ভূতদের বাড়িতে সবচেয়ে ছোট ভূতের নাম মিতং।
ছোট ছেলে বলে ভূতদের বাড়িতে তার খুব আদর। লাই পেয়ে পেয়ে সে মাথায় উঠেছে। যা চায়, তা-ই সে পায়।
তাকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্রয় দিয়েছেন দাদার বাবার বাবা ভূত, চৌধুরিং। দাদা ভূত এলাকার ভূতসমাজের মাতব্বর। বলা যায়, জমিদার। অন্য সব ভূত কেউ থাকে গাছতলায়, কেউ থাকে তেঁতুলগাছে, কেউ থাকে শেওড়াগাছে, কেউ থাকে পুরোনো ইঁদারায়, আর চৌধুরিং থাকেন একটা পুরোনো পরিত্যক্ত মানুষের তৈরি দালানে। সেই পোড়ো বাড়ির চারদিকে ঘন জঙ্গল। দিনের বেলাতেও জায়গাটা অন্ধকার হয়ে থাকে। সেখানে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারে না। ভূতেরা তো তা-ই চায়। তারা যেখানে সূর্যের আলো নেই, সেখানাটায় থাকতে পছন্দ করে। আলো দেখলেই তাদের চোখ জ্বালা করে, আর গায়ে আলো পড়লে ভূতেরা ছটফট করতে থাকে। তাদের জন্য রাত হলো জেগে থাকার সময়, দিন হলো ঘুমুনোর সময়। দিনের বেলা কেউ বাইরে যায় না। পূর্ণিমা রাতও তাদের জন্য খারাপ রাত। সবচেয়ে ভালো হলো অমাবস্যার রাত। একটুও আলো থাকে না এই এলাকায়। চৌধুরিংকে তার নাতি-নাতনিরা বলে, দাদুং দাদুং, চলোঁ আমরা শহরে যাই। শহরে অনেক মজা।
দাদু বলেন, শহরের প্রধান সমস্যা আলো। ওখানে রাতের বেলাতেও দিনের মতো আলো জ্বলে। এক মুহূর্তং সহ্য করতে পারবি না। এখন তো এই দেশের গ্রামেও ইলেকট্রিসিটি। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। এরপর এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। কোথাও থাকার জো নেই।
চৌধুরিংয়ের কাছে গ্রামের গরিব ভূতেরা আসে। বলে, কর্তা, আর তো থাকা যায় না। তেঁতুলগাছেও অন্ধকার নেই। দিনের বেলা ছেলেপুলেরা আলোর অত্যাচারে কাহিল।
চৌধুরিং বলেন, তাহলে তুই কুয়ায় থাক। বাঁশঝাড়ের পেছনের কুয়ার ভেতরটা তো এখনো অন্ধকারই থাকে।
কুয়াটার কাছে মাঝে মাঝে দু-পেয়েরা আসে যে!
দু-পেয়েদের ভয় পেলে চলবে। এখন তো দুনিয়ায় ভূতের চেয়ে দু-পেয়ের সংখ্যাই বেশি।
ভয় পাই না কর্তা। ঘেন্না লাগে। সেদিন তো আমার বউ শুয়ে আছে একটা শেওড়ার ডালে। হঠাৎ দেখে, তার গায়ের ওপরে একটা মানুষের বাচ্চা। ওমা! সে তো কাপড় ঝাড়তে লাগল। সেই মানুষের বাচ্চাটা একবার তার ঘাড়ে ওঠে, একবার তার চুলে ঢোকে, আর বউ তো ভয়ে চিৎকার করে উঠল, ও বাবা গো ও মা গো মরে গেলাম গো। আমি তো দৌড়ে গেলাম বউয়ের কাছে। কী হয়েছে?
বউ তখন তার কাপড় ঝাড়ছে, অমনি গা থেকে টুপ করে পড়ে গেল একটা মানুষের বাচ্চা। আমি বলি, মানুষ যেমন তেলাপোকাকে ভয় পায়, তুমি তেমনি মানুষ ভয় পাও। বউ বলল, ঠিক ভয় পাই না, শরীরটা কেমন যেন করে, চিরবির করে।
চৌধুরিং বললেন, এটাকে বলে ফোবিয়া। মানুষ যে তেলাপোকাকে ভয় পায়, সেটাকে বলে Katsaridaphobia। আর ভূতেরা যখন মানুষকে ভয় পায়, সেটাকে বলে Androphobia। আর মানুষ যখন আমাদের মতো ভূতকে ভয় পায়, সেটাকে বলে Phasmophobia।
চৌধুরীর বড় নাতি টুটং বলে, দাদুং, তুমি এত জানলে কী করে?
