প্রেতসভা

এক

খুশিমনে শিস দিতে দিতে এলিভেটরে পা রাখল কিশোর পাশা। আবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আসতে পেরে খুব খুশি। ওর কেরি আন্টি থাকেন এখানে, মেরি চাচির বোন।

এখানে আসার কারণ, কারিনা জনসন ওরফে কেরি আন্টির পাঠানো একটা মেসেজ, ‘জলদি এসো, যদি সম্ভব হয়। এখানে অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে।’

ওপর দিকে ধেয়ে চলল এলিভেটর। আর কিশোর ভাবছে মেসেজটার কথা। মানে কী এর?

একটু পর, সে যখন এলিভেটর থেকে নামছে, এই সময় একজন মহিলা সোজা ছুটে এল ওর দিকে, ধাক্কা দিয়ে আরেকটু হলেই ফেলে দিচ্ছিল ওকে। টলে উঠে এক পাশে সরে গেল কিশোর, কোনোমতে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাল নিজেকে। মহিলা ছোটখাটো, হালকা-পাতলা, মাঝবয়সী আর অবশ্যই খ্যাপা। কিশোরকে ‘সরি’ বলল না, কোনো রকম ভদ্রতার ধার ধারল না, ছুটে গিয়ে উঠে পড়ল পুরোনো আমলের এলিভেটরটায়, ‘ডাউন’ লেখা বোতামটা টিপে দিল, দড়াম করে লেগে গেল দরজাটা।

‘বহুত তাড়াহুড়ায় আছে মহিলা, তাই না?’ বললেন আরেক মহিলা। একটা অ্যাপার্টমেন্টের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। এর দুটো দরজা পরেই কেরি আন্টির দরজা। এই মহিলা লম্বা, অভিজাত পোশাক পরা, ঘাড়ের ওপর নেমেছে কুচকুচে কালো চুল। কিশোরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি ঠিক আছো?’

‘হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি, থ্যাংক ইউ,’ হাসিমুখে জবাব দিল কিশোর। তারপর হেঁটে এল আন্টির দরজার সামনে। কলবেলের বোতাম টিপল।

‘আরে কিশোর! এসো, এসো!’ দরজা খুলে দিয়ে আন্টি বললেন। কিশোরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন ভেতরে। একটা আরামদায়ক লিভিং রুম। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা জার্নিটা কেমন হলো?’

‘ভালো,’ কিশোর বলল। ‘সারাটা পথ ভালোই এলাম, কিন্তু এলিভেটর থেকে নামার সময় তাড়াহুড়ো করে এক মহিলা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছিল।’

‘তাই?’ উঁচু হয়ে গেল কেরি আন্টির ভুরু। ‘দেখতে কেমন?’

‘ছোটখাটো, সোনালি চুল, আপনার বয়সী। অস্থির মনে হলো।’

‘ও, বুঝেছি, নিশ্চয়ই নোরা গিলবার্ট। আমার একজন খুব ভালো বন্ধু ছিল, যতক্ষণ না—ইয়ে, আসলে ওটা বলার জন্যই তোমাকে এখানে ডেকে এনেছি।’

‘তাহলে বলুন,’ কিশোর বলল।

‘আমার পাশের ফ্ল্যাটে অদ্ভুত কিছু ঘটছে,’ বলতে লাগলেন কেরি আন্টি। ‘ছয় মাস আগে শুরু হয়েছে ঘটনাটা। ৩০৭ নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে যখন-তখন শোনা যায় ভুতুড়ে গান। একবার তো একজনকে চিত্কার করে বিলাপ করতেও শুনেছি। শুনলে মনে হয় কয়েকজন ডাইনি বসে সভা করছে!’

হাসল কিশোর। ‘কেরি আন্টি, বাস্তবতায় আসুন!’

‘আমি বাস্তবতায়ই আছি!’ জোর দিয়ে বললেন আন্টি। একজন সুদর্শন মহিলা তিনি। স্কুলটিচার। ‘তুমিও শুনতে পাবে...’

তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই তীক্ষ একটা চিত্কার শোনা গেল। বিলাপে রূপ নিল সেটা।

‘কিসের শব্দ?’ কিশোরের প্রশ্ন।

‘তবে আর বলছি কী? এ সবই তো ঘটে। মনে হচ্ছে, আমাদের বাড়িটাতে কোনো দুষ্ট প্রেতাত্মা ভর করেছে,’ দুর্বল হাসি দেখা গেল কেরি আন্টির মুখে।

‘প্রেতাত্মা!’ আন্টির দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল কিশোর। হেঁটে এল জানালার কাছে। বিলাপের শব্দ এখন রাগত গর্জনে রূপ নিয়েছে। শব্দটা যেদিক থেকে আসছে, সেদিকে তাকাল কিশোর। এক পলকের জন্য দেখল, মস্ত একটা কালো বিড়াল লাফ দিয়ে চলে গেল পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে।

হেসে ফেলল কিশোর। বিড়ালটা ততক্ষণে দুই থাবা দিয়ে নিজের মুখ মুছতে আরম্ভ করেছে। কেরি আন্টিকে ডাকল কিশোর, ‘আসুন, দেখে যান। ওই যে আপনার দুষ্ট প্রেতাত্মা, চেটে চেটে থাবা পরিষ্কার করছে।’

পাশে এসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে কেরি আন্টিও হাসলেন। ‘নাহ্, মাথাটা গোলমালই হয়ে গেছে। তবে কিশোর, যেসব শব্দ শোনা যায়, এতই ভুতুড়ে, মাথা খারাপ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নোরা গিলবার্ট, আমাদের এই তলাতেই থাকে, প্রায়ই আমার এখানে গল্প করতে আসত। কিন্তু যখন থেকে মাদাম গিলোইজির সঙ্গে দেখা করা শুরু করেছে, তখন থেকে বদলে গেছে, আমাকে এখন এড়িয়ে চলে। তার আচার-আচরণও বদলে গিয়ে কেমন অদ্ভুত হয়ে গেছে, যেন কী করছে নিজেই জানে না।’

‘আমার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে,’ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। ‘আরও একজন মহিলার সঙ্গে দেখা হয়েছে, সেই মহিলাও নোরা গিলবার্টের আচরণটাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারছেন না।’

‘আমার আরেকজন প্রতিবেশীর সঙ্গেও দেখা হয়েছে তোমার?’

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘অনেক লম্বা, কালো চুল...’

‘তিনি মিসেস ডেনভার,’ বাধা দিয়ে বললেন কেরি আন্টি। ‘একজন অভিনেত্রী। খুব ভালো মানুষ। মাঝে মাঝে যদিও অতি নাটকীয় কাজ-কারবার করে বসেন। মাদাম গিলোইজির ওপাশের ঘরটাতে থাকেন। অদ্ভুত শব্দ শোনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি আমি। তাঁর ধারণা, মাদাম গিলোইজি একজন ডাইনি।’

‘আজব চিন্তাভাবনা করছেন না আপনারা?’ কিশোরের প্রশ্ন।

‘কেন এসব সন্দেহ করছি, তার প্রমাণ আমি দিতে পারব,’ কেরি আন্টি বললেন। উঠে গিয়ে ডেস্ক থেকে ছোট একটা জিনিস তুলে নিলেন।

‘এ জিনিসটা বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেছি,’ বলে আয়তাকার, একটা চতুর্ভুজের মতো লকেট তুলে দিলেন কিশোরের হাতে।

জিনিসটা উল্টেপাল্টে ভালো করে দেখল কিশোর। ‘ডায়না!’ বিড়বিড় করল ও। ‘রোমানদের শিকারের দেবী, অনেকে চন্দ্রদেবীও বলে।’

‘হ্যাঁ, ডাইনিদের জাদু করার জিনিস এটা,’ কেরি আন্টি বললেন। ‘ইউরোপে ডায়না দেবীকে পূজা করার জন্য এ জিনিস ব্যবহার করা হয়। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় ডাইনিদের সভা বসে, আর ডাইনিদের আহ্বায়কের হাতে থাকে এই জিনিস।’

‘হুঁ, জানি, পড়েছি,’ কিশোর বলল। মুখ তুলে তাকাল আন্টির দিকে। ‘তো, এখন কী করতে বলেন আমাকে?’

‘তোমাকে ওদের ডাইনিসভায় বসতে হবে,’ কেরি আন্টি বললেন।

‘আমাকে কি নেবে ওরা?’

‘আমার ধারণা, নেবে। মাঝেসাঝে তোমার বয়সী দু-একটা ছেলেকেও আসতে দেখেছি গিলোইজির সভায়।’

জ্বলজ্বল করে উঠল কিশোর। ‘তাহলে তো ভালোই।’

হাত তুললেন কেরি আন্টি। ‘শুনলে?’

