সবে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম তখন, ভালো রেজাল্ট করেছিলাম বলে বাবার কাছে অনেক আবদারও ছিল। কিন্তু বাবা কিছুই দেননি বলে অনেক রাগ করেছিলাম। আব্বু প্রবাসী, ফোন দিলে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, আমি বলতাম না। একমাত্র ছেলের সঙ্গে কথা না বলতে পেরে কী কষ্টই না আব্বু পেতেন...
আমার জন্মেরও ১০ বছর আগে থেকে আব্বু বিদেশে থাকতেন। আজ ২৭ বছর আব্বু বিদেশে। যখন ছোট ছিলাম, আব্বুর এই কষ্টটার কিছুই বুঝতাম না। রাগ আর ভালোবাসার সংমিশ্রণে এই মানুষটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা কেন নিজের দেশ থেকে দূরে থাকলেন? সম্ভবত, তাঁর পরিবারের জন্যই। পঞ্চম শ্রেণিতে, অষ্টম শ্রেণিতে এবং দশম শ্রেণিতে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার ফল যখন আমার ভালো হয় এবং আমি আব্বুকে বলি আব্বু তখন তাঁর চোখের পানি রাখতে পারেন না। আমার চেয়েও খুশি হন আমার বাবা।
কিন্তু আব্বু যখন আগে দেশে আসতেন তখন শুধু ভাবতাম, আব্বু এমন কেন! খালি বকা দেন কেন! রোদে খেলতে দেন না কেন! তাই ভাবতাম আব্বু কবে বিদেশ যাবেন। যেদিন আব্বুর ফ্লাইট থাকত তখন আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতেন আর বলতেন ‘বাবা, নিজের খেয়াল রাখিস।’ তখনই শুধু বুঝতাম, না, আব্বু আমাকে ভালোবাসেন।
২০০৭ সালের কথা, আমার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। ফল খুব ভালো। বন্ধুরা পিকনিকে যাবে, সঙ্গে আমিও যাব ঠিক করলাম কিন্তু আব্বু দেশে ছিলেন এবং আমাকে যেতে নিষেধ করে দিলেন। আমি খুবই অভিমান করলাম। সেদিন রাতেই আব্বু আমাকে মানানোর জন্য ২০০ টাকা দিয়ে বললেন, তোমার কিছু খেতে ইচ্ছা করলে খেয়ে নিয়ো। আমি ভাবলাম, যে মানুষটা আমার জন্য এত করেন, তিনি তো কখনো আমাকে কষ্ট দিতে চাইবেন না। এই ভেবে মনটা ভালো হয়ে গেল। আমি জানি, কৈশোরে সবার সঙ্গেই এমন হয় কিন্তু আব্বুকে কখনো একটি কথা বলতে পারি না। তা হলো ‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আব্বু।’