দাদু কথা বলেন না। খালি হাসেন।
দাদি বলেন, তোর দাদা তো কলেজে পড়েছে। তার খুব লেখাপড়ার শখ। শেষে মানুষ সেজে ভর্তি হয়ে গেল অশ্বিনী কলেজে। খুব কষ্ট হতো তোর দাদার। দিনের বেলা পড়তে পারত না। নাইট শিফট চালু হলো কলেজে। ইলেকট্রিক আলোও তো সহ্য করতে পারে না। সারা গায়ে আলকাতরা মেখে চোখে সানগ্লাস পরে সে চুপ করে বসে থাকত কলেজের লাস্ট বেঞ্চে। টিচাররা পড়াতেন। তোর দাদা সব শুনত। শুনে শুনেই বিএ পাস করে ফেলল
কী বলো দাদি, আমাদের দাদা মানুষদের কলেজে পড়েছে।
এই দাদার আদরের নাতি হলো মিতং।
তার শখ হয়েছে সে খেলবে মানুষের বাচ্চা নিয়ে।
মিতং বলল, আমি আজকে রাতে খাব না।
তার মা বললেন, না খেলে তুই বড় হবি কীভাবে? খা।
মিতং বলল, কেন খাব। আমি কত দিন ধরে বলছি আমাকে একটা মানুষের বাচ্চা এনে দাও। তোমরা তো দিচ্ছ না।
মা বললেন, তোর ফুপু মানুষের বাচ্চা ভয় পায়। তোর দাদিও ভয় পায়। এই বাড়িতে কোনো মানুষের বাচ্চা ঢুকলে তোর ফুপু বলেছে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
মিতং বলল, আমি তো ভয় পাই না। মানুষের বাচ্চাকে ভয় পাওয়ার কী হলো?
মা বললেন, মানুষও তো তেলাপোকা ভয় পায়। আমরাও তেমনি মানুষের বাচ্চা ভয় পাই। এইটা দুনিয়ার নিয়ম। কে যে কাকে ভয় পাবে, আগে থেকে কিছু বলা যায় নাকি?
কিন্তু মিতং সারা রাত কিছুই খেল না। তার জন্য আনা হয়েছে সরষে ফুলের মধু। সে খেল না। রুই মাছের রক্ত। সে খেল না। শেষে অনেক কষ্টে জোগাড় করে আনা হলো পিঁপড়ার ডিম। তাও খেল না।
সকালবেলা চৌধুরিং শুনলেন, তার ছোট নাতি সারা রাত না খেয়ে আছে। শুনে তো তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। মিতং খায়নি কেন? ও কী চায়?
আর বলবেন না বাবাং, ও তো মানুষের বাচ্চা চায়।
চৌধুরিং বললেন, আমার নাতির কোনো শখ কোনো আহ্লাদ আমি অপূর্ণ রাখব না।
পলাশং, পলাশং।
পলাশং হাজির। জি কর্তা?