চুপ হয়ে গেল কিশোর। মাথা ঝাঁকাল। সতর্ক পদশব্দ এগিয়ে আসছে বারান্দা ধরে। থামল এসে কেরি আন্টির অ্যাপার্টমেন্টের সামনে।

নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল কিশোর। পা টিপে টিপে চলে এল দরজার কাছে। এক হাতে চেপে ধরল নবটা। আস্তে করে পুরোটা ঘুরিয়ে দিয়ে হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলল পাল্লাটা।

পাল্লা সরে যেতেই দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো ছোটখাটো সোনালি চুলওয়ালা একজন মহিলা আরেকটু হলেই পড়ে যাচ্ছিলেন ঘরের ভেতর।

‘আরে, মিসেস গিলবার্ট!’ বলে উঠল কিশোর।

মুখে রক্ত জমে গেছে মহিলার। বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, ‘ইয়ে...আ-আমি কেরির সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম...’

‘ও, নোরা, তুমি,’ কিশোরের পেছন থেকে বলে উঠলেন কেরি আন্টি। ‘বলো, কী বলবে?’

‘ইয়ে...আমার একটা চারকোনা লকেট হারিয়ে গেছে,’ দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে বললেন নোরা। ‘আমার ধারণা, বারান্দায় ফেলেছি। জিনিসটা আমার কাছে ভীষণ দামি। তুমি যদি দেখে থাকো...’

‘হ্যাঁ, আমি পেয়েছি,’ জবাব দিলেন কেরি আন্টি। ‘একটু আগে কিশোর আর আমি ওটা পরীক্ষা করে দেখেছি। পরিচয় করিয়ে দিই, ও কিশোর পাশা, আমার বোনের ছেলে। কিশোর, ও নোরা, আমার বান্ধবী।’

পরস্পরকে হাই-হ্যালো বলল কিশোর ও নোরা।

তারপর কিশোর বলল, ‘আপনার জিনিসটা খুব সুন্দর। এই যে, আমার পকেটেই আছে।’ চারকোনা লকেটটা বের করে দিল ও। ‘এটা গলায় পরে থাকলে ডায়না আপনাকে রক্ষা করবে, তাই না?’

হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন নোরা।

‘ডায়নার কথা সব জানি আমি, বই পড়ে জেনেছি,’ কিশোর জবাব দিল। ‘আমি একবার ডাইনিসভায়ও যোগ দিয়েছিলাম।’

‘তার মানে তুমি গোপন সাধনায় বিশ্বাস করো?’ শ্রদ্ধার সঙ্গে বললেন নোরা, কিশোরের কথাবার্তায় ওর প্রতি ভক্তি এসে গেছে তাঁর।

‘নিশ্চয়ই,’ জবাব দিল কিশোর।

‘ডায়নার ক্ষমতা আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করেছে,’ নোরা বললেন। ‘সত্যি বলতে, দেবীর মাধ্যমে আমার মৃত স্বামীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পেরেছি আমি। আর তাতে যে কী খুশি লেগেছে আমার, বলে বোঝাতে পারব না।’

পানি টলমল করে উঠল কিশোরের চোখে। ‘গত বছর আমার এক বন্ধু মারা গেছে। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই...’ ধরে এল তার কণ্ঠ। কথা শেষ করতে পারল না।

‘ঠিক আছে, আমাদের পরের মিটিংয়ে তোমাকে নিয়ে যাব, যদি যেতে চাও,’ নোরা বললেন। ‘কালকেই হবে আমাদের মিটিং, কাল পূর্ণিমার রাত। আমাদের নেতা, মাদাম গিলোইজির সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব। হয়তো তিনি দেবীর মাধ্যমে তোমার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন।’

‘সত্যিই নিয়ে যাবেন?’ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। ‘কিন্তু আমি তো ছেলে। মহিলাদের সভায় জায়গা দেবে আমাকে?’

‘ওটা মহিলাদের সভা নয়, দেবীর সভা, যে খুশি যেতে পারে। তুমিও পারবে।’

‘খুউব, খুউব ভালো হবে...আপনার কাছে ঋণী হয়ে যাব।’

নোরা কথা দিলেন, আগামী দিন রাত নয়টায় এসে কিশোরকে নিয়ে যাবেন। তারপর, তাঁর লকেটটা মহামূল্যবান বস্তুর মতো হাতের তালুতে চেপে ধরে, গুড-বাই জানিয়ে চলে গেলেন।

‘কী বলেছিলাম?’ ভুরু নাচিয়ে কিশোরকে বললেন কেরি আন্টি। ‘মাদাম গিলোইজি একটা ডাইনি।’

চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, ‘বোঝা যাচ্ছে, মিসেস গিলবার্টসহ আরও অনেক মহিলাকে ধোঁকা দিয়ে ঠকাচ্ছে ওই মাদাম গিলোইজি। তাদের মাদামের কবল থেকে বাঁচাতেই হবে।’

দুই

পরদিন সন্ধ্যায় সময়মতো মিসেস গিলোইজির বাসায় হাজির হলো কিশোর ও নোরা। ঘরের ভেতর যা দেখল, তাতে অবাক হয়ে গেল কিশোর।

এক সারি জানালায় ভারী পর্দা টানা। ঘরের মাঝখানে রাখা কফিনের মতো দেখতে একটা কালো টেবিল। ওটা ঘিরে কাঠের মেঝেতে সাদা চক দিয়ে একটা চক্র আঁকা। লুকানো বাতি থেকে মৃদু আলো আসছে। আলোছায়া তৈরি করেছে ঘরের ভেতর। ধূপের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস। এতই ভারী, শ্বাস নিতেই কষ্ট হয়।

নিজের অজান্তেই গায়ে কাঁটা দিল কিশোরের। জানালার সারির উল্টো পাশের দেয়ালে বুনো ছাগল আর জিব বের করে রাখা কুটিল হাসিতে ভরা শিংওয়ালা শয়তানের ছবি। আরেক দেয়ালে সিংহের দেহ ও মানুষের মুখওয়ালা কল্পিত দানব স্ফিংসের ছবি। ভয়ানক ভঙ্গিতে হা করে আছে দানবটা।

হাতে তির-ধনুক নিয়ে ডায়নার বিশাল একটা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে ঘরের একধারে। জানালার পর্দাগুলোর কাছে এমনভাবে রাখা হয়েছে ওটাকে, যেন ঘরে ভয়াল আবহ সৃষ্টি করার জন্যই।

ঠোঁট কামড়াল কিশোর। অবাক হয়ে ভাবছে, কিসের মধ্যে এসে ঢুকল? এই ভুতুড়ে আবহ দেখে মনের মধ্যে খুঁতখুঁত করছে ওর। প্রেতসাধকদের এ রকম স্ফিংসের ছবি ব্যবহার করতে আর দেখেনি, তা-ও আবার হাঁ করা স্ফিংস।

এই উদ্ভট স্থাপনার প্রতিষ্ঠাতাকে দেখেও স্বাভাবিক মানুষ মনে হলো না। ডাইনিই বলা চলে। মাদাম গিলোইজির লম্বাটে মুখ, ধারালো নাক আর হলুদ দাঁত। লাল নেলপলিশ লাগানো চোখা নখওয়ালা আঙুলগুলোকে বাজপাখির নখের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন নখের ডগা বেয়ে রক্ত ঝরছে। মরচে রঙের চুলগুলোকে এমনভাবে আঁচড়ানো হয়েছে, খাড়া হয়ে আছে ওগুলো, যেন মাথার চারপাশে একটা লালচে আভা তৈরি করেছে। লম্বা কালো একটা আলখাল্লা পরেছে, হাতা দুটো বাদুড়ের ডানার মতো করে বানানো। কানে আবলুশ কাঠের তৈরি গুটি দিয়ে বানানো কানের দুল।

মিসেস নোরা গিলবার্ট যখন মাদামের সঙ্গে কিশোরের পরিচয় করিয়ে দিলেন, কালো উজ্জ্বল চোখের তীক্ষ দৃষ্টির ছুরি দিয়ে যেন কিশোরের ভেতরটা চিরে দেখে নিল মাদাম গিলোইজি।

‘তাহলে মৃতের রহস্য ভেদ করে ভেতরটা দেখতে ইচ্ছুক তুমি!’ নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন মাদাম। ‘সাবধান! মৃতেরা তোমার ভালো না-ও চাইতে পারে!’

