অদেখা আকাশ

অলংকরণ: মাহফুজ রহমান

একটা ছোট্ট তেলাপোকার বাচ্চা তার মাকে গিয়ে বলল, ‘মা, আমার না খুব কষ্ট হয়।’

মা বলল, ‘কেন, আমার এই ছোট্ট মামণিটার কষ্ট হয় কেন?’

তেলাপোকার ছানা কেঁদে কেঁদে বলল, ‘ওই ঘরের কোনা দিয়ে হাঁটছিলাম। দেখলাম ছোট্ট একটা মেয়ে কী সুন্দর করে বলছে, “থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে/ কেমন করে ঘুরছে মানুষ...।”’

‘তুমি মানুষের কথা বুঝলে কী করে? তাদের তো সব কটরমটর ভাষা। কথা বলার সময় একটা গর্তের মতো কী জানি খোলে আর বন্ধ করে। আবার তার ভেতর কী জানি একটা কিলবিল কিলবিল করে! কী বিশ্রী, ছ্যাঁ।’

‘মা, তুমি শুনলে অবাক হবে। আমি হাঁটছিলাম, ওই সময় মেয়েটার বাবা, উনি নাকি বিজ্ঞানী, আমাকে ডেকে বলল, “অ্যাই পিচ্চি, এদিকে আসো তো।” আমি খুব ভয় পেলাম। তখন বলল, “ভয় পেয়ো না পিচ্চি। আমরা তোমার কোনো ক্ষতি করব না। তুমি আকাশ দেখবে। আকাশ অনেক বড়, কী সুন্দর নীল। সেখানে তারা আছে, চাঁদ আছে, সূর্য আছে, আছে আরও অনেক কিছু। ফুল চেনো? ফুল দেখবে, পাখি, নদী, গাছ, পাহাড়, ঝরনা। দেখবে নাকি? দেখতে চাইলে বাইরে যেতে হবে।” তারপর তো ছোট মেয়েটা কবিতাটা শোনাল। তারপর বলল, “যাও, মায়ের কাছে যাও। বাইরে যাওয়ার পারমিশন নিয়ে এসো।” মা, আমি ওদের সঙ্গে আকাশ দেখতে যাই।’

তেলাপোকার মা বলল, ‘ধুর। কোথাকার কোন আকাশ। তার চেয়ে আমাদের ঘরের ছাদটাই সুন্দর। ছাদের মধ্যে চরচর করে কত সুন্দর ফ্যানটা ঘোরে। আকাশে কি ফ্যান ঘোরে? ঘোরে না।’

‘আচ্ছা মা, আকাশটা ঠিক কত বড় হবে?’

‘কতটুকু আর হবে। আমার তো মনে হয় এই ঘরের ছাদের সমানও হবে না। দেখ না ঘরের ছাদটা কত বিশাল।’

‘না না, বিজ্ঞানী তো বলল আকাশটা অনেক বড়। ছোট হলে ঘরের ভেতর ঢোকানো যেত। আকাশকে তো ঘরের ভেতর ঢোকানো যায় না। আকাশ দেখতে বাইরে যেতে হয়, মা।’

‘তাই? তোমার এত বুদ্ধি হলো কী করে, মামণি?’

‘বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলে। মা, আমি বিজ্ঞানীর সঙ্গে আকাশ দেখতে যাই। প্লিজ মা, লক্ষ্মী মা, পারমিশন দাও।’

তেলাপোকার মা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘যাও। তবে মনে রেখো, আমরা তেলাপোকা। আমাদের আত্মসম্মান আছে। আমরা লোভী নই। তাই হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করে আসছি, ভবিষ্যতেও করব। মানুষেরা লোভী। তাই ওদের সঙ্গে সাবধানে মিশবে।’ তেলাপোকার ছানা আদর করে মায়ের গালে চুমু দিয়ে বিদায় জানাল।

বিজ্ঞানীর ঘরে এসে ছানাটা দেখল, বিজ্ঞানী মেঝেতে পড়ে আছে। তার মাথা থেকে লাল জলের মতো কিছু একটা বের হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে মেঝেতে। ছোট্ট মেয়েটার মুখ চেপে ধরে আছে একটা ষন্ডামার্কা লোক। মেয়েটার চোখ দিয়ে টলটল করে জল পড়ছে। ঘরের মধ্যে দুজন লোক কী যেন খুঁজছে আর বলছে, ‘ব্যাটা যন্ত্রটা কই রেখেছে। ভালো করে খোঁজ। যন্ত্রটা পেলে আমরাও পোকামাকড়, লেজকাটা টিকটিকির সঙ্গে কথা বলতে পারব।’

তেলাপোকার ছানা খুব ভয় পেল। তারপরও বিজ্ঞানী আকাশ দেখতে যাবে কি না, জিজ্ঞেস করতে গেল সে। বিজ্ঞানীর কাছে যেতেই শুনতে পেল, বিজ্ঞানী বলছে, ‘চলে যাও, পিচ্চি। চলে যাও। আকাশ দেখা হবে না।’

এরপরও বিজ্ঞানীর মুখ নড়ছিল কিন্তু বিজ্ঞানীর আর কোনো কথা বুঝতে পারেনি ছানাটা।

পিচ্চি তেলাপোকা খুব মন খারাপ করল। তার মাকে গিয়ে বলল, ‘মা, ওরা আমাকে আকাশ দেখাল না। বিজ্ঞানীর কী জানি হয়েছে আর ছোট্ট মেয়েটা খুব কাঁদছে।’