মেরুযাত্রীর ডায়েরি

অলংকরণ: শিখা

আমার নাম অবন্তী, অবন্তী হালদার। ডাকনামও আছে একটা—অন্তু। না, আলাদা করে কোনো ডাকনাম রাখা হয়নি আমার। অবন্তী নামটাই ডাকার সুবিধার জন্য অন্তু হয়ে গেছে।

বেপোর্টে থাকি আমরা। আমেরিকার ছিমছাম, সুন্দর এক শহর।

যে গল্পটা বলতে যাচ্ছি তোমাদের, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এর প্রতিটা কথাই সত্যি। বিশ্বাস করা না-করা তোমাদের ব্যাপার।

বড়দিনের আগের রাতে ঘটেছিল ঘটনাটা।

পঁচিশে ডিসেম্বরকে কেন বড়দিন বলা হয়, এটা একটা বিরাট প্রশ্ন ছিল আমার মনে। আমি তো জানতাম, বছরের সবচেয়ে বড় দিন হচ্ছে একুশে জুন আর একুশে ডিসেম্বর হচ্ছে সবচেয়ে ছোট দিন। পরে বাবাকে জিজ্ঞেস করতে পরিষ্কার করে দিলেন বিষয়টা। এই বড়দিন বা ক্রিসমাস মানে ‘দীর্ঘ’ দিন নয়। আমাদের, মানে খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিন বলেই বড়দিন বলা হয় এটাকে। মুসলমানদের যেমন ঈদ, হিন্দুদের পূজা, বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা...

যা বলছিলাম...

সাপারের পর চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম নিজের ঘরে। শুয়েই ছিলাম শুধু, ঘুমাইনি। বলা উচিত, পারিনি ঘুমাতে। এপাশ-ওপাশও করিনি একটুও বিছানায়। ধীরে, খুব ধীরে দম নিচ্ছি আর ছাড়ছি। সেই সঙ্গে আরেকটা কাজ করছি। বলো তো, কী?

অপেক্ষা। কান খাড়া করে আছি একটা আওয়াজ শোনার প্রত্যাশায়।

সান্তার স্লেজগাড়ির ঘণ্টার আওয়াজ ওটা। সান্তা কী, বুঝেছ তো? সান্তা ক্লজ। দাদুর বয়সী হাসিখুশি এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, হরিণে টানা গাড়িতে করে আসেন অনেক দূরের চির-বরফের রাজ্য থেকে, বড়দিনের আগের রাতে আমাদের মতো ছোট বাচ্চাদের জন্য দারুণ সব উপহার রেখে যান চুপিসারে।

‘অবশ্য,’ বলেছে আমার এক দোস্ত। মলি ওর নাম। ‘সান্তা যখন আসেন, জানান দিয়েই আসেন। মিষ্টি টুংটাং আওয়াজ শোনা যায় তাঁর গাড়ির। কিন্তু আমরা তো তখন ঘুমিয়ে কাদা।’

কথাগুলো গেঁথে গেছে মাথার মধ্যে। সে জন্যই ঠিক করেছি, ঘুমাব না আজ রাতে। কখন এসে হাজির হন সান্তা, দেখতেই হবে আমাকে।

রাত এভাবে কত হলো, খেয়াল নেই। অপেক্ষা করতে করতে যেই না লেগে এসেছে চোখ দুটো, চকিতে সজাগ হয়ে গেলাম পুরোপুরি। অদ্ভুত কিছু শব্দ এসেছে কানে! উঁহু, ঘণ্টা নয়, ঘণ্টা নয়, অন্য কিছুর আওয়াজ।

চট করে বিছানা ছাড়লাম। জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিতেই চক্ষু চড়কগাছ!

