বিশ্বের সবচেয়ে বড় গল্প

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

অনেক আগে এক দেশে এক রাজা ছিলেন। রাজার ছিল গল্প শোনার প্রচণ্ড নেশা। তিনি নিজেও অনেক গল্প জানতেন। দুনিয়ার হেন গল্প নেই যেটা তিনি শোনেননি। অন্য কারও কাছে গল্প শুনতে শুনতে একপর্যায়ে গল্প বলিয়েকে থামিয়ে দিতেন। তারপর গল্প বলিয়েকে সামনে বসিয়ে রেখে তিনি নিজেই গল্পের বাকিটা বলতেন।

হঠাৎ একদিন সেই রাজার ইচ্ছা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গল্প শুনবেন। শুধু তা-ই নয়, সেটা এমন গল্প হতে হবে, যা শুনে তিনি হাসতে পারবেন মন-প্রাণ খুলে। বিনিময়ে গল্প বলিয়েকে দেওয়া হবে ভালো রকমের পুরস্কার। রাজার কর্মচারীরা চারদিকে এ ঘোষণা অচিরেই ছড়িয়ে দিল।

পুরস্কারের লোভে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক লোক আসতে লাগল। তারা সবাই রাজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গল্প শোনাতে চায় আর দামি পুরস্কারটা জিতে নিতে চায়। তারা সাধ্যমতো চেষ্টাও করল রাজাকে হাসাতে। কিন্তু রাজা তাদের গল্প শুনে একটা কথাই বলতেন, ‘এটা পৃথিবীর বড় গল্প হতেই পারে না। আর এই গল্প শুনে হাসিরই বা কী আছে? যত সব গাধার দল এসেছে গল্প শোনাতে।’

রাজার মুখের ওপর গল্প বলিয়েরা আর কী বলবে। তারা হতাশ হয়ে ফিরে যেতে লাগল নিজেদের দেশে। দলে দলে লোক গল্প শোনাতে আসে, তারপর একসময় আবার দলে দলে হতাশ হয়ে ফিরে যায় নিজের দেশে। পুরস্কার আর জোটে না কারও ভাগ্যে।

একদিন কোথা থেকে এক ছোট্ট ছেলে রাজদরবারে এল। সে রাজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গল্প শোনাতে চায়। ছোট্ট ছেলে দেখে তার আবদার শুনে কেউ পাত্তাই দিল না। কিন্তু রাজা ছেলেটিকে গল্প বলার সুযোগ দিলেন। তারপর ছেলেটি তার গল্প বলতে শুরু করল...

অনেক আগে এক দেশে উবানবু নামে এক লোক বাস করত। সে খুব খেতে পারত। সে এত বেশি খেত যে কেউই তাকে পেট ভরে খাওয়াতে পারত না। তার পেট কখনোই ভরত না। সেই দেশের রাজা একদিন উবানবুর কথা শুনতে পেলেন। রাজা তার লোকদের বললেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে পেট ভরে খাওয়াব।’ তিনি উবানবুর জন্য তার লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন।

‘তারা উবানবুর জন্য হাজার হাজার কাপ স্যুপ, মাংস, ফলমূল আরও অনেক রকম খাবারের ব্যবস্থা করল। উবানবু উটের পিঠে চড়ে রাজার বাড়িতে এল। সঙ্গে সঙ্গে অনেক লোকও উবানবুর খাওয়া দেখতে এল। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য ড্রামার ড্রাম পেটাতে থাকল, সুরকার সুর তুলল আর গায়কেরা কোরাসে গাইতে লাগল।

উবানবু রাজাকে কুর্নিশ করে খাওয়া শুরু করল। তারপর সে গপগপ করে খেয়েই গেল, খেয়েই গেল, খেয়েই গেল...।’

‘আচ্ছা! তারপর কী হলো?’, ছোট্ট ছেলেটিকে রাজা জিজ্ঞাসা করলেন।

‘সে গপগপ করে খেয়েই গেল, খেয়েই গেল...’, ছেলেটি জবাব দিল।

‘তারপর? তারপর কী হলো?’, রাজা আবার জিজ্ঞাসা করলেন।

‘ও হো! রাজামশাই, মাত্র তো এক পাত্র খাওয়া হলো। আরও তো হাজার খানেক পাত্র বাকি আছে।’, ছোট্ট ছেলেটি জবাব দিল।

এদিকে গল্প বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিন্তু ছেলেটি বলেই চলছে, ‘...এবং সে গপগপ করে খেয়েই গেল, খেয়েই গেল, খেয়েই গেল...।’

অবশেষে গল্পপ্রিয় রাজা ছেলেটিকে আগামী সকাল পর্যন্ত গল্প থামাতে বললেন।

পরদিন সকালে রাজা ছেলেটিকে আবার উবানবু সম্পর্কে জানতে চাইলেন।

ছেলেটি আবারও বলল, ‘উবানবু একটু পানি পান করল। তারপর আবার গপগপ করে খেয়ে গেল, খেয়েই গেল...।’

গল্পপ্রিয় রাজা অবশেষে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘সত্যিই তোমার গল্পটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গল্প। এখন গল্প থামিয়ে বিশ্রাম নাও।’

তারপর আর কী! সেই ছোট্ট ছেলেটি রাজার কাছ থেকে গল্পের বিনিময়ে অনেক পুরস্কার পেল। পুরস্কার নিয়ে সে বাড়ির পথ ধরল। ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরছিল তখনো সে বলেছিল, ‘...এবং সে গপগপ করে খেয়েই গেল, খেয়েই গেল, খেয়েই গেল...।’