সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ও-মা! হঠাৎ কে যেন লাথি মেরে নিচে ফেলে দিল আমাকে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকলাম আমি। একটা ছোট মেয়ে আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ওহ্ খালামণি। কী কিউট বিড়ালটা!’ আমাকে ধরতে আসতেই দৌড়ে পালিয়ে এলাম আমি। লাথি খেয়ে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে। আমরা নাহয় বিড়াল জাতি, তাই বলে কি আমাদের কোনো আত্মসম্মান নেই? মন খারাপ করে সারা দুপুর ঘুরলাম বাড়ির এদিক-ওদিক। সামিয়াদের বাড়িতে আজ অনেক মেহমান এসেছে।
তাই বলে আমাকে ভুলে যেতে হবে? মিউ মিউ করে কতবার ডাকলাম, কানেই তুলল না কেউ! বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম আমি। নাহ্, এ বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকব না। কিন্তু বেশ ক্ষুধাও তো পেয়েছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই পেলাম ভাজা মাছের গন্ধ। আহ্! কী মজা! যে বাড়িটা থেকে গন্ধটা আসছে, সেটা খুঁজে বের করতেও দেরি হলো না তেমন। বাড়িতে ঢুকে চুপিচুপি রান্নাঘরে গিয়ে যেই-না মাছে মুখ দিয়েছি, তখনই একটা কাঠ এসে পড়ল আমার পিঠের ওপর। মনে হলো, পিঠটা বুঝি ভেঙেই গেছে! তবুও অতিকষ্টে দৌড়ে পালিয়ে এলাম। অনেকটা পথ চলে এসেছি। সামিয়াদের বাড়িটাই খুঁজে পাচ্ছি না আর। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন জোরে লাথি বসিয়ে দিল। দূরে গিয়ে উল্টে পড়লাম। দেখলাম একটা ছেলে মোবাইলে কথা বলছে আর খুব খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছে। ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়ে পালিয়ে এলাম ওখান থেকে। কে জানে অন্যের ওপর রাগ করে আজ আমাকে মেরেই ফেলে কি না!
অবশ্য এমনিতেই ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি। রাত নেমে এসেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে একটা আলো এসে আমার সামনে থেমে গেল। একটু পর বুঝলাম মোটরসাইকেলের আলো ওটা। খুব দ্রুত দৌড়ে চলে এলাম ঝোপের ভেতর। অনাহারে কাটল রাত।
পরদিন সকালে রাস্তায় মুরগির হাড্ডি পড়ে থাকতে দেখে খুব খুশি হলাম আমি। মজা করে খাচ্ছি। শেষ হাড্ডিটা খেতে যাব, এমন সময় একটা কুকুর এসে বলল, ‘এখানে যে খাবার পড়ে প্রতিদিন তা আমি খাই। তুই কোথা থেকে এলি? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।’ প্রাণভয়ে পালালাম আমি। সামনে একটা পাঁচিল দেখে কোনোমতে উঠে পড়লাম সেটায়। দৌড়ে চলে এলাম অনেক দূর। বিকেল হয়ে গেল ঘুরতে ঘুরতে। আরও একটা রাত এভাবে কাটলে মনে হয় মরেই যাব। হঠাৎ পরিচিত বিড়াল ব্ল্যাকির সঙ্গে দেখা হলো। সামিয়াদের পাড়াতেই থাকে। দুঃখের কথা শুনে ও বলল, ‘ওই বাড়িতে এত ভালো থাকিস, একদিন দুপুরে খাবার পাসনি বলে চলে এলি? তোদের এই পোষা বিড়ালদের জাত খুব খারাপ। আদর করে বড় করে তো তাই। আমাদের দেখ। একবেলা খাই তো অন্য বেলা নাই।’ এত লেকচার শোনার ইচ্ছা আমার নেই। তা ছাড়া এই এক দিনে ভালোই শিক্ষা হয়েছে। বললাম, ‘ব্লাকি, তুই আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছে দে।’ ও বলল, ‘তাহলে তুই আমাকে কী দিবি?’ বললাম, ‘একবেলা খাবার শেয়ার করব।’ আশ্চর্য! এতেই রাজি হয়ে গেল ও! তারপর হাঁটতে হাঁটতে দুজন বাড়ি পৌঁছালাম আমরা। আমাকে দেখে চিৎকার করে উঠল সামিয়া। কোলে তুলে খুব আদর করল। বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিল যে তার আদরের ক্যাডবেরি ফিরে এসেছে। খুশি হলো ব্ল্যাকিকে দেখেও। দুজনকে খেতে দিল একসঙ্গে। থাকার জন্য ব্ল্যাকির জায়গা করে দিল। এখন আমি, ব্ল্যাকি আর সামিয়ারা সবাই মিলে খুব ভালো আছি।