পুরোনো ধাঁচের আস্ত এক রেলগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ছোট্ট দোতলা বাড়িটার সামনে! যেন থেমেছে এসে কোনো ইস্টিশনে। অথচ আশ্চর্য কি জানো? বাড়ির সামনে তো দূরের কথা, কাছেপিঠে পর্যন্ত ইস্টিশন নেই কোনো! উঠোন চিরে চলে যাওয়া সমান্তরাল লাইন দুটো এল কোত্থেকে তাহলে!

ধাতুর সঙ্গে ধাতুর ঘষা খাওয়ার বিচ্ছিরি ক্যাঁচ ক্যাঁচ ভেসে আসছিল বাইরে থেকে। প্রমাদ গুনলাম। আজব ট্রেনটা জাগিয়ে দেবে দেখছি ঘুমন্ত বাড়িটাকে! বাষ্পের ভারী চাদর মুড়ে রেখেছিল ট্রেনটাকে। আকাশ থেকে অবিরত ঝরে পড়ছিল মিহি তুষারকণা।

অনেকগুলো বগি জুড়ে ছিল একটার সঙ্গে একটা। কন্ডাক্টর গোছের একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম কাছাকাছি এক বগির খোলা দরজায়।

পরনের নীল ইউনিফর্মের ভেতরের পকেট থেকে বড়সড় গোল এক পকেটঘড়ি বের করলেন তিনি। সময়টা দেখে নিয়ে তাকালেন ওপরে, সোজা আমার জানালার দিকে।

কী যে হলো আমার, জানি না। বাইরে বেরোনোর জন্য কেমন একটা তাগিদ অনুভব করলাম সহসা। তড়িঘড়ি করে গায়ে চড়ালাম রোব, পায়ে গলালাম চটি। অন্ধকারে চোরের মতো পা টিপে টিপে নেমে এলাম নিচে। তারপর সন্তর্পণে দরজাটা খুলে বাইরে।

‘ট্রেনে আছও তো সবাই?’ হাঁক ছাড়লেন কন্ডাক্টর। বাব্বাহ, কী গলা! গমগম করে উঠল নিঝুম রাত্রি। ভাবলাম, এক্ষুনি আলো জ্বলে উঠবে বাড়ির ভেতর। আশঙ্কাটা অমূলক, সে রকম কিছুই হলো না।

দৌড় লাগালাম লোকটার দিকে।

‘তুমিও আসছ নাকি?’ সামনে ঝুঁকে জানতে চাইলেন তিনি। গোল ফ্রেমের চশমা ওঁর চোখে। পেল্লায় এক জোড়া গোঁফ ঝুলছে ঠোঁটের ওপর। ছোটখাটো ভুঁড়ি আছে একটা।

‘ক্...কোথায়?’ স্বাভাবিক কৌতূহলে জানতে চাইলাম আমি।

‘নর্থ পোল,’ গর্বের সঙ্গে জবাব দিলেন কন্ডাক্টর।

‘ম্...মানে?’

‘মানে খুব সহজ,’ সহজ গলায়ই বললেন তিনি। ‘এই যে ট্রেনটা...এটার নাম হচ্ছে পোলার এক্সপ্রেস, যাবে উত্তর মেরু।’

ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোক। বুঝতে পারলাম—আমন্ত্রণ। পেছন ফিরে তাকালাম একবার অন্ধকারে ডুবে থাকা বাড়িটার দিকে। কেমন যেন করে উঠল মনের মধ্যে। পরক্ষণে দ্বিধাটুকু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হাত রাখলাম লোকটার হাতে। ট্রেনের কামরায় টেনে তুললেন তিনি আমাকে।

আমারই মতো একগাদা ছেলেমেয়েতে ভর্তি ছিল ভেতরটা। সবারই পরনে পাজামা আর নাইটগাউন। হইহই করে স্বাগত জানাল আমাকে। খুব দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে গেল সবার সঙ্গে।

বড়দিনের গান গাইলাম আমরা। বাদাম দেওয়া ক্যান্ডি খেলাম। পান করলাম চমৎকার স্বাদের ঘন কোকো। ঠিক যেন গলে যাওয়া চকলেট বার।

