চেঙ্গিস আর হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা

টেনিদা বললে, ‘আজকাল আমি খুব হিস্টরি পড়ছি।’

আমরা বললুম, ‘তাই নাকি।’

‘যা একখানা বই হাতে পেয়েছি না, শুনলে তোদের চোখ কপালে উঠে যাবে।’

চুয়িংগামটাকে গালের আর একপাশে ঠেলে দিয়ে ক্যাবলা বললে, ‘বইটার নাম কী, শুনি?’

টেনিদা ‘হ য ব র ল’র কাক্কেশ্বর কুচকুচের মতো গলায় বললে, ‘স্তোরিয়া দে মোগোরা পুঁচিচ্চেরি বোনাজা বাই লিনি কামুচ্চি।’

শুনে ক্যাবলার চশমাটা যেন এক লাফে নাকের নিচে ঝুলে পড়ল। হাবুল যেন ‘আঁক, করে একটা শব্দ করল। আমি একটা বিষম খেলুম।

ক্যাবলাই সামলে নিয়ে বললে, ‘কী বললে?’

‘স্তোরিয়া দে মোগোরা পুঁদিচ্চেরি—’

‘থাক-থাক। এতেই যথেষ্ট। যতদূর বুঝছি, দারুণ পুঁদিচ্চেরি।’

‘আলবাত পুঁদিচ্চেরি। যাকে বাংলায় বলে ডেনজারাস। ল্যাটিন ভাষায় লেখা কিনা।’

কুঁচো চিংড়ির মতো মুখ করে হাবুল জিজ্ঞেস করলে, ‘তুমি আবার ল্যাটিন ভাষা শিখলা কবে? শুনি নাই তো কোনোদিন।’

খুশিতে টেনিদার নাকটা আট আনার সিঙাড়ার মতো ফুলে উঠল। ‘নিজের গুণের কথা সব কি বলতে আছে রে। লজ্জা করে না? আমি আবার এ ব্যাপারে একটা—মানে মেফিস্টোফিলিস—বংলায় যাকে বলে বিনয়ী।’

ক্যাবলা বললে, ‘ধেত্! মেফিস্টোফিলিস মানে হল—’

টেনিদা বললে, ‘চোপ।’

পশ্চিমে থাকার অভ্যেসটা ক্যাবলার এখনো যায়নি। মিইয়ে গিয়ে বললে, ‘তব ঠিক হ্যায়, কোই বাত নেহি।’

এর মধ্যে হাবলা আমার কানে কানে বলছিল, ‘হঃ ঘোড়ার ডিম,—বিনয়ী না কচুর ঘন্ট—’ কিন্তু টেনিদার চোখ এড়াল না। বাঘা গলায় জিজ্ঞেস করলে, ‘হ্যাবলা, হোয়াট সেয়িং? ইন প্যালাজ ইয়ার?’

‘কিন্তু টেনিদা, কিচ্ছু না।’

‘কিচ্ছু না?’—টেনিদা বিকট ভেংচি কাটল একটা, ‘চালাকি পায়া হ্যায়? আমি তোকে চিনিনে? নিশ্চয়ই আমার বদনাম করছিলি। এক টাকার তেলেভাজা নিয়ে আয় এক্ষুনি।

‘আমার কাছে পয়সা নাই।’

‘পয়সা নেই? ইয়ার্কি? ওই যে পকেট থেকে এক টাকার নোট উঁকি মারছে একখানা? গো-কুইক-ভেরি কুইক—’

তেলেভাজা শেষ করে টেনিদা বললে, ‘দুঃখ করিসনি হাবলা এই যে ব্রাহ্মণ ভোজন করালি, তাতে বিস্তর পুণ্যি হবে তোর। আর সেই ল্যাটিন বইটা থেকে এখন একখানা গপ্পো বলব না, যে তোর একটাকার তেলেভাজার ব্যথা বেমালুম ভুলে যাবি।’

মুখ গোঁজ করে হাবুল বললে, ‘হু।’

ক্যাবলা বললে, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করব? হিস্টরির এমন চমত্কার বইখানা পাওয়া গেল কোথায়? ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে নাকি?’

