বাড়ি থেকে পালিয়ে

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়ার পড়ে ফেলেছি! এখন আর বাড়িতে থাকার কোনো মানে হয় না। একটা অ্যাডভেঞ্চার করে ফেলা ফরজ হয়ে গেছে। বাবাকে বীরদর্পে বলতে গেলাম, ‘বাবাআআআ তোমাআআআর ছেলে অ্যাডভেঞ্চারেএএএ নামছেএএএএ!’ বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাগলামি করে না বাবা। সামনে পরীক্ষা, যাও পড়তে বসো।’

আমার এত্ত মন খারাপ হলো! শুধু পড়া পড়া আর পড়া! এত পড়ে হবেটা কী? রবীন্দ্রনাথ তো এত পড়েননি, নজরুলও নয়। তা–ও মা–বাবা আমাকে শুধু পড়তেই বলেন! আমি কেঁদে ফেললাম। ছি! এ কী করছি? যারা অ্যাডভেঞ্চার করে তাদের কাঁদতে নেই। আমি বুদ্ধি খুঁজতে লাগলাম, কী করে ফরজ কাজটা করে ফেলা যায়।

রাতের বেলা রঙিন কাগজে ডিজাইন করে লিখলাম—

পুরো পৃথিবী আবাস আমার…মহাবিশ্ব সংসার।
প্রাণ খুলিয়া ওরা ডাকিতেছে
করিতেছে চিৎকার

কাগজটা টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে গভীর রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলাম। সঙ্গে নিলাম ৫০০ টাকা আর পুড়িয়ে ফেলার জন্য পাঠ্যবই। দুপুর রাতে কোথায় যাব, কিছু ঠিক করা নেই। তার ওপর হাড়–কাঁপানো শীত। এবার তাড়াতাড়িই শীত নেমে গেছে। সোয়েটার আনা উচিত ছিল। কিন্তু এখন আর ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। হাঁটা শুরু করলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। মাঝপথে ধরল ছিনতাইকারী। টাকা, ঘড়ি, চশমা সব নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় এত রাতে বাইরে থাকার জন্য দিয়ে গেল একটা থাপ্পড়। এক থাপ্পড়েই আমার মাথা ঝনঝন করে উঠল।

আর আমার অ্যাডভেঞ্চারও মাঝমাঠে মারা গেল। কিন্তু তাই বলে আমি দমে যাইনি। এখনো প্রতি রাতে নতুন নতুন ভাবনা ভাবতে থাকি। কী করে অ্যাডভেঞ্চারটা সেরে ফেলা যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না। গত রাতে একটা বুদ্ধি পেয়েছি। কিন্তু তার জন্য একজন চোরকে আমাদের বাসায় চুরি করতে আসতে হবে।

আচ্ছা, তোমরা কি একটা চোর পাঠাতে পারো? একটু ভেবে দেখো না। তাহলে আমার খুব উপকার হয়।

আর...হ্যাঁ...অ্যাডভেঞ্চারটা হয়ে গেলে তোমাদের লিখে জানিয়ে দেব, কেমন?

লেখক: শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, শেরপুর।