উত্তর মেরু অভিমুখে সবেগে ছুটে চলেছে পোলার এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটা। বন্ধ কাচের জানালা ভেদ করে দেখতে পাচ্ছি, সাঁই সাঁই করে পিছিয়ে পড়ছে ছোট্ট শহরটা। বিন্দু বিন্দু আলো ঝিকমিক করছে বহুদূরে।

শহর শেষ হয়ে শুরু হলো গ্রাম। শেষ আলোটাও হারিয়ে গেল শিগগিরই। ঠান্ডা, অন্ধকার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ঝমাঝম ছুটছে তখন রেলগাড়ি। শীর্ণ দেহের রাগী নেকড়ের দল ঘুরে বেড়ায় ওই জঙ্গলে। চাঁদের আলোয় চোখে পড়ল, যন্ত্রদানবের তুমুল গর্জনে ভয় পেয়ে সুড়ুত করে লুকিয়ে পড়ছে সাদা খরগোশগুলো।

একপর্যায়ে পর্বতের গা বেয়ে উঠতে আরম্ভ করল ট্রেনটা। এত উঁচুতে উঠে এল যে মনে হতে লাগল, মস্ত চাঁদটাকে ছোঁয়ার ইচ্ছা যান্ত্রিক ওই অজগরটার।

এভাবে এক পর্বত থেকে আরেক পর্বতে উঠল আর নামল। মনে হলো চেপে বসেছি কোনো রোলার কোস্টারে। শেষমেশ উপত্যকা পেরিয়ে ছুটে চলল ওটা দুরন্ত গতিতে। ধু-ধু বরফের মরু অতিক্রম করছে যেন।

একসময় দূরে আবারও দৃশ্যমান হলো আলোক বিন্দু।

‘এসে গেছি,’ একটু পরে ঘোষণা করলেন কন্ডাক্টর।

অদ্ভুত পুলক জাগল মনে। এই তাহলে উত্তর মেরু! দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচুতে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা সুবিশাল চির-তুষারের রাজ্য, যেখানে রয়েছে অজস্র কলকারখানা! ক্রিসমাসের সব খেলনা তৈরি হয় এসব কারখানায়।

ঝাড়ুতে চেপে উড়ন্ত একটা ডাইনিকেও চোখে পড়ল না আকাশের দিকে তাকিয়ে। রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছে ওরা, বললেন কন্ডাক্টর। ওখানেই নাকি বড়দিনের প্রথম উপহারটা বিতরণ করবেন সান্তা।

‘কে...কে...কে পাচ্ছে উপহারটা?!’ সমস্বরে শোর তুললাম আমরা।

‘তোমাদের মধ্যেই একজন,’ মুচকি হেসে আশ্বস্ত করলেন তিনি।

‘দেখো...দেখো...তাকিয়ে দেখো!’ আঙুল দিয়ে বাইরে দেখাল একটা ছেলে।

দূরে, ইতস্তত কিছু ঝাড়ু উড়ছে, দেখতে পেলাম আকাশে। উড়ন্ত ডাইনি!

মেরুরাজ্যের কেন্দ্র যত কাছে আসছিল, ততই কমছিল পোলার এক্সপ্রেসের গতি। ট্রেনের দুপাশ দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম রাস্তাঘাটে ভিড় করা নর্থ পোলবাসীকে।

গুড়ি মেরে এগোতে এগোতে অবশেষে পুরোপুরি থেমে দাঁড়াল যানটা। সবাইকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামলেন কন্ডাক্টর।

ভিড় ঠেলেঠুলে উপস্থিত হলাম বড়, উন্মুক্ত এক গোল জায়গার কিনারায়। কিংবদন্তির স্লেজগাড়িটা চোখের সামনে দেখতে পেয়ে বিচিত্র রোমাঞ্চ জাগল মনে।

