ছড়া চোর

অলংকরণ: নাইমুর রহমান

ইলার লেখা ছড়াটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কোথায় আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কথা, ইলার বুক ফেটে কান্না আসছে। ১৬ লাইনের একটা ছড়া, সম্পাদক একটা শব্দও বাদ দেননি। হুবহু ছাপা হয়েছে। সব ঠিক। শুধু ছড়ার সঙ্গে ছাপা হওয়া নামটা ইলার নয়। নামের জায়গায় লেখা আছে ঝিলমিল টুম্পা। কী বিচ্ছিরি নাম!

প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইলা শিশু-কিশোরদের এই মাসিক পত্রিকার অপেক্ষায় থাকে। ঢাকার ছেলেমেয়েরা মাসের ১ তারিখেই পত্রিকা হাতে পেয়ে যায়, তবে দিনাজপুরে ইলার হাতে পৌঁছাতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগে।

কত ছড়া সে পাঠিয়েছে। একটাও ছাপা হয়নি। অথচ হুট করে এমন একটা ছড়া ছাপা হয়ে গেল, যেটা সে পাঠায়নি! ছাপা হলো তো হলো, তা-ও আরেকজনের নামে। অবাক কাণ্ড!

ইলার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, গত মাসের ২৪ তারিখ ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। অথচ পরীক্ষার আগের রাতে অঙ্কের বদলে ওর মাথায় নানা দুষ্টুমি খেলা করছিল।

রাফ খাতার পেছনে সে লিখেছিল—

‘ছোট্ট ছেলে পিথাগোরাস
অঙ্কে করল ফেল
খবর শুনে রেগে আগুন
আন্টি ও আঙ্কেল...’

তরতর করে ছড়াটা এগিয়ে গেল! পুরোটা লেখা শেষ করে ইলার এত্ত মজা লাগছিল যে পিথাগোরাসের ২৪ নম্বর উপপাদ্যটাও সে রীতিমতো ভালোবেসে ফেলল। পরদিন স্কুলে গিয়ে দুজনকে ছড়াটা দেখিয়েছিল ইলা। একজন পরীক্ষার হলে ওর সামনে বসে, নাম তপতী। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। আরেকজন নায়লা। ও বসে পেছনে। মেয়েটা একদম হাঁদা। কিচ্ছু মনে রাখতে পারে না। পরীক্ষার হলে একটু পরপর কলম দিয়ে ইলার পিঠে গুঁতা দেয় আর বলে, ‘অ্যাই, ৩ নম্বরটা একটু দেখাও না প্লিজ...আচ্ছা ৪-এর ক, কী যেন ছিল সূত্রটা...?’

পরের এক সপ্তাহে পরীক্ষার চাপে ছড়াটার কথা ইলা ভুলেই গিয়েছিল। এর মধ্যে হঠাৎ স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনের জন্য ছড়া আহ্বান করা হলো। কী মনে করে যেন পিথাগোরাসের ছড়াটাই জমা দিয়েছিল সে।

আর তার কদিন বাদেই কিনা ছড়াটা ছাপা হয়ে গেল! তা-ও স্কুলের ম্যাগাজিনে নয়, একেবারে শিশু-কিশোরদের মাসিক পত্রিকায়! পত্রিকার ঠিকানায়, অন্যের নামে ছড়াটা কে পাঠাল?

ক্লাসে স্কুল ম্যাগাজিন কমিটির সদস্য সংখ্যা দুজন। সুপ্রীতি আর নিশা। ছড়া-গল্প সব ওদের কাছে জমা দিতে হয়। ওই কাজটা ওরাই করল না তো? ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকা অফিসের সঙ্গে সুপ্রীতির যোগাযোগ আছে, ইলা জানে। কয়েকবার ওর লেখা ছাপাও হয়েছে। আবার নিশাকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। ছড়াটা জমা দেওয়ার পরদিন নিশা বলছিল, ‘ইলা, তোমার ছড়াটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। আগে আর কোথাও দিয়ে দাওনি তো?’ এমনিতে নিশা মেয়েটা কেন যেন ইলাকে বিশেষ পছন্দ করে না। হঠাৎ আগ বাড়িয়ে এই প্রশংসার মানে কী!

তপতী আর নায়লাকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। যদিও ওরা ছড়াটা দেখেছে মাত্র একবার। নায়লার পক্ষে একবার দেখেই মনে রাখা অসম্ভব। ওকে তাই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু তপতীর কাছে এটা তেমন কোনো ব্যাপার না। তা ছাড়া তপতী মেয়েটা একটু হিংসুটে প্রকৃতির। অন্যের ভালো একদম দেখতে পারে না।

ঠান্ডা মাথায় কিছুক্ষণ ভাবল ইলা। হঠাৎই ওর মাথায় সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আরে, এই ব্যাপারটা আগে মাথায় আসেনি কেন!

ইলা জানে ছড়াচোরটা কে। তোমরা কি জানো?

উত্তর: ইলা ছড়াটা লিখেছিল মাসের ২৪ তারিখে, সুপ্রীতি আর নিশাকে সে দেখিয়েছে এক সপ্তাহ পর। ওদিকে শিশু-কিশোরদের মাসিক পত্রিকাটা বেরোয় মাসের ১ তারিখে। ততদিনে তো মাস শেষ, অতএব সুপ্রীতি আর নিশার পক্ষে ছড়া পাঠানো সম্ভব না। রইলো বাকি তপতী আর নায়লা। একবার দেখেই নায়লা ছড়া মুখস্থ করতে পারবে না। অতএব কাজটা তপতীই করেছে।