মিতু ও তার জাদুর সাইকেল

অলংকরণ: শিখা

বাবা-মায়ের বড় মেয়ে মিতু। গত জন্মদিনে তাদের কাছ থেকে একটা সাইকেল উপহার পেয়েছে সে। কালো রঙের সাইকেল। কালো রংটা মিতুর খুব প্রিয়। ওর বাবা সাইকেলটা কিনেছে নিউমার্কেট থেকে। বেশ পছন্দ হয়েছে মিতুর। তবে এটা যে অন্য সাইকেলগুলোর মতো নয়, সে তা বুঝতে পেরেছে আজ সকালে। সকালে স্কুল থেকে সাইকেলে করে ফিরছিল মিতু। কিছুদূর যাওয়ার পরই বুঝল ভুল পথে এসেছে ও। অল্প কিছুদিন হলো ঢাকায় এসেছে মিতুরা। মনের ভুলে ও স্কুলের বাঁ পাশের রাস্তার দিকে চলে এসেছে। সাইকেলে বসেই মিতু বলল, ‘রাস্তা ভুল করলাম, কিন্তু বাসায় তো যেতেই হবে।’ ঠিক তখনই ও বাসার সামনে চলে এল। কী আশ্চর্য! কীভাবে ঘটল এটা?

বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য মিতু ছোট বোন নিতুকে ডেকে সাইকেলে বসিয়ে বলল ‘শিশুপার্কে যাব’। মুহূর্তের মধ্যে ওরা শিশুপার্কের গেটের সামনে উপস্থিত! বাসায় ফিরেই ব্যাপারটা মা-বাবাকে বলল মিতু। পাত্তাই দিল না তারা। ‘সারা দিন সাইকেল সাইকেল করলে এমন উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আসবে। যা পড়তে বস।’ এ কথা বলে পড়তে বসতে পাঠাল মিতুকে। তাদের সামনে সাইকেলটা একটা সাধারণ সাইকেল হয়েই থাকল।

কিছুদিন পর স্কুল থেকে আর বাড়ি ফিরল না নিতু। সন্ধ্যা হয়ে গেল, তবু তার কোনো খোঁজ নেই। বাবা-মা, মিতু মিলে তন্ন তন্ন করে খুঁজল ওকে। বাড়ির চারপাশ, স্কুলে সব জায়গায় খোঁজা হলো। কোথাও নেই। অগত্যা পুলিশকে ব্যাপারটা জানাল ওরা। পুলিশের তদন্তে জানা গেল, বিকেল চারটার দিকে গুন্ডা সামসুকে স্কুলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। সামসু শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত। শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল মিতু-নিতুর মা। নিশ্চয়ই সামসু ধরে নিয়ে গেছে নিতুকে।

এমন সময় আশ্চর্য সাইকেলের কথা মনে পড়ল মিতুর। তাড়াতাড়ি দোতলা থেকে নিচে নেমে এসে সাইকেলে চেপে বলল, ‘সামসুর ডেরায় যেতে হবে।’ অমনি সাইকেলটা তার জাদু দেখাতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্জন এক বাড়ির সামনে এসে পড়ল মিতু। চারদিকে অন্ধকার। মিতুর গা ছমছম করতে লাগল। বাড়ির পেছন দিকটায় চলে এল ও। সাইকেল রাখার জন্য একটা ঘর আছে সেখানে। মিতু ওর সাইকেল রাখল। বাড়ির পেছনের জানালা দিয়ে নিতুকে দেখতে পেল ও। নিতুর হাত-পা, মুখ বাঁধা। কান্না পেল মিতুর। কিন্তু ওর এখন অনেক কাজ। ও আবার উঁকি দিয়ে দেখল সামনের দরজায় একটা মোটাসোটা গুন্ডা টাইপ লোক বসে আছে। হঠাৎ মিতু দেখল, ও যেখানে সাইকেল রেখেছিল সেখান থেকেই একটা সাইকেল নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে একটা লোক।

তখনই মিতুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলল। দৌড়ে গিয়ে সামনের দরজার কাছে বসা লোকটাকে মিতু বলল, ‘আঙ্কেল আঙ্কেল আপনাদের একটা সাইকেল চুরি করে একটা লোক পালাচ্ছে।’ সঙ্গে সঙ্গে গুন্ডা টাইপের লোকটা ছুটে গিয়ে ধাওয়া করল চোরটাকে। দ্রুত ঘরে ঢুকল মিতু। বোনের হাত-পায়ের দড়ি খুলে দিয়ে চুমু খেল ওর কপালে। তারপর নিতুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পেছনে এসে উঠে বসল সাইকেলে। তাড়াতাড়ি বলল, ‘বাড়ি যেতে হবে।’ কিন্তু সাইকেল কাজ করে না। একি কাণ্ড। চোর যে মিতুর জাদুর সাইকেল নিয়ে পালিয়েছে! আর কী করা, বোনকে নিয়ে মিতু অজানা পথের উদ্দেশে রওনা হলো। অন্ধকারে খুব জোরে সাইকেল চালাচ্ছিল। দশ মিনিট পরে ও একটা বাজারে এসে পৌঁছাল। যেখানে লোকজনকে ওরা সব কথা খুলে বলল। এরপর পুলিশ ওদের উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিল। ঘরে ঢুকতেই মা এসে দুজনকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। বাবা আর প্রতিবেশী আন্টিরা মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। কিছুদিন পরে সামসু গুন্ডার দল ধরা পড়ল। কিন্তু সেই জাদুর সাইকেলের কোনো হদিস পাওয়া গেল না।