তারপর কিশোরকে তার মৃত বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করল মাদাম, জানতে চাইল কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে।

‘ওর নাম রিচি ওয়াগনার, ওয়েস্ট সাইডের সেইন্ট বারবারা গির্জার গোরস্তানে কবর দেওয়া হয়েছে তাকে,’ জবাব দিল কিশোর। দ্রুত ভাবনা চলেছে মাথায়। জায়গাটার কথা আন্দাজেই বলে দিল, এটার কথা একবার বলতে শুনেছে কেরি আন্টিকে।

‘খুব ভালো,’ মৌমাছির মতো গুঞ্জন করে উঠল যেন মাদাম গিলোইজির কণ্ঠ। ‘আজ থেকে দুই দিন পর তোমার বন্ধুর আত্মাকে তলব করব আমরা। পূর্ণিমার রাতে পূর্ণ শক্তি পায় দেবী ডায়নার ক্ষমতা।’

রাতের উত্সব শুরু হলো। ডাইনিসভার সদস্যরা সবাই উত্তেজিত, এতটাই বেশি, রীতিমতো খ্যাপা মনে হতে লাগল একেকজনকে। টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়েছে ওরা, চকে আঁকা সাদা চক্রের ভেতরে। কিশোরকে নিয়ে নোরাও যোগ দিলেন ওদের সঙ্গে। সবাই হাত ধরাধরি করে বসেছে। আলো নিভিয়ে দিলেন মাদাম গিলোইজি। পর্দার রশি ধরে টেনে পর্দাগুলো সরিয়ে দিলেন জানালার সামনে থেকে।

রুপালি রঙের উজ্জ্বল চাঁদের আলো যেন ঝাঁপিয়ে এসে পড়ল ঘরে। ডায়নার মূর্তিটাকে কালো, অপার্থিব, এক ধরনের ভুতুড়ে সৌন্দর্যে রূপ দিল।

খসখসে কণ্ঠে এক বিচিত্র গান ধরল মাদাম গিলোইজি:

অ্যাবরাকাডেবরা, অল ইজ ওয়েল

অ্যাজ লং অ্যাজ উই নো ডায়না’স স্পেল।

তাঁর সঙ্গে গলা মেলাল বাকি মহিলারা। সুর করে গাইল। তারপর মাদাম গিলোইজি চলে গেল। সবাই সবার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়াল মহিলারা। মাদাম ফিরে এল মস্ত একটা কড়াই নিয়ে। সাবধানে টেবিলে রাখল ওটা।

‘এতে আছে ডাইনির ঝোল,’ সুর করে বলল ও। ‘এই ঝোল সবাই মিলে দেবী ডায়নার উদ্দেশে পান করব আমরা।’

দৃশ্যটা সিনেমায় দেখা এক ডাইনির কথা মনে করিয়ে দিল কিশোরকে। সেই ছবিটাতেও এমন একটা দৃশ্য ছিল, আর তাতে ‘ডাইনির ঝোল’ খাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। মনে হলো যেন সেই সিনেমাকেই নকল করছে মাদাম গিলোইজি।

একটা কাঠের ডাবর নিয়ে কড়াইয়ের ঘন ঝোলটাকে নাড়তে শুরু করল মাদাম। তারপর এক ডাবর তরল নিয়ে একজন মহিলার মুখের কাছে ধরল। ডাবরটা হাতে নিয়ে খুব আগ্রহের সঙ্গে তরলটা গিলে ফেলল মহিলা। তারপর এক এক করে সবাই সেই ঝোল পান করতে লাগল। কিশোর লক্ষ করল, মাদাম সেই ঝোল খেল না। পান করার ভঙ্গিতে ডাবরটা শুধু মুখের কাছে ছুঁইয়েই সরিয়ে নিল।

তার মানে এই ঝোল খাওয়া যাবে না, ভাবল কিশোর। তাড়াতাড়ি চারপাশে তাকিয়ে দেখে নিল, ওর ঝোলটা কোনখানে ফেলবে। জানালার কাছে একটা স্বর্পলতা বেয়ে উঠেছে দেখল। কিশোরের পালা যখন এল, ডাবর থেকে চুমুক দিয়ে এক মুখ ঝোল মুখের ভেতরে পুরে নিল ও। তারপর মাদামের অলক্ষ্যে পা টিপে টিপে সাবধানে সরে চলে এল লতাটার কাছে।

আস্তে করে মুখের তরল জিনিসটা ছেড়ে দিল লতার টবে। বিড়বিড় করে বলল, ‘হে লতানো উদ্ভিদ, এই দামি জিনিসটা তোমাকেই দিতে বাধ্য হলাম। দেখ এটা তোমার ক্ষতি করে না, উপকার করে।’

আবার টেবিলের কাছে ফিরে এসে দেখল ও, অদ্ভুত আচরণ করছে মহিলারা। একসঙ্গে তালে তালে দেহ দোলাতে আরম্ভ করেছে। চোখ জ্বলছে। ভোঁতা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ওদের নেতার দিকে। মিসেস নোরা গিলবার্টের অবস্থাও হয়েছে বাকি সবার মতোই।

ভাগ্যিস, ওই ঝোল খাইনি আমি, ভাবল কিশোর। কড়াইয়ের ঝোলের মধ্যে নিশ্চয় কিছু মেশানো রয়েছে।

সবাই বসে পড়ল টেবিল ঘিরে। মাদাম গিলোইজি ঘোষণা করল, দেবীকে এবার ডাকা হবে।

অদ্ভুত একটা সবুজ আলো হঠাত্ করেই বেরিয়ে এল হাঁ করে থাকা স্ফিংসের মুখ থেকে। চাঁদের আলোর সঙ্গে সেই আলো মিশে মাদামের চুলের চারপাশ ঘিরে এক অলৌকিক আভা সৃষ্টি করল যেন। সুর করে মন্ত্র পড়তে শুরু করল মাদাম।

এই আলো আর মন্ত্রের একঘেয়ে সুর ঘাড়ের লোমে শিরশিরানি তুলল কিশোরের। নাটকের দৃশ্য চমত্কারভাবে তৈরি করতে পারে মাদাম গিলোইজি, ভালো অভিনয়ও করতে পারে, মনে মনে স্বীকার না করে পারল না কিশোর।

‘আমি তোমাকে মিনতি করি, হে মহান ডায়না, আমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করো তুমি!’ জোরে জোরে বলল মাদাম। ‘হে চাঁদের দেবী, আজ রাতে আমাদের একজন সদস্য, তোমার মাধ্যমে তার প্রিয় স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চায়, তিন বছর আগেই যে গত হয়েছে!’

হঠাত্, স্ফিংসের মুখ থেকে বেরিয়ে এল স্পষ্ট কণ্ঠস্বর, নিচু কণ্ঠে কথা বলে উঠল কণ্ঠটা। হাঁ হয়ে গেল ডাইনিসভার সদস্যরা। সভায় হাজির হয়ে গেছে ডায়না।

‘এখানে আমাদের সভার একজন সদস্য স্প্রিংভিল থেকে এসেছে!’ মাদাম বলল।

‘আমি এসেছি স্প্রিংভিল থেকে!’ চেঁচিয়ে বললেন নোরা।

‘মৃত্যুর ওপারের দেশ থেকে তোমার স্বামী তোমাকে জানাতে বলেছে, সে ভালো আছে,’ বলল স্ফিংসের মুখ দিয়ে বেরোনো ভুতুড়ে কণ্ঠটা। ‘সে তোমার কাছে জানতে চেয়েছে বহুকাল আগে স্প্রিংভিলে তোমাদের বাগানে লাগানো লাইলাক ফুলগুলোর কথা তোমার মনে আছে কি না।’

‘আছে, আছে, হ্যারি, আছে!’ খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলেন নোরা।

বিড়বিড় করল ডায়না, ‘তোমার স্বামীর কথা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আর কোনো কথা বলতে পারবে না। তবে পরে আবার কথা বলতে আসবে, জানিয়েছে আমাকে।’

চুপ হয়ে গেল ডায়না। একটা মুহূর্ত চুপ থাকার পর আবার বলল, ‘সুসান নামে একজনের কথা শুনতে পাচ্ছি আমি,’ ধীরে ধীরে বলল কণ্ঠটা। ‘সুসান চাইছে ডেভিডকে যাতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলা হয়। অধ্যবসায়ী হতে পারলে যে কাজটা করছে ও, সেটাতে সফল হতে পারবে।’

‘সুসান আমার বোন!’ চেঁচিয়ে উঠল আরেকজন মহিলা। ‘ডেভিড আমার ভাইয়ের ছেলে, স্কুলে পড়ে। সে সফল হতে পারবে শুনে ভীষণ আনন্দ লাগছে আমার।’

পরের নীরবতাটা অনেক বেশিক্ষণ থাকল। দ্বিধান্বিত কণ্ঠে ডায়না বলল, ‘স্প্রিংভিলের মহিলার স্বামী ফিরে আসছে। ও মহিলাকে সাবধান করে দিতে বলেছে, বিপদ দেখতে পাচ্ছে ওর স্বামী। ভয়ানক বিপদ!’

