুমি সন্দেহ করোনি? ফ্রেঞ্চ চকের ইঙ্গিত দেওয়ার পরও সন্দেহ করোনি ওদের?’

‘তুমি তো বলেছিলে, ছুতারেরা ওই চকের গুঁড়া ব্যবহার করে।’

‘নিশ্চয়ই করে...ড্রয়ার যাতে সহজে, নিঃশব্দে খুলে যায়। কেউ একজন নিঃশব্দে ড্রয়ারটা খুলতে চেয়েছিল। কে হতে পারে সে? নিশ্চয়ই চেম্বারমেইড। দুর্দান্ত পরিকল্পনা করছিল। সে জন্যই প্রথমটায় কেউ কিচ্ছু সন্দেহ করতে পারেনি।

‘শোনো তাহলে পুরো ঘটনা। খানসামাটা ছিল দরজার ওপাশের ঘরে, অপেক্ষা করছিল। ঘর ছেড়ে চলে গেল মিসেস ওপালসেনের মেইড সিলেস্টিন। ঝড়ের গতিতে ড্রয়ার খুলল চেম্বারমেইড। গয়নার বাক্সটা হাতে নিল। তারপর দরজার হুড়কো খুলে খানসামার হাতে চালান করে দিল। লোকটা নকল চাবি দিয়ে খুলল বাক্সটা। তারপর নেকলেসটা হাতে নিয়ে বসে রইল সুযোগের অপেক্ষায়। সিলেস্টিন আবার গেল নিজের ঘরে। ব্যস, তুফানের বেগে বাক্সটা ফেরত এল চেম্বারমেইডের হাতে। ড্রয়ারে রেখে দেওয়া হলো ওটা।

‘মিসেস ওপালসেন ঘরে গেলেন। চুরির ব্যাপারটা টের পাওয়া গেল। চেম্বারমেইড স্বেচ্ছায় চাইল তাকে তল্লাশি করা হোক। তল্লাশি করা হলে অপমানিত হওয়ার ভান ধরে চলে গেল। ফরাসি মেয়েটার বিছানার নিচে যে ইমিটেশনের নেকলেসটা পাওয়া গেছে, সেটা সেদিন সকালেই ওখানে রেখে দিয়েছিল চেম্বারমেইড। দুর্দান্ত একটা চাল, না?’ কথা শেষ করে হাসল পোয়ারো।

‘কিন্তু তুমি লন্ডনে গিয়েছিলে কেন?’ জানতে চাইলাম।

‘কার্ডটার কথা মনে আছে?’

‘নিশ্চয়ই। কার্ডটা আমাকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে। ওটার আগা-মাথা বুঝতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম...’

মি. ওপালসেনের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করতে লাগলাম আমি।

আমার করুণ দশা দেখে হেসে উঠল পোয়ারো হো-হো করে।

‘মজার ব্যাপার! খানসামার জন্য করতে হয়েছিল কাজটা। কার্ডটা বিশেষ ধরনের...আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। সোজা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে, আমাদের পুরোনো বন্ধু ইন্সপেক্টর জ্যাপের কাছে চলে গিয়েছিলাম ওটা নিয়ে। সবকিছু খুলে বললাম ওকে। কার্ডটা পরীক্ষা করার পর আমার সন্দেহই সত্য প্রমাণিত হলো। দুজন বিখ্যাত গয়নাচোরের হাতের ছাপ পাওয়া গেল কার্ডে। বেশ অনেক দিন ধরেই ‘‘ওয়ান্টেড’’ লিস্টে রয়েছে এরা। আমার সঙ্গে এল জ্যাপ। গ্রেপ্তার করা হলো মানিকজোড়কে। নেকলেসটা পাওয়া গেল খানসামার কাছে। ভীষণ ধূর্ত যুগল, তবে এবার ওদের পদ্ধতিটা ব্যর্থ হয়েছে।’

‘কিন্তু ওদের পদ্ধতিটা ব্যর্থ হলো কোথায়?’ পোয়ারোর কথার মাঝখানে বলে উঠলাম আমি।

‘বন্ধু, চেম্বারমেইড বা খানসামার চাকরি নেওয়াটা দারুণ একটা চাল ছিল। কিন্তু নিজের কাজে ফাঁকি দেওয়া উচিত নয় মোটেও। একটা খালি ঘর পরিষ্কার না করে রেখে দিয়েছিল ওরা। ধুলার পুরু আস্তর ছিল ঘরের সব আসবাবে। আর সে জন্যই খানসামাটা যখন দরজার কাছের ছোট্ট টেবিলের ওপর গয়নার বাক্স রাখল, তাতে একটা বর্গাকার দাগ পড়ে গেল...’

‘মনে পড়েছে,’ চেঁচিয়ে উঠলাম আমি।

‘দাগটা দেখার আগপর্যন্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম আমি। কিন্তু ওটা দেখার পরই দূর হয়ে গেল সব সংশয়।’

কয়েক মুহূর্তের নীরবতা।

‘আর আমি ফিরে পেলাম আমার মুক্তা,’ আহ্লাদি গলায় বললেন মিসেস ওপালসেন।

‘বেশ,’ বললাম, ‘আমি তাহলে ডিনার সেরে আসি।’

আমার সঙ্গ নিল পোয়ারো।

‘দারুণ দেখালে, বন্ধু,’ বললাম ওর উদ্দেশে, ‘সবাই নিশ্চয়ই তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠবে।’

‘মোটেও না,’ শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল পোয়ারো, ‘কৃতিত্ব জ্যাপ আর স্থানীয় পুলিশ ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু...’ নিজের পকেটে টোকা মারল ও, ‘...আমার পকেটে আছে মোটা অঙ্কের একটা চেক। মি. ওপালসেনের উপহার। এবার কী বলবে, বন্ধু? এই হপ্তার ছুটিটা প্ল্যান মোতাবেক কাটাতে পারলাম না। আগামী হপ্তায় আবার আসবে নাকি...আমার খরচে?’