যাহ, যেখান থেকে পারিস একটা মানুষের বাচ্চা ধরে আন। দেখিস বেশি ছোট আনিস না। যেখানে-সেখানে আবার হিসু করে দেবে।
পলাশং সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল সেই অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ভাঙা ইটের শেওলা ধরা গাছগাছালিঢাকা বাড়িটা থেকে। যাওয়ার আগে, পুরো গা-মাথা ঢেকে নিল কালো আচ্ছাদনে। চোখে পড়ে নিল সানগ্লাস। ভূতদের এই এক সমস্যা। আলো তারা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।
পলাশং তো বেরিয়ে গেল। কিন্তু সেও আসলে মানুষকে খুবই ভয় পায়। একটা বাচ্চা ছেলে সে ধরে নিয়ে আসতে পারবে ঠিকই, কিন্তু মানুষের ভিড়ভাট্টায় সে কিছুতেই যাবে না।
সে আকাশ দিয়ে উড়ে চলে গেল একটা বিশাল বটগাছে। তার অন্ধকার ডালে রইল বসে। বটগাছের পাশে একটা পুকুর। যদি কেউ মাছ ধরতে আসে, তাহলে আর পলাশংকে কষ্ট করে মানুষদের পাড়ায় ঢুকে পড়তে হবে না।
পলাশংয়ের মনের আশা পূর্ণ হলো। একটা মাঝি এসেছে মাছ ধরতে। সঙ্গে এনেছে তার ছেলেকে। ছেলেটার হাতে খালুই। সে পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে, বাবা, ওইখানে পানি নড়ে। ওইখানে জাল ফেলো। মাছ উঠবে।
বাবা দেখলেন পুকুরের ঢেউটা। তারপর সেদিকে এগোতে লাগলেন। ঝপ করে জাল পড়ল।
অমনি এক লাফে বটগাছ থেকে নেমে ছেলেটাকে ছোঁ মেরে ধরে উড়ে নিয়ে চলল পলাশং।
জাল উঠল। মাছ আর মাছ। বাবা খুশি। শান্ত, বাবা, দেখ, কত মাছ। কত মাছ।
তাকিয়ে দেখেন, ছেলে নেই। হায় হায় আমার ছেলে কই। খালুইটা পড়ে আছে পুকুরের পাড়ে। ছেলে নেই।
শান্তকে নিয়ে যাওয়া হলো চৌধুরিং ভিলায়। ভূতপুরের মাতব্বর চৌধুরিংয়ের নাতি মিতংয়ের সামনে।
চৌধুরিং নিজ হাতে ধরে নিয়ে গেলেন শান্তকে।
তখন মিতংয়ের ফুপু এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন। তিনি যেইনা দেখলেন তার সামনে একটা মানুষের বাচ্চা, অমনি তিনি ও মা গো ও বাবা গো বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
চৌধুরিং বললেন, এই, ঢং কোরো না তো। এই সব ঢং আমার একদম পছন্দ নয়। মানুষকে ভয় পাওয়ার কী হলো?
মানুষের বাচ্চা পেয়ে মিতংয়ের খুশি দেখে কে? সে তাকে একবার কাঁধে নেয়। একবার কোলে নেয়। একবার নিজে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে তাকে দুপায়ের পাতার ওপরে নিয়ে ঘু-ঘু ঘু-ঘু খেলে।
তারপর বলে, তোমার নাম কী?
শান্ত বলে, বলব না।
বলবে না কেন?
তুমি কে? আমার বাবা জাল ফেলেছেন। অনেক মাছ উঠেছে। এই সময় আমাকে ধরে এনেছে। আমাকে ছেড়ে দাও। আমি বাবার কাছে যাব।
মিতং বলে, এই, আমি কিন্তু ভূতের বাচ্চা। আমাকে তুমি ভয় পাবে। এটাই নিয়ম। তুমি তো দেখি কিছুই জানো না।
শান্ত বলে, আমি ভয় পাই না। আমি বিরক্ত হই। এখন যেমন হচ্ছি। তোমরা ভূতরা তোমাদের পাড়ায় থাকো। আমরা মানুষরা আমাদের পাড়ায় থাকি। কোনো দিনও দেখেছ কোনো মানুষ কোনো ভূতের বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেছে? তাহলে তুমি কেন আমাকে ধরে এনেছ।
মিতং এই কথার জবাব দিতে পারে না। তখন মিতংয়ের বড় ভাই তুতং এসে বলে, তোমরা মানুষরা যে তেলাপোকা ধরে নিয়ে যাও, তারপর স্কুলে তেলাপোকা কাটো, ডিসেকশন করো, তার বেলা?
শান্ত বলে, মানুষ আর তেলাপোকা এক জিনিস হলো?
তুতং বলে, মানুষের কাছে তেলাপোকা যা, ভূতদের কাছে মানুষও তা।
শান্ত বলে, তোমরা কি এখন আমাকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে ছুরি দিয়ে কেটে এক্সপেরিমেন্ট করবে, রিসার্চ করবে?
মিতং বলে, তা করব না। তোমাকে এনেছি তুমি আমার বন্ধু হবে। আমরা একসঙ্গে খেলব। আমি তোমাকে খাওয়াব। তোমার চুল আঁচড়ে দেব। তুমি আমার খেলার পুতুল।
শান্ত বলল, এখন আমার খিদে পেয়েছে। আমাকে খেতে দাও।
কী খাবে তুমি? মিতং বলল।
কী আছে?