ভয়ার্ত শব্দ করে উঠলেন নোরা। ‘ওকে জিজ্ঞেস করো, ও কী বলতে চায়! প্লিজ, দেবী, ওকে যেতে দিয়ো না!’

‘ও তোমাকে বিদেশে যেতে নিষেধ করেছে। ব্যস, এটুকুই। এখন ও চলে গেছে।’

আবার চুপ হয়ে গেল দেবী। আর কিছুই বলল না। কিশোর বুঝতে পারল, সভা শেষ হয়ে এসেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখল, দোল খেতে আরম্ভ করেছে মাদাম গিলোইজির দেহটা। প্রচণ্ডভাবে কাঁপছে।

‘ভবিষ্যত্,’ মাদাম বলল, ‘এখন আমরা ভবিষ্যত্ দেখতে পাব।’

‘আমার ভাই কি বাঁচবে?’ একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল। ‘এত অসুস্থ। কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে পড়ে আছে।’

‘ওর জন্য প্রার্থনা করো,’ সুর করে বলল মাদাম। ‘করো!’

তারপর, একজন সদস্যকে বলল বর্তমানের চাকরিটা ছেড়ে আরেকটা চাকরি নিলে তার জন্য ভালো হবে, আরেকজনকে বলল জর্জ নামে একটা লোকের ব্যাপারে সাবধান না হলে বিপদে পড়বে, তৃতীয় আরেকজনকে বলল নতুন করে প্রেম আসছে তার জীবনে। এভাবে কয়েক মিনিট ধরে অনর্গল ভবিষ্যদ্বাণী করে গেল মাদাম, তারপর হঠাত্ করেই ঘোর থেকে ফিরে এল। শেষ হলো সভা। সদস্যদের বলল, দুই রাত পরে আবার সভা বসবে। সারি দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় কিশোর লক্ষ করল, মাদামের বাড়িয়ে ধরা পাত্রে সবাই টাকা দিচ্ছে।

কিশোরও পকেট থেকে একটা নোট বের করে পাত্রে ফেলতে গেল। তবে কৌশলে টাকাটাকে লুকিয়ে ফেলল হাতের তালুতে। এই ছোট্ট হাত সাফাইটা ও শিখেছিল একজন ম্যাজিশিয়ানের কাছে। ও যে টাকা দেয়নি, দেওয়ার ভঙ্গি করেছে শুধু, মাদাম এটা বুঝতে পারল কি না বোঝা গেল না।

নোরাকে বসে থাকতে ইশারা করল মাদাম। এটা দেখে একটা বুদ্ধি এল কিশোরের মাথায়।

তিন

ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে চলে এল কিশোর। কেরি আন্টির অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকল। লিভিং রুমের ভেতর দিয়ে ছুটে গিয়ে, ব্যালকনিতে যাওয়ার দরজাটা খুলে ফেলল। দেখল, বাড়িটার প্রতিটি ব্যালকনি একটার সঙ্গে আরেকটা দেয়ালের গা থেকে বেরিয়ে থাকা কংক্রিটের সরু কার্নিশ দিয়ে যুক্ত। দ্রুত ব্যালকনির রেলিংয়ে উঠে কার্নিশে পা রাখল ও। তারপর দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সাবধানে এক পা এক পা করে পাশে সরতে লাগল। নিচে বাঁধানো রাস্তা। এখান থেকে পড়লে হাড়গোড় ভেঙে ভর্তা হয়ে মরবে। নিচে তাকালে ভয় লাগে, তাই তাকাল না। প্রায় দম আটকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে সরে যেতে লাগল। মাদাম গিলোইজির ব্যালকনিতে পৌঁছে রেলিংয়ে উঠে বসল।

মুহূর্ত পরেই উঁকি দিল লিভিং রুমে। নোরার সঙ্গে কথা বলতে দেখল মাদামকে।

ইশ্, ওরা কী বলছে যদি শুনতে পেতাম! ভাবল কিশোর। জানালার খড়খড়িটা সামান্য ফাঁক হয়ে থাকতে দেখে টান দিয়ে ওপরে তুলে দিল। শোনা গেল ভেতরের কথা।

‘তোমার স্বামী তোমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে,’ মাদাম বলছে নোরাকে। ‘কিন্তু ডায়না বলছে সে জন্য খরচ করতে হবে তোমাকে। দেবীর মন্দিরের উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি টাকা দিতে বলেছে।’

‘যা বলবেন আমি তা-ই করব,’ নোরা বললেন। ‘বলুন আমাকে কত দিতে হবে?’

মাদামের বলার অপেক্ষা না করেই পার্সের চেন খুলে ভেতরের সবকিছু টেবিলে উপুড় করে ঢেলে দিল মহিলা। তারপর গুড-বাই জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন। টেবিলের টাকাগুলো তুলে নিয়ে দরজা দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল মাদাম। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই এক পাশের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে কিশোর দেখল, বেশ বিলাসবহুল একটা বেডরুম মাদামের।

আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা সবুজ পাতাওয়ালা নোটবুক বের করল মাদাম। ওটাতে কী যেন লিখল। তারপর হাসিমুখে নোটবুকটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে জানালার দিকে এগোল।

শিরশির করে উঠল কিশোরের মেরুদণ্ড। মহিলা এখন জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই ওকে দেখে ফেলবে। তাড়াতাড়ি ব্যালকনির রেলিং টপকে কার্নিশে নেমে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। দুরুদুরু করছে বুকের ভেতর। নিঃশ্বাস ফেলতেও ভয় পাচ্ছে। মাথাটাকে একপাশে ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল মাদামের বেডরুমের জানালার দিকে। কিন্তু কিছুই ঘটল না।

সাবধানে চলতে শুরু করল আবার কিশোর। ফিরে এল কেরি আন্টির ব্যালকনিতে। লিভিং রুমে ঢুকল। ঠিক এ সময় নাশতা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন আন্টি। শোয়ার আগে কিছু খেয়ে নিয়ে শুতে বললেন কিশোরকে। ধপ করে একটা ইজিচেয়ারে নেতিয়ে পড়ে সব ঘটনা খুলে বলল কিশোর।

কথা শেষ করতে করতে শান্ত হয়ে এল বুকের কাঁপুনি। প্লেট থেকে ঘরে বানানো এক টুকরা কেক তুলে নিয়ে চিবোনো শুরু করল। ‘আহ্, দারুণ স্বাদ!’ চিবোতে চিবোতে বলল, ‘তবে যা-ই বলেন আন্টি, মাদাম গিলোইজি অসত্ কিছু করছে। তার ওপর চোখ রাখা দরকার।’

চার

পরদিন সকালে রান্নাঘরে বসে নাশতা শেষ করে, কাপপ্লেটগুলো বেসিনে ফেলে ধুচ্ছে কিশোর। এ সময় পাশের একটা ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনল। তাড়াতাড়ি হাতের প্লেটটা বেসিনে রেখে দিয়ে দৌড়ে এসে সামনের দরজা খুলে উঁকি দিল। বারান্দা দিয়ে লিফটের দিকে হেঁটে যেতে দেখল মাদাম গিলোইজিকে। ফিরে তাকিয়ে কেরি আন্টিকে বলল, মাদামের পিছু নিতে যাচ্ছে ও। তারপর আস্তে করে বারান্দায় বেরিয়ে এল। পুরোনো এলিভেটরের ক্যাঁচকোঁচ শব্দ কানে এল। নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরের দিকে নেমে যাচ্ছে এলিভেটরটা।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে, ভাবল কিশোর, এলিভেটরের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলে মাদাম চলে যাবে।

দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে আরম্ভ করল ও। নিচতলায় যখন পৌঁছাল, দেখল এলিভেটরের দরজা খোলা। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখল, পথের মোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে মাদাম। জনতার ভিড়ে মিশে গিয়ে দ্রুত পিছু নিল কিশোর। সন্দিহান ভঙ্গিতে একবার পেছনে ফিরে তাকাল মাদাম। ঝট করে একটা বাড়ির দরজার আড়ালে সরে গেল কিশোর। ওকে দেখতে পেল না মাদাম। নির্বিঘ্নে তাকে অনুসরণ করে গেল কিশোর।

কয়েকটা ব্লক পেরোনোর পর ছোট্ট একটা বিষণ্ন চেহারার অফিসে ঢুকল মাদাম। জানালায় যে সাইনবোর্ডটা ঝোলানো রয়েছে তাতে লেখা: দ্য ব্রাউন ইনভেস্টিগেশনস।