আমাদের দেখেই যেন উত্তেজিত হয়ে উঠল গাড়িতে জোতা বল্গা হরিণগুলো। বাপরে বাপ...কী বিরাট একেকটা! আর কী যে সুন্দর! উত্তেজনার চোটে দাঁড়িয়ে গেল সামনের পা জোড়া তুলে। হার্নেসে (যার সাহায্যে গাড়ির সঙ্গে জোতা হয় ঘোড়া) আটকানো রুপালি ঘণ্টাগুলো বেজে উঠল টুনটুন করে। আমাদের বাড়ির দরজায় যে উইন্ডচাইম ঝুলছে, ওটার আওয়াজের মতোই অনেকটা, তবে তার চেয়েও মধুর, জাদুকরী! ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না সেটা।

বৃত্তটার ভেতর জড়ো হওয়া ডাইনিগুলো ডানে-বাঁয়ে সরে গিয়ে রাস্তা তৈরি করল একটা এবং রাস্তাটার দূরপ্রান্তে দেখতে পেলাম সান্তাকে! স্ল্লোগানে মাতোয়ারা ডাইনি বুড়িদের মাঝ দিয়ে হেঁটে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন সান্তাক্লজ।

কাছে এসে চোখ বুলিয়ে নিলেন সবার ওপর। মানুষটা ছোটখাটো। লাল-সাদা ফারের পোশাক পরনে। মাথায় টুপি। বিরাট ভুঁড়িটাকে বাগে আনার চেষ্টা করছে সোনালি বাকলওয়ালা বেল্ট। তুলোর মতো ধবধবে সাদা গোঁফ-দাড়ি, চুল, ভুরু। চশমার ওপাশে চোখ দুটোয় কৌতুকের ছটা। সরাসরি আমার দিকে আঙুল তাক করে বললেন, ‘এই যে...তুমি! চলে এসো এদিকে।’

কথাটা বলেই লাফ দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়লেন বৃদ্ধটি। ঘুরে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। তাঁর আর কন্ডাক্টরের সাহায্যে পা রাখলাম স্বপ্নের স্লেজগাড়িতে।

অলংকরণ: শিখা

নিজের ঊরুর ওপর বসালেন আমাকে সান্তা বুড়ো। স্নেহের স্বরে জানতে চাইলেন, ‘এবার বলো তো, খুকি, বড়দিনের উপহার হিসেবে কী চাই তোমার?’

জানতাম, যেটাই চাই না কেন, পেয়ে যাব উপহার হিসেবে। কিন্তু খুব করে চাইছিলাম যেটা, রুপোর একখানা ঘণ্টি, সান্তার বিরাট ঝোলাটার মধ্যে ছিল না সেটা।

সহূদয় হেসে জড়িয়ে ধরলেন তিনি আমাকে। ডাইনিদের একজনকে নির্দেশ দিলেন হার্নেস থেকে একটা ঘণ্টি খুলে আনতে। এই ডাইনিগুলোর চেহারাসুরত যেমনই হোক না কেন, আসলে তারা কিন্তু খুবই ভালোমানুষ। নানা রকম তুকতাক জানলেও কারও কোনো ক্ষতি করে না।

নির্দেশমতো একটা ঘণ্টি খুলে সান্তার দিকে ছুড়ে দিল বুড়ি। খপ করে ওটা লুফে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন বুড়ো মানুষটা। ঘণ্টি ধরা হাতটা তুলে ধরলেন মাথার ওপর। দরাজ গলায় ঘোষণা করলেন, ‘বড়দিনের প্রথম উপহার!’

স্বপ্নের মতো মনে হলো সবকিছু।

সবাই মিলে আবার ট্রেনে গিয়ে উঠতেই ছেলেমেয়েরা ছেঁকে ধরল আমাকে। ‘দেখি...দেখি...জিনিসটা দেখি!’