ওই তো। সরষে ফুলের মধু, মাছের রক্ত আর পিঁপড়ার ডিম।
আমি এসব খাব না। আমি খাব ভাত আর মাছ। বাবা মাছ ধরেছেন, মা সেই মাছ রান্না করবেন, আমি খাব।
আচ্ছা তোমাদের বাড়ি থেকে পলাশং কাকা এনে দেবে।
কী আর করা! পলাশং আবার ছুটল মানুষদের বাড়িতে।
এবার তাকে শান্তর মায়ের রান্না করা ভাত আর মাছ আনতে হবে।
চৌধুরিংয়ের নির্দেশ।
পলাশং আশ্রয় নিল বাড়ির পেছনের কদমগাছের অন্ধকার ডালে।
ভালো করে খেয়াল করে দেখল। শান্তদের বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গেছে। শান্তর মা কাঁদছে। দাদি কাঁদছে। তারা কেউ চুলাই জ্বালায়নি।
শান্তর ফুপু একবার এলেন টিউবওয়েলের পাড়ে। জায়গাটা অন্ধকার। পলাশং নিজের আকারটা ছোট করে ফেলল। তারপর গেল সেই কলপাড়ে। বলল, ওগো বউ শুনছঁ, তোমাদেঁর বাড়িতেঁ আজ ভাত রান্নাঁ হবেঁ নাঁ? মাছঁ রান্নাঁ?
বউটা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উল্টো দিকে দৌড় মারতে লাগল।
পলাশং ফিরে এল চৌধুরিং ভিলায়। চৌধুরিং বললেন, পলাশং, তুই কোনো কাজের না। আজ থেকে তোর চাকরি নট।
এদিকে খিদেয় শান্ত কাঁদছে—হয় আমাকে খাবার দাও, তা না হলে আমাকে আমার বাড়িতে রেখে এসো।
মিতং বলল, আচ্ছা তোমাকে অন্য বাড়ি থেকে ভাত এনে দিচ্ছি।
শান্ত বলল, আমি আমার মায়ের হাতের রান্না ছাড়া আর কিছু খাই না।
মিতং বলল, শান্ত, তুমি কিন্তু খুব জ্বালাচ্ছ। খাবার নিয়ে জ্বালাতন করা আমি একদম পছন্দ করি না। যা দেওয়া হবে, তা-ই খেতে হবে। এটা খাব না, ওটা খাব না, এ রকম করা একদম ঠিক না। ভূতেরা কখনো এই রকম করে না।
আমি তো ভূত নই। আমি তো মানুষ।
পলাশং আরেক বাড়ি থেকে দুধ আনল, ভাত আনল, কলা আনল। মিতং সেই সব মেখে সুন্দর দুধভাত বানিয়ে দিল শান্তকে। শান্ত খেলই না।
তবে সে বলল, চলো খেলি।
মিতং খুব খুশি। চলো।
শান্ত বলল, তুমি তোমার পিঠে তুলে আমাকে পাড়াটা ঘুরিয়ে দেখাও।
মিতং বলল, দিনের বেলা পারব না। রাতের বেলা পারব। দিনের আলো আমি সহ্য করতে পারি না।
আচ্ছা তাহলে দাও দুধভাতটা। কিন্তু রাতে আমাকে তুমি আমাদের এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাবে। তারপর ভোরবেলা আমাকে আবার ওই পুকুরের পাড়ে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
আচ্ছা। ঠিক আছে।
শান্ত দুধভাত খেল। মিতং খেল পিঁপড়ার ডিম।
তারপর মিতং বলল, এখন আমাদের ঘুমের সময়। আমি ঘুমাব।
মিতং ঘুমিয়ে পড়ল।
শান্ত ভাবল, এসেই যখন পড়েছি, বাড়িটা একবার ঘুরে দেখা যাক।
শান্ত পা টিপে টিপে বাড়িটা ঘুরছে।
পড়বি তো পড় একেবারে মিতংয়ের ফুপু যেখানে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে চলে গেল সে। মাটিতে ছায়া হয়ে শুয়ে আছেন তিনি, শান্ত কি তাকে দেখতে পেয়েছে নাকি। যেই না মিতংয়ের ফুপুর গায়ের ওপরে তার একটা পা পড়েছে, ফুপু ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। ও মারে, মানুষের বাচ্চাটা আবার আমার গায়েই উঠে পড়েছে রে...ধর তো রে...একে আজকে স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেলব।