একটা বাস স্টপ রয়েছে জানালার কাছে। তাতে নিজেকে আড়াল করার সুযোগ পেল কিশোর। যাত্রীদের ভিড়ে মিশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ও। সাবধানে, মাদামের অলক্ষ্যে জানালা দিয়ে উঁকি দিল। বিশালদেহী দাড়িওয়ালা একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছে মাদাম। পকেট থেকে একটা নোটবুকের পাতা বের করে লোকটার হাতে তুলে দিল। সেটা দেখল লোকটা। মাথা ঝাঁকাল। কাগজটা পকেটে ভরে রাখল। তারপর ডেস্কের কাছে গিয়ে কতগুলো কাগজ তুলে নিয়ে মাদামের হাতে দিল। লোকটাকে একটা ব্যাংকের চেক লিখে দিয়ে, কাগজগুলো নিয়ে বেরোনোর জন্য ঘুরে দাঁড়াল মাদাম।

ঝট করে বিল্ডিংয়ের কোণে সরে গেল কিশোর। আড়াল থেকে তাকিয়ে রইল মহিলার দিকে। দেখল, ছোট অফিসটা থেকে বেরিয়ে, যেদিক থেকে এসেছিল মাদাম, সেদিকে রওনা হয়ে গেল।

এক মুহূর্ত পর, দাড়িওয়ালা লোকটাও বেরিয়ে এল অফিস থেকে। নিশ্চয় ওর নামই বিল ব্রাউন এবং সে একজন ডিটেকটিভ, অনুমান করল কিশোর। পেছনে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে, দ্রুত হেঁটে, রাস্তা পেরিয়ে এগোল পার্ক করে রাখা একটা হলুদ রঙের ফোর্ড গাড়ির দিকে।

ওর পিছু নেওয়া দরকার, ভাবল কিশোর। দ্রুত চারপাশে তাকাল একটা ট্যাক্সির জন্য। ট্যাক্সি দেখে হাত তুলল। ওর কাছে এসে থামল গাড়িটা। তাতে চড়ল কিশোর।

‘ওই ফোর্ড গাড়িটার পিছু নিতে পারবেন, প্লিজ?’ ড্রাইভারের দিকে একটা ১০ ডলারের নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলল কিশোর। ‘ওকে হারিয়ে যেতে দেবেন না।’

মুচকি হাসল ড্রাইভার। ‘আমার সাধ্যমতো চেষ্টা আমি করব। এই এলাকায় আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারে এমন ড্রাইভার নেই।’

সেন্ট্রাল পার্কের পাশ কাটিয়ে, ওয়েস্ট সাইডের দিকে এগোল ব্রাউন। কিছুদূর গিয়ে একটা রাস্তার পাশে গাড়ি রাখল।

বাহ্, বেশ মজা তো, ভাবল কিশোর, লোকটা গির্জায় ঢুকছে।

গেটের ওপর দিকে তাকাল ও। ‘সেইন্ট বারবারা’ লেখা রয়েছে। ব্রাউন কেন এখানে এসেছে, বুঝে গেল কিশোর।

ড্রাইভারের ভাড়া পরিশোধ করে, ডিটেকটিভের পিছু নিয়ে ভেতরে ঢুকল কিশোর। অফিসে ঢুকে রেজিস্ট্রি বই দেখতে শুরু করল লোকটা।

‘রেকর্ড ঘাঁটছে!’ বিড়বিড় করে নিজেকে বলল কিশোর। ‘যতই খুঁজুক, রিচি ওয়াগনারের নাম ওখানে পাবে না।’

একটা মূর্তির আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল কিশোর। সেইন্ট বারবারার মূর্তি, যার নামে গির্জাটার নামকরণ হয়েছে। আবার যখন বেরিয়ে এল ব্রাউন, অবাক মনে হলো তাকে।

ঝট করে মূর্তির আড়ালে আরেকটু সরে গেল কিশোর, যাতে ডিটেকটিভ ওকে দেখতে না পায়। কিন্তু তাড়াহুড়া করতে গিয়ে একটা মোমবাতির গায়ে হাত লেগে গেল, খুলে পড়ল ওটা মেঝেতে।

সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেল ব্রাউন।

একটা মুহূর্তের জন্য জমে গেল যেন কিশোর, ফাঁদে পড়ে গেছে ভেবে। পরক্ষণে কোণের একটা দরজা চোখে পড়ল, বেলটাওয়ারে চলে গেছে যেটা। ওটার দিকে প্রায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ল ও। আশা করল লোকটা ওকে দেখতে পাবে না। দৌড়ে উঠে চলল ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে। বুকের ভেতরে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে হূিপণ্ডটা, নিঃশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। অবশেষে একটা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল, যেটার ওপাশে প্লাটফর্ম, গির্জার মস্ত ঘণ্টাটাকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে প্লাটফর্মটা। এখানেও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপত্তি বাধাল। হোঁচট খেল। আর নিজের পতন ঠেকাতে গিয়ে দুই হাতে আঁকড়ে ধরল ঘণ্টায় বাঁধা দড়িটা।

দড়িতে টান লেগে বিকট শব্দে বেজে উঠল ঘণ্টা, ছড়িয়ে পড়ল সারা বাড়িতে। সিঁড়িতে ভারী পায়ের শব্দ শুনতে পেল কিশোর।

দ্রুত, আরেকটা খোলা দরজার অন্য পাশে চলে এল ও। চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। সিঁড়ির দরজা দিয়ে প্লাটফর্মে ঢুকল ব্রাউন। দৌড়ে গেল বেলটাওয়ারের মেঝে দিয়ে প্লাটফর্মের কিনারার দিকে।

দরজার ওপাশ থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। সিঁড়ির দরজার অন্য পাশে এসে দরজাটা লাগিয়ে ছিটকিনি তুলে দিল। তারপর দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে, ছুটে বেরিয়ে এল গির্জা থেকে। দৌড়াতেই থাকল। দুই ব্লক আসার পর একটা বাস দেখে হাত তুলল। বাসে চড়ে ফিরে এল কেরি আন্টির অ্যাপার্টমেন্টটা যে বিল্ডিংয়ে, সেটার কাছে। নিচতলায় ঢুকে দেখল মাদাম গিলোইজি এখনো বাসায় ঢোকেননি, বিল ব্রাউনের দেওয়া কাগজগুলো হাতে এলিভেটরের জন্য অপেক্ষা করছেন। আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল, মাদাম যাতে না দেখে। কিন্তু ব্রাউনের অফিস থেকে ফিরে আসতে এতক্ষণ লাগল কেন মাদামের? নিশ্চয় পথে কোথাও থেমেছিল।

ওই কাগজগুলো দিয়ে কী করবে মাদাম? ভাবছে কিশোর। নিশ্চয় আবার একটা সভা করার জন্য তথ্য জোগাড় করে এনেছে।

পাঁচ মিনিট পর, কেরি আন্টির ঘরের ব্যালকনি দিয়ে, কার্নিশের সাহায্যে মাদাম গিলোইজির ঘরের ব্যালকনিতে চলে এল কিশোর। উঁকি দিল মাদামের বেডরুমে। এক্কেবারে সময়মতো। দেখল, সবুজ পাতাওয়ালা নোটবুকের ভেতরে কাগজগুলো রেখে, নোটবুকটা আলমারির ড্রয়ারে রেখে দিচ্ছে মাদাম।

নিশ্চয় এই কাগজগুলোতে মৃত মানুষগুলোর তথ্য লেখা রয়েছে, ভাবল কিশোর, মাদাম গিলোইজির মক্কেলদের মৃত আত্মীয়দের বিষয়ে। ইশ্, যদি সেটা প্রমাণ করতে পারতাম!