‘ছোঃ! এ-সব বই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়? ভীষণ রেয়ার। দাম কত জানিস? পঞ্চাশ হাজার টাকা।’

‘অ্যাঁ!’

ক্যাবলার চশমা লাফিয়ে আর একবার নেমে পড়ল। হাবুল কুট করে আমাকে চিমটি কাটল একটা, আমি চাটুজ্যেদের রোয়াক থেকে গড়িয়ে পড়তে-পড়তে সামলে নিলুম।

ক্যাবলা বোধ হয় আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু টেনিদা হঠাত্ চেঁচিয়ে উঠল:

‘স্টপ। অল সাইলেন্ট। আচ্ছা, হ্যামলিন শহরের সেই বাঁশিওয়ালার গল্পটা তোদের মনে আছে?’

‘নিশ্চয়-নিশ্চয়—’ আমরা সাড়া দিলুম। সে গল্প আর কে না জানে। শহরের ভীষণ ইঁদুরের উত্পাত—বাঁশিওয়ালা এসে তার জাদুকরী সুরে সব ইঁদুরকে নদীতে ডুবিয়ে মারল। শেষে শহরের লোকেরা যখন তার পাওনা টাকা দিতে চাইল না—তখন সে বাঁশির সুরে ভুলিয়ে সমস্ত বাচ্চা ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যে পাহাড়ের আড়ালে চলে গেল, কে জানে।

টেনিদা বললে, ‘চেঙ্গিস খাঁর নাম জানিস?’

‘কে না জানে। যা নিষ্ঠুর আর ভয়ঙ্কর লোক।’

টেনিদা বললে, ‘চেঙ্গিস দেশে দেশে মানুষ মেরে বেড়াত কেন জানিস? হ্যামিলনের ওই বাঁশিওয়ালাকে খুঁজে ফিরত সে। কোথাও পেত না, আর ততই চটে যেত, যাকে সামনে দেখত তারই গলা কুচ করে কেটে দিত।’

‘ক্যাবলা বললে, ‘এসব বুঝি ওই বইতে আছে?’

‘আছে বইকি। নইলে আমি বানিয়ে বলছি নাকি? তেমন স্বভাবই আমার নয়।’

আমরা একবাক্যে বললুম, ‘না না, কখনো নয়।’

টেনিদা খুশি হয়ে বললে, ‘তা হলে মন দিয়ে শুনে যা। এ সব হিস্টরিক্যাল ব্যাপার, কোনো তক্কো করবিনে এ নিয়ে। এখন হয়েছি কি, আগে মোঙ্গলদের দেশে লোকের বিরাট বিরাট গোঁফ-দাড়ি গজাত। এমন কি, ছেলেপুলেরা জন্মাতই আধহাত চাপদাড়ি আর চার ইঞ্চি গোঁফ নিয়ে।’

ক্যাবলা পুরোনো অভ্যাসে বলে ফেলল, ‘স্রেফ বাজে কথা। ওদের তো গোঁফ-দাড়ি হয়ই না বলতে গেলে।’

‘ইউ-চোপ রাও!’—টেনিদা চোখ পাকিয়ে বললে, ফের ডিস্টার্ব করবি তো—’

আমি বললুম, ‘এক চড়ে তোর কান কানপুরে রওনা হবে।’

‘ইয়াহ্-কারেক্ট।’—টেনিদা আমার পিঠ চাপড়ে দেবার আগেই আমি তার হাতের নাগালের বাইরে সরে গেলুম: ‘শুনে যা কেবল। সব হিস্টরি। দাড়ি আর গোঁফের জন্যেই মোঙ্গলরা ছিল বিখ্যাত। বারো হাত তেরো হাত করে লম্বা হত দাড়ি, গোঁফগুলো শরীরের দু’ পাশ দিয়ে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঝুলে পড়ত। তখন যদি মোঙ্গলিয়ায় যেতিস তো সেখানে আর লোকে দেখতে পেতিস না, খালি মনে হত চারদিকে কেবল গোঁফ-দাড়িই হেঁটে বেড়াচ্ছে। কী বিটকেল ব্যাপার বল দিকি?’