ফুপুর স্বামী ড. বকুলং ছিলেন পাশেই। তিনি উঠে খপ করে ধরে ফেললেন শান্তকে। বললেন, না না, স্যান্ডেল দিয়ে মেরো না। ওকে আমি আমার ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাব। আমার স্টুডেন্টরা ওকে ডিসেকশন করবে।
সর্বনাশ। শান্ত এখন কী করবে। সে কাঁদতে লাগল।
এরই মধ্যে মিতংয়েরও ঘুম ভেঙে গেছে। সে দেখে, তার খেলনা মানুষের বাচ্চাটা নেই। সে কাঁদতে কাঁদতে এঘর-ওঘর করছে।
তারপর এল ফুপু আর ফুপার ঘরে।
দেখল, ফুপা শান্তকে একটা বয়ামের মধ্যে ভরে রেখেছেন।
মিতং বলল, আমার খেলনা তুমি কেন নিয়েছ। ছাড়ো ওকে।
ফুপা বললেন, মিতং, আমি তোমার গুরুজন, মুরুব্বির সঙ্গে কেমন করে কথা বলতে হয় তুমি জানো না। যাও এখান থেকে।
মিতং বলল, না আমি আমার খেলনা না নিয়ে যাবই না।
ফুপু শান্তকে ধরে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
এই সময় ভয়ে শান্ত দিল হিসু করে।
মানুষের হিসু আবার ভূতরা একদম সহ্য করতে পারে না।
ফুপা বললেন, পলাশং পলাশং, এই বয়ামটা ফেলে দিয়ে আয় তো বাইরে।
পলাশং শান্তকে সহ বয়ামটা নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে এল বাইরের পুকুরে।
আস্তে আস্তে পুকুরে বয়ামটা ডুবে যাচ্ছে। বিশাল পুকুর, বিরাট বয়াম। মানুষের চেয়েও বড়।
শান্ত ভাবল, এবার মৃত্যু আসন্ন। পানির নিচে গেলে সে অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাবে।
বয়ামটা চলে গেল পুকুরের একেবারে তলায়। বয়ামের ভেতরে কিছু বাতাস তো ছিলই। তাই দিয়ে কিছুক্ষণ বাঁচা যাবে। সে আর কতক্ষণ। শান্ত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
এদিকে মিতং কাঁদছে। হাতপা ছুড়ছে। জিনিসপত্র ভাঙছে।
চৌধুরিং এলেন—দরজা খুললেন। এই মিতং, কী হয়েছে বাবুসোনা।
আমার খেলনা—মানুষের বাচ্চা—ফুপা নাকি সেটাকে কাটবে। বোতলে বন্দী করে রেখেছে।
চৌধুরিং বললেন, ড. বকুলং, মানুষের বাচ্চাটা কই?
পলাশং ফেলে দিয়েছে।
পলাশং, নিয়ে আয় ওকে।
পলাশং আবার গেল বাড়ির পেছনে। হাতটা লম্বা করে বয়ামটা তুলে নিল ঘাড়ে।
তারপর বয়ামের ঢাকনা খুলে বের করল শান্তকে। তাকে নিয়ে এল চৌধুরিং ভিলায়।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
শান্তকে পেয়ে শান্ত হলো মিতং। বলল, আরেকটু রাত হোক। তোমাকে আমি তোমাদের বাড়িতেই দিয়ে আসব। নিজে পিঠে করে উড়িয়ে নিয়ে যাব।
রাত হলো।
শান্তকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল মিতং। মিতং লম্বায় একটা তালগাছের সমান হয়ে গেল।
শান্তকে পিঠে তুলে নিয়ে সে উড়তে লাগল আকাশে। আকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখতে বড় সুন্দর লাগে।
খানিকক্ষণ ওড়াউড়ি করে মিতং শান্তকে নামিয়ে দিল তাদের বাড়ির উঠানে।
শান্ত বলল, মা বোধ হয় এখনও কাঁদছেন। আমি যাই।
মিতং বলল, আচ্ছা। শোনো। তোমাকে একটা উপহার দেব। নাও।
এটা কী?
এটা একটা আংটি...এটা ঘষলেই আমি তোমার কাছে চলে আসব...
অলংকরণ: ষুভ