হাত ঢোকালাম পকেটে। সঙ্গে সঙ্গে ধড়াস করে লাফ মারল কলজেটা। নেই ওটা! তার বদলে পকেটে আবিষ্কার করলাম একটা ফুটো। ওখান দিয়ে গলে অজান্তে কখন পড়ে গেছে উপহারটা!

কথাটা জানাতেই বাইরে গিয়ে খোঁজার প্রস্তাব দিল সবাই। কপাল খারাপ, তক্ষুনি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠল ট্রেনটা। চলতে আরম্ভ করল। এখন আর নামা যাবে না, বিরস মুখে বললেন কন্ডাক্টর।

একেবারে মুষড়ে পড়লাম উপহারটা হারিয়ে। সারাটা পথ আর কথাই বললাম না কারও সঙ্গে। ট্রেন যখন বাড়ি পৌঁছে দিল আমাকে, বিষণ্ন মনে বিদায় নিলাম সবার কাছ থেকে। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়লাম ওদের উদ্দেশে।

দাঁড়িয়ে আছি, চলন্ত ট্রেন থেকে কী জানি বললেন কন্ডাক্টর। অন্যমনস্ক থাকায় শুনতে পাইনি।

‘কী বললেন, স্যার?’ জানতে চাইলাম চেঁচিয়ে।

‘মেরি ক্রিসমাস!’ ঠোঁটের কাছে হাত জড়ো করে শুভেচ্ছা জানালেন ভদ্রলোক।

তীক্ষ শব্দে বেজে উঠল হুইসেল। ঝিকর-ঝিক...ঝিকর-ঝিক করতে করতে কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেল ট্রেনটা।

সকাল হলো।

আমি আর আমার ছোট বোন অরুণিমা খুলে খুলে দেখছিলাম আমাদের উপহারগুলো। একে একে খোলা হয়ে গেল সব কটা প্যাকেট। অন্তত এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু শেষ একটা ছোট্ট বাক্স আবিষ্কার করল অরুর ক্রিসমাস ট্রিটার পেছনে। বাক্সের গায়ে আমার নাম লেখা। খুলে দেখি, রুপোর একটা ঘণ্টি!

একটা চিরকুট ছিল ওটার সঙ্গে। ওতে লেখা:

স্লেজের সিটের ওপর পেলাম এটা। পকেটের ফুটোটা সারিয়ে নিয়ো, কেমন? —মিস্টার সি.

সি.! তার মানে ক্লজ! সান্তাক্লজ!

আনন্দের আতিশয্যে ঝাঁকি দিলাম ঘণ্টাটা। জলতরঙ্গের সুরে বেজে উঠল ওটা।

মুখ বাঁকাল অরু। ‘এহ্, নষ্ট খেলনা গছিয়ে দিয়েছে!’

নষ্ট খেলনা? বোঝা গেল একটু পরই। ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না অরুণিমা! বাবাকে শোনালাম। মাকে। নিজেরাও ঝাঁকিয়ে দেখলেন হাতে নিয়ে। ওঁরাও রায় দিলেন যে খেলনাটা নষ্ট!

বন্ধুদের শুনিয়েও কোনো লাভ হয়নি। আমি ছাড়া কেউই শোনে না ওই ঘণ্টাধ্বনি! তাজ্জব না?

ঘণ্টাটা এখনো আছে আমার কাছে। ভেবেচিন্তে সহজ ব্যাখ্যাটাই দাঁড় করিয়েছি—সান্তাক্লজের দেখা পেয়েছি বলেই আমার কাছে জীবন্ত ওই ঘণ্টা। পোলার এক্সপ্রেসে আমার সহযাত্রীরাও শুনতে পাবে হয়তো মিষ্টি ওই আওয়াজ। পাবে কি? কে জানে!

বিদেশি কাহিনির ছায়া অবলম্বনে