আমি মাঝি হব

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার একটি নদীর কথা খুব মনে পড়ে। শহীদনগর চর পেরিয়ে কিছুদূর গেলে নদীর দেখা পাওয়া যায়। খুব শান্ত। নিরিবিলি নদী। দুই পাশে লকলক করে দুলছে লতানো গাছেরা। সবুজ সবুজ অবুঝ পাতা। পাতায় পাতায় পাখিদের কিচিমিচি।

আমি একটা হিজলগাছের নিচে বসে নদীর কাঁপন অনুভব করি। নদী বহমান। নদী কোথা থেকে আসে? নদী কোথায় যায়? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই।

সেই নদীতে ছোটবেলায় দেখেছি—সারি সারি নৌকা চলেছে। নৌকার মাঝিরা চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছে। ওরা নৌকায় থাকে। নৌকায় ঘুমায়। নৌকায় রান্না করে। গন্তব্যে ওরা কবে পৌঁছাবে, কেউ জানে না। নৌকাবোঝাই মালপত্র। এই মাল তারা পৌঁছে দেবে এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে।

নৌকার মাঝিদের বিচিত্র জীবন দেখে আমি ভাবতাম, একদিন আমিও নৌকার মাঝি হব। নৌকা চালিয়ে আমি এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাব।

বাবা বলতেন, এবার জন্মদিনে তোকে কী কিনে দেব রে মাসুম? আমি বলতাম, ছোট্ট একটা নৌকা। বাবা হাসতেন। নৌকা চালাবি কোথায়?

আমি বললাম, হেঁটে হেঁটে চলে যাব কামরাঙ্গীরচরে। সরু বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে চলে যাব দূরের ঘাটে।

বাবা হাসতেন। মজা পেতেন, আমি নৌকার মাঝি হব বলে।

কেউ পাখি হতে চায়। আকাশে উড়বে বলে। কেউ ফুল হতে চায়। গন্ধ ছড়াবে। কেউ প্রজাপতি হতে চায়। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াবে।

কিন্তু আমি শুধু মাঝি হতে চাই। নৌকা চালাব। নদীর বুক দিয়ে আমার নৌকা এগিয়ে যাবে দেশ থেকে দেশান্তরে।