মশার মুখে হাসি

অলংকরণ: রকিবুল হাসান

মশারির ভেতর একটা মশা খুব বিরক্ত করছিল। ইচ্ছা হলো দুই হাত দিয়ে কষে একটা তালি বাজিয়ে মেরে ফেলি। তবে কেন যেন সেটা না করে মশাটাকে ডাক দিলাম আমি।

: অ্যাই মশা, তোমার নাম কী?

: আমার নাম আবার কী? মশা!

: আরে, এইটা তো মানুষের দেওয়া সার্টিফিকেট নাম। তোমার বাপ-মায়ের দেওয়া নাম কী?

: পুনা।

: বাহ্! ভালো নাম। আচ্ছা, তোমরা মশারির ভেতরও কীভাবে ঢোকো?

: গোপন কথা। বলা যাবে না...

: মানুষ তো তোমাদের একদম দেখতে পারে না, তার পরও তোমরা কেন মানুষের কাছে আসো?

: ধুর! তুমি তো একটা গাধা। এটা কোনো প্রশ্ন হলো? মানুষের কারণেই তো আমরা বেঁচে আছি। তবে মানুষ খুব খারাপ। একটু রক্ত খাই বলে তারা আমাদের কত আয়োজন করে মারে। এটা কি ঠিক, বলো?

: না। একদম ঠিক না।

: তুমি আসলেও গাধা। ঠিক থাকবে না ক্যান? আমি তোমার রক্ত খাব আর তুমি চুপচাপ বসে থাকবা নাকি?

: এইটাই কথা। তুমি আর কতই বা রক্ত খাবে। আমরা মানুষেরাও তো অনেকের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকি। তুমি নাহয় আমাদের একটু রক্ত খেয়ে বাঁচলা। আর রক্ত খেতে দিতে না চাইলে দেব না। তাই বলে এভাবে শোচনীয়ভাবে মারব। এখন তো আবার ইলেকট্রিক ব্যাট বের হয়েছে...

: হ্যাঁ। কী একটা জিনিস। এইটার নাম ইলেকট্রিক ব্যাট? জানতাম না। ভালো কাজ করছ। আমার বন্ধুদের বলতে হবে। ওদের সঙ্গে বাজি লাগবে...ও হ্যাঁ জানো, আমার বন্ধু পিনা না থাপ্পড় খেয়ে মরতে চায় না। মরলে নাকি ইলেকট্রিক ব্যাট না কী...ওইটাতে মরবে। ওর নাকি থাপ্পড় খেলে অপমানে লাগে...হি হি।

: আরে বাহ্! তোমরাও হি হি করে হাসো...মজার তো।

: হ্যাঁ...তার চেয়ে মজার, আমি এতক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা বলে তোমার মনোযোগ ঘুরিয়ে নিয়েছি। এদিকে আমার বন্ধু পিনাসহ বাকিরা তোমার থেকে রক্ত শুষে নিয়েছে। এমনকি আমিও। অথচ তুমি টেরই পাও নাই। তুমি আসলেই একটা বেকুব!

এর পরেই রক্ত খাওয়া ভোটকা শরীরে মশাটা আস্তে আস্তে উড়ে চলে যায়। আমি তখন মনে মনে ভাবি, বেকুব হয়েও যদি কোনো মশার মুখে হাসি ফোটানো যায়, তাহলে আমি সারা জীবন বেকুবই থাকব। কয়জনই বা মশাদের খুশি করতে পারে! হুহ্!