‘ওই রকম পেল্লায় দাড়ি নিয়ে হাঁটত কী করে?’—আমি বাঁধায় পড়ে গেলুম।

‘করত কী, জানিস? দাড়িটাকে পিঠের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ঠিক বস্তার মতো করে বেঁধে রাখত। আর গোঁফটা মাথার ওপর নিয়ে গিয়ে বেশ চুড়োর মতো করে পাকিয়ে—’

হাবুল বললে, ‘খাইছে।’—বলেই আকাশজোড়া হাঁ করে একটা।

‘অমনভাবে হাঁ করবিনে হাবলা’—টেনিদা হাত বাড়িয়ে কপ করে হাবুলের মুখটা বন্ধ করে দিলে: ‘মুড নষ্ট হয়ে যায়। খোদ চেঙ্গিসের দাড়ি ছিল কত লম্বা, তা জানিস? আঠারো হাত। বারো হাত গোঁফ। যখন বেরুত তখন সাতজন লোক সঙ্গে সঙ্গে গোঁফ-দাড়ি বয়ে বেড়াত। বিলেতে রানী-টানীদের মস্ত মস্ত পোশাক যেমন করে সখীরা বয়ে নিয়ে যেত না? ঠিক সেই রকম।

আর দাড়ি-গোঁফের জন্যে মোঙ্গলদের কী অহঙ্কার। তারা বলে, আমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। এমন দাড়ি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দাড়ির রাজা সে যে—হুঁ হুঁ!

কিন্তু বুঝলি, সব সুখ কপালে সয় না। একদিন কোত্থেকে রাজ্যে ছারপোকার আমদানি হলো, কে জানে। সে কী ছারপোকা!! সাইজে বোধ হয় এক-একটা চটপটির মতন, আর সংখ্যায়—কোটি কোটি, অর্বুদ, নির্বুদ। কোথায় লাগে হ্যামলিন শহরের ইঁদুর!

‘সেই ছারপোকা তো দাড়িতে ঢুকছে, গোঁফে গিয়ে বাসা বেঁধেছে। ছারপোকার জ্বালায় গোটা মঙ্গোলিয়া ‘ইয়ে ব্বাস—গেছি রে,—খেয়ে ফেললে রে—বলে দাপাদাপি করতে লাগল। দু’চারটে ধরা পড়ে—বাকি সব যে দাড়ির সেই বাঘা জঙ্গলে কোথায় লুকিয়ে যায়, কেউ আর তার নাগাল পায় না। আর স্বয়ং সম্রাট চেঙ্গিস রাতে ঘুমুতে পারেন না—দিনে বসতে পারেন না—‘গেলুম গেলুম’ বলে রাতদিন লাফাচ্ছেন আর সঙ্গে লাফাচ্ছে দাড়ি-গোঁফ ধরে থাকা সেই সাতটা লোক। গোটা মঙ্গোলিয়া যাকে বলে জেরবার হয়ে গেল।’

হাবুল বললে, ‘অত ঝঞ্জাটে কাম কী, দাড়ি-গোঁফ কামাইয়া ফ্যালাইলেই তো চুইক্যা যায়।’

‘কে দাড়ি কামাবে? মঙ্গোলিয়ানরা? যা না, বলে আয় না একবার চেঙ্গিস খাঁকে!’—টেনিদা বিদ্রূপ করে বললে, দাড়ি ওদের প্রেস্টিজ—গর্ব—বল না গিয়ে এক কোপে মুণ্ডুটি নামিয়ে দেবে।’

হাবুল বললে, ‘থাউক, থাউক, আর কাম নাই।’

টেনিদা বলে চলল: ‘হু, খেয়াল থাকে যেন। যা-ই হোক, এমন সময় একদিন সম্রাটের সভায় এসে হাজির হ্যামিলিনের সেই বাঁশিওলা। কিন্তু সভা আর কোথায়। দারুণ হট্টগোল সেখানে। পাত্র-মিত্র সেনাপতি-উজির-নাজীর সব খালি লাফাচ্ছে। দাড়ি-চুল ঝাড়ছে—দু’একটা ছারপোকা বেমক্কা মাটিতে পড়ে গেল, সবাই চেঁচিয়ে উঠল: মার-মার—ওই যে ওই-যে—