পাঁচ

‘আজকের মতো তোমার গোয়েন্দাগিরির কাজ শেষ হয়েছে?’ লাঞ্চের সময় কেরি আন্টি জিজ্ঞেস করলেন কিশোরকে। ‘ব্লুমিংডেলে মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। ভাবছি কিছু কেনাকাটা করতে যাব।’

‘ভালো কথা বলেছেন,’ রাজি হয়ে গেল কিশোর। ‘এখন আর মাদাম গিলোইজির ওপর নজর রাখার কোনো মানে হয় না। এ মুহূর্তে নতুন কিছু করবে না মাদাম। ও কী করছে, আমি বুঝে গেছি। এখন আমার কাজ হলো শুধু সেটা প্রমাণ করা।’

কেরি আন্টির সঙ্গে অতি চমত্কার একটা দুপুর কাটাল কিশোর। স্ন্যাকস কিনলেন আন্টি, কিছু পোশাক, আর মূল্যহ্রাসে দেওয়া জুতো। তারপর কিশোরকে নিয়ে ডিনার খেতে এলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের নামকরা রেস্টুরেন্ট ‘প্যাসিফক টি রুম’-এ।

বাড়ি ফিরে ঘুমানোর জন্য শুতে যাবে, এ সময় বাজল টেলিফোন। মুসা ফোন করেছে। কাকতালীয়ভাবে একটা ফুটবল সম্মেলনে যোগ দিতে সে-ও লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে এসেছে, আর একটা হোটেলে উঠেছে কিশোর যেখানে রয়েছে তার থেকে মাত্র দুই ব্লক দূরে।

‘কাল বিকেল নাগাদ কাজ শেষ হয়ে যাবে আমার,’ মুসা জানাল। ‘তারপর আমি ফ্রি। তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারব।’

পরদিন, স্কুলে চলে গেলেন কেরি আন্টি। দুপুরটা ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামে ঘুরে কাটাল কিশোর।

আন্টির অ্যাপার্টমেন্টে যখন ফিরল, মাদাম গিলোইজির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মহিলা। কিশোরকে দেখে দাঁত বের করে হাসল।

‘কিশোর,’ হাসিমুখে মাদাম বলল, ‘তোমার সঙ্গেই দেখা করতে এলাম। ডায়নার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল আমার। তোমার কথা বলেছি। দেবী তোমার বন্ধু রিচি ওয়াগনারের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছে। রিচির আত্মাকে খুঁজে বের করেছে। তবে রিচিকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছে, সেখানে অলৌকিক আভার অস্তিত্ব খুব বেশি। তোমাকে আমার সঙ্গে গোরস্তানে যেতে হবে। আজ যেতে পারবে?’

ঝড়ের গতিতে ভাবনা চলেছে কিশোরের মগজে। ওর মনে হলো, এটা কোনো ধরনের ফাঁদ হতে পারে। কিন্তু যদি যেতে না চায়, কিংবা না যায়, মাদাম গিলোইজির অপরাধ প্রমাণের একটা সুযোগ হারাবে।

‘নিশ্চয়ই যাব,’ বলল কিশোর। ‘কখন বেরোতে চান?’

‘আমার গাড়িটা গ্যারেজেই আছে, এই বাড়ির কোনার দিকে,’ মাদাম বলল। ‘এখনই বেরোতে পারি আমরা।’

মুসাকে ফোন করার কথা ভাবল কিশোর। মাদাম গিলোইজির সঙ্গে বেরোনোর আগে কাউকে জানিয়ে যাওয়া উচিত।

‘ঘরে আমার মানিব্যাগটা ফেলে এসেছি, সেটা নিয়ে আসি!’ বলে তাড়াহুড়া করে এসে বেডরুম ঢুকল কিশোর। ফোন করল মুসাকে, ওর হোটেলে। ওপাশ থেকে সাড়া না পাওয়া পর্যন্ত দম আটকে অপেক্ষা করল।

মুসা সাড়া দিতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘যাক, পাওয়া গেল!’ যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি সংক্ষেপে মুসাকে সব কথা জানাল।

‘ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামব, তাতে মিনিট খানেক সময় লাগবে,’ মুসা বলল। ‘শহরে ঘোরাফেরা করতে একটা গাড়ি দরকার ছিল, তাই হোটেলের একটা গাড়ি ভাড়া করে রেখেছি। সেটাতে করে তোমার আন্টির অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছাতে বড়জোর পাঁচ মিনিট লাগবে আমার। কোনোভাবে ডাইনিটাকে ততক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখো।’

লিভিং রুমে ঢুকল কিশোর। দেখে, কেরি আন্টির সঙ্গে একটা হরর নাটকের আলোচনা করছে মাদাম গিলোইজি। ইচ্ছে করেই সেই আলোচনায় যোগ দিল কিশোর। এমনভাবে সমালোচনা করতে লাগল, যাতে কথায় কথা বাড়ে, আসলে সময় নষ্ট করতে চাইছে ও। অধৈর্য হয়ে উঠতে লাগল মাদাম গিলোইজি। শেষে আর থাকতে না পেরে বলল, ‘নাটকের আলোচনা আপাতত থাক। আমাদের যেতে হবে। অপেক্ষা করিয়ে রাখাটা পছন্দ করে না দেবী ডায়না।’

ঘড়ির দিকে তাকাল কিশোর। ছয় মিনিট পার হয়ে গেছে। হাসিমুখে মাথা ঝাঁকাল ও মাদাম গিলোইজির দিকে তাকিয়ে। নিচে নেমে এল মহিলার সঙ্গে।

বাড়ির কোণে রাখা গাড়িটা দেখে অবাক হলো। কালো রঙের লম্বা একটা দামি গাড়ি। কালো কাচ। গাড়ির হুডে বসানো ডায়নার ছোট একটা রুপালি মূর্তি। আয়-রোজগার খুবই ভালো মাদাম গিলোইজির, ভাবল কিশোর। আগের দিনের ডাইনিরা ব্যবহার করত ডান্ডাওয়ালা ঝাড়ু আর বর্তমান ডাইনিদের বাহন লম্বা গাড়ি।

ড্রাইভিং সিটে বসল মাদাম। পাশে কিশোর। গাড়িটা যখন রাস্তার ট্রাফিকের সঙ্গে মিশে গেল, মহিলার সন্দেহ না জাগিয়ে পেছনে ফিরে তাকাল কিশোর। কী ধরনের গাড়ি ভাড়া করেছে মুসা, জানে না ও। তাই কোনটা মুসার গাড়ি বোঝার উপায় নেই। পেছনে একটা সবুজ ডাটসানকে লেগে থাকতে দেখে অনুমান করল, ওটাই হতে পারে। মনে মনে প্রার্থনা করল, যেন ওই গাড়িটাই হয়।

ছয়

শিগগিরই হাডসন নদীর কিনারের একটা নিরালা জায়গায় পৌঁছাল ওরা। নদীর কিনারে পরিত্যক্ত একটা গুদামঘরের কাছে। শঙ্কিত হলো কিশোর। গোরস্তানে যায়নি মহিলা। যেখানে এসেছে, জায়গাটা ভালো না। বিপদে ফেলতে পারে ওকে। মুসা যদি অনুসরণ করে না থাকে, উদ্ধার করার কেউ থাকবে না।

গাড়ি থামাল মাদাম গিলোইজি। বলল, ‘এখানেই নামতে হবে আমাদের।’

‘কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন গোরস্তানে...’

‘বলেছিলাম। কিন্তু আমি টের পেয়েছি ওখানে অলৌকিক আভার প্রভাব খুব বেশি। সেটাকে এড়ানোর জন্যই এখানে এসেছি। এসো আমার সঙ্গে।’

শূন্য গুদামঘরটার দিকে কিশোরকে নিয়ে চলল মহিলা। ওখানে যাওয়াটা কোনোমতেই উচিত হবে না আমার, ভাবছে কিশোর। সদর দরজার কাছে চলে এসেছে ওরা। মাদাম দরজা খোলার আগেই ভেতর থেকে ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজাটা। বেরিয়ে এল একটা লোক। খপ করে কিশোরের হাত চেপে ধরল। লোকটাকে চিনতে পারল কিশোর। দাড়িওয়ালা ডিটেকটিভ, বিল ব্রাউন।

হাত ঝাড়া দিয়ে, লোকটার পায়ে লাথি মেরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিশোর। কিন্তু লোকটা অতিরিক্ত শক্তিশালী। কোনোমতেই হাত ছোটাতে পারল না কিশোর।

‘অনেক হয়েছে, বিচ্ছু খোকা!’ দাঁত খিঁচিয়ে লোকটা বলল। ‘আর কোনো ঝামেলা যাতে না করতে পার, সেই ব্যবস্থা করব আমি।’

‘সেইন্ট বারবারায় রিচি ওয়াগনার নামে কাউকে কবর দেওয়া হয়নি,’ মাদাম গিলোইজি বলল। ‘তোমার বিষয়েও খোঁজখবর নিয়েছি আমরা। রকি বিচে থাকো তুমি। আন্টির বাড়িতে বেড়াতে এসেছ। তুমি একজন শখের গোয়েন্দা।’

 মোটা দড়ি দিয়ে কিশোরের হাত-পা বাঁধল ব্রাউন। মাদাম গিলোইজি বলল, ‘দেবী ডায়নার পুরোহিতের ওপর চুরি করে নজর রাখার শাস্তি যে কী ভয়ংকর হয়, দেখতে পাবে তুমি।’

অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে কিশোর। দরজার কাছের একটা তাক থেকে পেট্রলের ক্যান নিয়ে পুরোনো কাঠের বাড়িটার দেয়ালে ছিটাতে শুরু করল মাদাম আর ব্রাউন। তারপর দেশলাই জ্বেলে কাঠিটা ছুড়ে ফেলল দেয়ালের গায়ে। চোখের পলকে শুকনো কাঠে আগুন ধরে গেল। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুনের শিখা। পুরো বাড়িটাকে গ্রাস করতে সময় লাগবে না।

দরজার দুই পাশে পেট্রল ছিটায়নি দুই অপরাধী, যাতে নিজেরা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে। ‘তোমাকে ডায়নার উদ্দেশে বলি দেওয়া হলো,’ চেঁচিয়ে বলল মাদাম গিলোইজি, ‘গুড-বাই, কিশোর পাশা!’ তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেল দুজনে।

এরপর নীরব হয়ে গেল জায়গাটা। পোড়া কাঠ আর আগুনের শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসছে না কিশোরের। ব্যাকুল হয়ে দড়ির বাঁধনগুলো খোলার জন্য টানাটানি শুরু করল ও। একই সঙ্গে চিত্কার করতে লাগল। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। আগামী কয়েক মিনিটের মধ্যে কেউ যদি ওর চিত্কার শুনে বাঁচাতে না আসে, তো মৃত্যু অবধারিত।

ইতিমধ্যেই নাকের ভেতর জ্বালাতে শুরু করেছে ধোঁয়া। চোখ দিয়ে পানি বেরোচ্ছে। বাঁধন খোলা তো দূরের কথা, দড়িগুলো কেটে বসছে আরও।

হঠাত্ ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজাটা। ‘আমি এসে গেছি, কিশোর!’ চিত্কার করে বলল মুসা। ‘এক সেকেন্ড অপেক্ষা করো!’

পকেট থেকে ছুরি বের করে দড়ি কেটে দ্রুত কিশোরকে মুক্ত করে দিল মুসা। হাত ধরে টেনে বলল, ‘জলদি এসো, বেরিয়ে যাই!’

ফুসফুসে ধোঁয়া ঢুকে প্রায় দম আটকে যাওয়া কিশোরকে টেনেহিঁচড়ে দরজার দিকে নিয়ে চলল মুসা। ওটার কাছেও চলে এসেছে এখন আগুন। হঠাত্ বিকট শব্দে বাড়িটার পেছনের অংশটা ধসে পড়ল। রাতের আকাশকে ফুঁড়ে দিল যেন আগুনের লেলিহান শিখা। পুরো বাড়িটা ধসে পড়ে নরকে পরিণত হওয়ার আগেই কোনোমতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে এল দুজনে। মুসার সবুজ ডাটসান গাড়িটার দিকে ছুটল।

‘ট্রাফিক জ্যামে পড়ে গিয়েছিলাম!’ গাড়ির ভেতরে নিরাপদে বসে মুসা বলল। ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। ‘ডাইনির কালো লিমুজিন গাড়িটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই রাস্তাটায় ঢোকার পর দেখতে পেলাম ওটাকে। প্রথমে চিনতে পারিনি, তারপর চোখে পড়ল হুডে বসানো রুপালি মূর্তিটা।’

দূর থেকে ঘণ্টা বাজার শব্দ কানে এল ওদের। দমকলের শব্দ। আগুন নেভাতে আসছে।

ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল মুসা। ‘কী হয়েছে ওদের বলা দরকার। আমাদের বিশ্বাস করলেই হয় এখন। আমরাই লাগিয়েছি, হয়তো ভেবে বসতে পারে। তাহলে বিপদে পড়ে যাব।’

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। চোখ এখনো জ্বালা করছে। পানি বেরোচ্ছে। হাত দিয়ে পানি মুছল।

একটু পরেই দমকল বাহিনীর ফায়ার চিফের সঙ্গে কথা বলল দুজনে। সন্দিহান চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন চিফ। বিড়বিড় করলেন, ‘মজা করার জন্য লাগাওনি তো? তোমাদের বয়সী ছেলেরা মজা করার জন্য অনেক অঘটন ঘটায়।’

মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে দিল কিশোর। একটা সার্টিফিকেট। রকি বিচ থানার পুলিশ চিফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের লেখা। কাগজটা দেখে ফায়ার চিফ বললেন, ‘ও, তোমরা গোয়েন্দা। তোমাদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে এখানে। হুঁ।’ কাগজটা আবার কিশোরের হাতে ফিরিয়ে দিলেন তিনি।

‘আমি যে সত্যি কথা বলছি, তার আরও প্রমাণ দিতে পারি,’ হাতের দড়ি বাঁধা দাগ পড়া জায়গাগুলো ডলতে ডলতে বলল কিশোর। ‘আমার আন্টি, কারিনা জনসন, এ শহরেরই বাসিন্দা। তিনি একজন স্কুলটিচার। তাঁর পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে মাদাম গিলোইজি। ইচ্ছে করলে, আমার আন্টিকে ফোন করে জেনে নিতে পারেন।’ একটু থেমে আবার বলল কিশোর, ‘তবে আমি চাই না, এখন ও বাড়িতে পুলিশ যাক। তাহলে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে পারে মাদাম গিলোইজি। আমি তাকে প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরতে চাই। তারপর পুলিশে দেব।’

‘ধরতে কতক্ষণ লাগবে তোমার?’ জিজ্ঞেস করলেন ফায়ার চিফ। ‘আমাকে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে, বুঝতেই পারছ।’

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘পারছি। তবে আজকের সভাতেই ওর মুখোশ উন্মোচন করে, ওর ধোঁকাবাজি বন্ধ করে দিতে পারব, আশা করি। মিটিং হয়তো এতক্ষণে শুরু হয়ে গেছে।’

‘ঠিক আছে,’ রাজি হলেন ফায়ার চিফ। ‘এখানকার কাজ সারতেই বেশ খানিকটা সময় লাগবে আমাদের। দেখো, ততক্ষণে সেরে ফেলতে পারো নাকি। গুড লাক।’

কেরি আন্টির অ্যাপার্টমেন্টে যখন ফিরে এল দুজনে, আন্টি জানালেন, সভা শুরু হয়ে গেছে, মন্ত্র পড়া শেষ হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট আগে।

‘গুড,’ কিশোর বলল। ‘তার মানে মাদাম গিলোইজি এখন ঘোরের মধ্যে যাওয়ার ভান করছে। এটাই আমার সুযোগ।’

দৌড়ে এসে ব্যালকনিতে ঢুকল ও। কার্নিশে নামার আগে ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘মুসা, পুলিশকে ফোন করে এক্ষুনি চলে আসতে বলো।’ মুহূর্ত পরেই কার্নিশে নেমে পড়ল ও। মাদামের বেডরুমের জানালার কাছে এসে, পাল্লা খুলে, চৌকাঠ ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকল। নিঃশব্দে পা টিপে টিপে চলে এল আলমারিটার কাছে। ড্রয়ার থেকে সবুজ পাতাওয়ালা নোটবুকটা বের করল। প্রথম পাতায়ই দেখতে পেল লেখাটা, যেটা দেখবে আশা করেছিল ও। লেখা রয়েছে: কিশোর পাশার সম্পর্কে সব তথ্য জানতে হবে।

দ্রুত পাতা উল্টে চলল কিশোর। পড়তে পড়তে এগোল। মাদামের মক্কেলদের প্রত্যেকের নাম লেখা রয়েছে, তাদের সম্পর্কে, তাদের মৃত আত্মীয়স্বজনদের সম্পর্কে প্রচুর তথ্য রয়েছে, যেগুলো জোগাড় করে দিয়েছে ব্রাউন।

বইটা বন্ধ করে ঘুরতে যাবে, এ সময় চোখের কোণে এক দেয়ালে একটা জিনিস দেখতে পেল। এগিয়ে গেল ও। দেয়ালের গায়ে একটা গর্ত, সবুজ, দলামোচড়া করা কাগজে ঠাসা, ঘর সাজানোর জন্য যেসব পাতলা কাগজ ব্যবহার করা হয়। তার সামনে একটা ল্যাম্প রাখা, তাতে একটা শক্তিশালী বেশি পাওয়ারের বাল্ব লাগানো।

হাঁ করে থাকা স্ফিংসটা নিশ্চয় এর অন্য পাশে রয়েছে, অনুমান করল ও। আলোটা জ্বেলে দিলে সবুজ কাগজের জন্য উল্টো পাশে একটা সবুজ আভা তৈরি হয়। মনে হয় স্ফিংসের মুখটাই জ্বলে উঠেছে।

দ্রুত গর্তটা পরীক্ষা করে দেখল কিশোর। দলামোচড়া করা কাগজের দঙ্গলের মধ্যে একটা পাইপ পেল। বাহ্, চমত্কার! ভাবল ও। এখানে দাঁড়িয়ে এই পাইপের মুখে মুখ লাগিয়ে কেউ কথা বললে ওপাশ থেকে ডায়নার ভুতুড়ে কণ্ঠ শোনা যাবে! আমি নিশ্চিত, সভার সদস্যরা এসব জিনিস দেখতে পেলে চমত্কৃত হবে।

ল্যাম্পটার পাশে টেবিলে পড়ে আছে একটা কাগজ। চিত্রনাট্যের মতো করে লেখা। সেদিনকার সভায় কী কী বলতে হবে, তারই সংলাপ। পাইপে মুখ রেখে যাকে বলতে হবে, তার জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই সংলাপগুলো। কাগজটা হাতে লেখা। ওপরে বাঁ কোণে লেখা রয়েছে একটা নাম, তানিয়া হাওয়ার্ড।

কিছুক্ষণ অবাক হয়ে কাগজটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর ভারী দম নিয়ে, দুরুদুরু বুকে এগোল লিভিং রুমে যাওয়ার দরজাটার দিকে। ওখানে চাঁদের আলোয় স্নাত, পুরোহিত মাদাম গিলোইজি এখন সমাহিত হওয়ার ভান করে এপাশ-ওপাশ দুলছে।

দরজার পাশের সুইচবোর্ডটা হাতড়ে বের করে, সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল কিশোর। ঝট করে মুখ ফিরিয়ে তাকাল মাদাম গিলোইজি। হাঁ করে তাকিয়ে রইল তার দিকে। অবাক হয়ে চিত্কার করে উঠল মাদামকে ঘিরে বসা মহিলারা।

সবুজ নোটবুকটা উঁচু করে ধরল কিশোর। আগের সভায় মিসেস নোরা গিলবার্টের সঙ্গে ওর স্বামীর যেসব কথোপকথন হয়েছিল, সেগুলো জোরে জোরে পড়ল। তারপর উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশ করে বলল, ‘এই তথ্যগুলো মাদাম গিলোইজিকে সরবরাহ করেছে বিল ব্রাউন নামে একজন ডিটেকটিভ। মাদাম গিলোইজি আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল একটা নির্জন গুদামঘরে। তারপর মাদাম আর ব্রাউন দুজনে মিলে আমার হাত-পা বেঁধে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল পুড়ে মরার জন্য। কারণ, আমি ওদের গোপন ধোঁকাবাজির খবরটা জেনে ফেলেছি।’

বরফের মতো জমে গিয়ে যেন বসে রইল সভাসদরা। উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলোর কারণে ডাইনির গায়ে পড়া চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে না আর এখন। আতঙ্কিত মুখচোখ।

‘আপনারা সবাই যদি আমার সঙ্গে বেডরুমে আসেন,’ কিশোর বলল, ‘তো দেবী আগমনের কারসাজিগুলো কীভাবে করা হয়েছে আপনাদের দেখিয়ে দিতে পারি। দেয়ালের গায়ে গর্ত করে সবুজ কাগজ ঢুকিয়ে তার সামনে ল্যাম্প বসিয়ে দিয়েছে। কাগজের ভেতরে রয়েছে একটা পাইপ। সেই পাইপে মুখ রেখে দেবী ডায়না সেজে কথা বলে মাদাম গিলোইজির প্রতিবেশী তানিয়া হাওয়ার্ড, একজন অভিনেত্রী, আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেয়।’

হঠাত্ করেই যেন প্রাণ ফিরে পেল সব মহিলা। চিত্কার-চেঁচামেচি, হট্টগোল শুরু করে দিল। দু-তিনজন উঠে ছুটে গেল বেডরুমের দিকে। বাকিরা মাদামকে ঘিরে ধরে ওদের ঠকানোর জন্য গালাগাল করতে লাগল। ‘আমাদের টাকা ফেরত দাও, মিথ্যাবাদী, চোর কোথাকার!’ বলল লম্বা, মোটাসোটা এক মহিলা। আরেকজন বলল, ‘তোমাকে আমি পুলিশে দেব! এসব করে পার পাবে ভেবেছ?’

ঠিক এই সময় কলবেল বাজল। দরজা খুলে দিল কিশোর। ঘরে ঢুকলেন দুজন পুলিশ অফিসার। পেছনে মুসা। কিশোরকে অবাক করে দিয়ে মুহূর্ত পরেই ঢুকল তানিয়া হাওয়ার্ড। হইচই শুনে কী হয়েছে দেখতে এসেছে। পুলিশের ওপর চোখ পড়তেই পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড়ে পালাতে গেল।

‘ওই মহিলাকে থামান!’ চেঁচিয়ে বলল কিশোর। ‘সে-ও এর মধ্যে রয়েছে!’

তানিয়াকে ধরে ফেললেন একজন অফিসার। মুহূর্তে ভোল পাল্টে ফেলল অভিনেত্রী। নিরীহ মুখভঙ্গি করে, যেন কিছুই জানে না এমন ভান করে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হচ্ছে এখানে? আমাকে ধরেছেন কেন?’

‘কারণ, আপনি ডায়না সেজে ধোঁকা দিয়েছেন এদের,’ মহিলাদের দেখাল কিশোর। ‘আপনি একজন অভিনেত্রী। তাই কণ্ঠস্বরকে যেমন খুশি তেমন করতে পারেন। কখনো দেবী সেজেছেন, কখনো কবর থেকে উঠে আসা আত্মা। আপনার কাজ সেরে মাদাম গিলোইজির বেডরুম              থেকে ব্যালকনি দিয়ে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যেতেন। আর আপনি যে কিছুই জানেন না, নিজেকে নির্দোষ বোঝানোর জন্য আমার আন্টির কাছে গিয়ে নালিশ করতেন এখানকার অদ্ভুত শব্দ হওয়া নিয়ে। দারুণ চালাকি!’

‘একটা জিনিসও প্রমাণ করতে পারবে না তুমি!’ চেঁচিয়ে উঠল মিসেস হাওয়ার্ড। ‘সব তোমার বানানো কথা!’

‘সত্যিই পারতাম না,’ হাসল কিশোর, ‘যদি টেবিলের ওপর আপনার নাম সই করা চিত্রনাট্যটা ফেলে না যেতেন। বোকার মতো স্ক্রিপ্টের কোনায় নামটা সই করতে গিয়েছিলেন কেন? বোধ হয় আপনার পেশাদারি কাজের অভ্যাস, তাই না? নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে পেলেই সই করে ফেলা। আর এ কাজটা করেই ধরাটা খেয়েছেন।’

হাঁ হয়ে ঝুলে পড়ল মিসেস ডেনভারের নিচের চোয়াল। আর একটা কথাও বলল না। পুলিশ যখন দুই অপরাধীকে ধরে নিয়ে গেল, এক এক করে বেরিয়ে যেতে শুরু করল অন্য মহিলারাও। অনেকেই কিশোরকে ধন্যবাদ দিল এক ভয়ানক ধোঁকাবাজের হাত থেকে ওদের বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য। মিসেস নোরা গিলবার্ট কিশোরের হাত চেপে ধরল।

‘আমি একটা গাধা,’ ফুঁপিয়ে উঠলেন তিনি। ‘আমার সব জমানো টাকা আমি খরচ করে ফেলেছি আমার মৃত স্বামীর সঙ্গে কথা বলার জন্য...’ শেষ দিকে আবেগে কথা আটকে গেল তাঁর।

‘তবে আশা করি টাকাগুলো ফেরত পেয়ে যাবেন আপনি,’ সান্ত্বনা দিল কিশোর। ‘টাকাগুলো নিয়ে নিশ্চয় ব্যাংকেই রেখেছে মাদাম গিলোইজি। ওগুলো পেতে আপনাকে সাহায্য করবে পুলিশ।’

‘কিশোর, আজীবন তোমাকে দেবী ডায়নার নামে অভিশাপ দেবে মাদাম গিলোইজি,’ মুসা বলল, ‘তার শয়তানি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছ বলে।’

‘আর সেসব অভিশাপ কেটে যাবে তাদের দোয়ায়,’ মুচকি হেসে যোগ করল কিশোর, ‘যাদের আমি ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।’ একটু থেমে বলল, ‘নোটবুকে কিছু লিখে রাখাটা খুব ভালো অভ্যাস নয়। মাঝেমধ্যেই এটাতে হিতে বিপরীত হয়। এই যেমন মাদাম গিলোইজির বেলায় হলো।’

অলংকরণ : সব্যসাচী মিস্ত্রী