বাঁশিওলা করল কী, ঢুকেই পিঁ করে তার বাঁশিটা দিলে বাজিয়ে। আর বাঁশির কী ম্যাজিক—সঙ্গে-সঙ্গে সভা স্তব্ধ। এমন কি দাড়ি-গোঁফের ভেতর ছারপোকাগুলো পর্যন্ত কামড়ানো বন্ধ করে দিলে। গম্ভীর গলায় বাঁশিওলা বললে, ‘সম্রাট তেমুজিন—’

‘তেমুজিন আবার কোত্থেকে এল?’—আমি জানতে চাইলুম।

ক্যাবলা বললে, ‘ঠিক আছে। চেঙ্গিসের আসল নাম তেমুজিনই বটে।’

টেনিদা আমার মাথায় কটাং করে একটা গাট্টা মারল, আমি আঁতকে উঠলুম।

‘হিস্টরি থেকে বলছি, বুঝেছিস বুরবক কোথাকার। সব ফ্যাক্টস। তোর মগজে তো কেবল ঘুঁটে—ক্যাবলা সমঝদার, ও জানে।’

হাবুল বললে, ‘ছাড়ান দাও-ছাড়ান দাও—প্যালাডা পোলাপান।’

‘এই সব পোলাপানকে পেলে চেঙ্গিস খাঁ একেবারে জলপান করে ফেলত। যত সব ইয়ে—।’ একটু থেমে টেনিদা আবার শুরু করল: বাঁশিওলা বললে, সম্রাট তেমুজিন, আমি শহরের সব ছারপোকা এখনি নির্মূল করে দিতে পারি। একটিরও চিহ্ন থাকবে না। কিন্তু তার বদলে দশ হাজার মোহর দিতে হবে আমাকে।’

ছারপোকার কামড়ে তখন প্রাণ যায় যায়, দশ হাজার মোহর তো তুচ্ছ। চেঙ্গিস বললেন, দশ হাজার মোহর কেন, পাঁচ হাজার ভেড়াও দেব তার সঙ্গে। তাড়াও দেখি ছারপোকা!

বাঁশিওলা তখন মাঠের মাঝখানে মস্ত একটা আগুন জ্বালাতে বললে। আগুন যেই জ্বলে উঠল, সঙ্গে সঙ্গে পিঁ পিঁ পিঁ করে তার বাঁশিতে এক অদ্ভুত সুর বাজাতে আরম্ভ করল। আর—বললে বিশ্বাস করবিনে—শুরু হয়ে গেল এক তাজ্জব কাণ্ড। দাড়ি-গোঁফ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি অর্বুদ-নির্বুদ ছারপোকা লাফিলে পড়ল মাটিতে—সবাই হাত-পা তুলে ট্যাঙ্গো-ট্যাঙ্গো জিঙ্গো-জিঙ্গো বলে হরিসংকীর্তনের মতো গান গাইতে গাইতে—

আমি আর থাকতে পালুম না; ‘ছারপোকা গান গায়।’

‘চোপ’—টেনিদা, হাবুল আর ক্যাবলা একসঙ্গে আমাকে থামিয়ে দিলে,

‘তখন সারা দেশ ছারপোকাদের নাচে-গানে ভরে গেল। চারদিক থেকে, সব দাড়ি-গোঁফ থেকে, কোটি কোটি অর্বুদ-নির্বুদ ছারপোকা লাইন বেঁধে নাচতে-নাচতে গাইতে-গাইতে গিয়ে ‘জয় পরমাত্ম’ বলে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। ছারপোকা পোড়ার বিকট গন্ধে লোকের নাড়ি উলটে এল, নাকে দাড়ি চেপে বসে রইল সবাই।

‘দু ঘণ্টার ভেতরেরই মঙ্গোলিয়ার সব ছারপোকা ফিনিস। সব দাড়ি, সব গোঁফ সাফ। কাউকে একটুও কামড়াচ্ছে না। চেঙ্গিস খোশ মেজাজে অর্ডার দিলেন—রাজ্যের মহোত্সব চলবে সাত দিন।

‘বাঁশিওলা বললে, ‘কিন্তু সম্রাট, আমার দশ হাজার মোহর? পাঁচ হাজার ভেড়া?

‘আরে, দায় মিটে গেছে তখন, বয়ে গেছে চেঙ্গিসের টাকা দিতে। চেঙ্গিস বললেন, ‘ইয়ার্কি? দশ হাজার মোহর, পাঁচ হাজার ভেড়া? খোয়াব দেখছিস নাকি? এই, দে তো লোকটাকে ছ’গন্ড পয়সা।

বাঁশিওয়ালা বললে, সম্রাট, টেক কেয়ার, কথার খেলাপ করবেন না। ফল তা হলে খুব ডেঞ্জারাস হবে।

‘অ্যাঁ। এ যে ভয় দেখায়! চেঙ্গিস চটে বললেন, বেতমিজ, কার সঙ্গে কথা কইছিস, তা জানিস? এই-কৌন হ্যায়-ইসকো কান দুটো কেটে দে তো।

‘কিন্তু কে কার কান কাটে? হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা তখন নতুন করে বাঁশিতে দিয়েছে ফুঁ। আর সঙ্গে-সঙ্গে আকাশ অন্ধকার করে উঠল ঝড়ের কালো মেঘ। চারদিকে যেন মধ্যরাত্রি নেমে এল। হু-হু করে দামাল বাতাস বইল আর সেই বাতাসে—

‘চড়াত্-চড়াত্-চঢ়াত্—

‘না, আকাশজুড়ে মেঘ নয়—শুধু দাড়ি-গোঁফ। ঠোঁট থেকে, গাল থেকে চড়াত্ চড়াত্ করে সব উড়ে যেতে লাগল—জমাট বাঁধ দাড়ি-গোঁফের মেঘ আকাশ বেয়ে ছুটে চলল, আর সেই দাড়ির মেঘে, যেন গদির ওপর বসে, বাঁশি বাজাতে বাজাতে হ্যামলিনের বাঁশিওলাও উধাও।

‘আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে সারা মঙ্গোলিয়া এ-ওর দিক থ হয়ে চেয়ে রইল। জাতির গর্ব—দাড়ি-গোঁফের প্রেস্টিজ—সব ফিনিশ। সব মুখ একেবারে নিখুঁত করে প্রায় কামানো, কারও কারও এখানে-ওখানে খাবলা-খাবলা একটু টিকে রয়েছে, এ-ই যা। সর্বনেশে বাঁশি তাদের সর্বনাশ করে গেছে।

‘রইল মহোত্সব, রইল সব। এক মাস ধরে তখন জাতীয় শোক। আর দাড়ি-গোঁফ সেই যে গেল, একেবারেই গেল—মঙ্গোলদের সেই থেকে ও-সব গজায়ই না, ওই দু’চারগছা খাবলা-খাবলা, যা দেখতে পাস। হ্যামলিনের বাঁশিওলা—হু হু, তার সঙ্গে চালাকি।

‘আর সেই রাত্রেই চেঙ্গিস মানুষ মারতে বেরিয়ে পড়ল। বাঁশিওয়ালাকে তো পায় না—কাজে-কাজে যাকে সামনে দেখে, তার মুণ্ডুটিই কচাত্’ বুঝলি—এ হল রিয়্যাল ইতিহাস। স্তোরিয়া দে মোগোরা। পুঁদিচ্চেরি বোনানজা বাই সিলিনি কামুচ্চি ফিফথ সেনচুরি বি-সি।’

টেনিদা থামল।

ক্যাবলা বিড়বিড় করে বললে, ‘সব গাঁজা।’

ভালো করে টেনিদা শুনতে না পেলে বললে, ‘কী বললি, প্রেমেন মিত্তিরের ঘনাটা কী যে বলিস! তাঁর পায়ের ধুলো একটু মাথায় দিতে পারলে বর্তে যেতুম রে।’

অলংকরণ: তুলি