রাজপুত্রের বায়না

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে এক রাজা ছিলেন। তাঁর ছিল বিশাল বড় সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছিল একটা বড় মন। দেশের মানুষ অনেক সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিল। রাজার ছিল ছোট এক ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই খুব আদরের। কিন্তু হঠাৎ একদিন এক উদ্ভট বায়না ধরল রাজার ছেলে। রাজপুত্রের এই বায়না পূরণ করা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। তার বায়না—সূর্য মানুষকে আলো দেয়। কিন্তু সেই আলোর তাপ সবাইকে অতিষ্ঠ করে তোলে। রোজ সূর্যকে তাপ একটু কমাতে বলে সে। কিন্তু সূর্য তার কোনো কথাই শোনে না। রাজ্যে সুখ-শান্তি আছে, কিন্তু গরমও পড়ছিল প্রচণ্ড। তাই সূর্যকে শাস্তি দিতে চায় রাজপুত্র। এ জন্য আকাশ থেকে পেড়ে এনে দিতে হবে সূর্যটা। তারপর সূর্যকে একটা বাক্সে বন্দী করে রাখবে সে। রাজকুমারের ধারণা, সূর্যকে একটা বয়ামে আটকে রাখলে শুধু বয়ামটা গরম হবে। ভেতরের তাপে একইভাবে গরম হবে সূর্যটা। বদ্ধ জায়গায় নিজের তাপে গরম হলে তখন সূর্য মজাটা বুঝবে!

এই বায়নায় রাজাসহ সমগ্র রাজ্যবাসী চিন্তায় পড়ে গেল। কে জানে কখন কার ওপর আকাশ থেকে সূর্য পেড়ে আনার দায়িত্ব এসে পড়ে। রাজা রাজপুত্রকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু রাজপুত্র তার কথায় অটল।

রাজপুত্র জানাল, তার বায়না পূরণ না হলে সে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেবে। গম্ভীর মুখে সে বলল, ‘বাবা, তুমি তো বলো, বড় হয়ে আমাকে রাজ্য দেখাশোনা করতে হবে। সবার সেবা করতে হবে। আমি তো তা-ই করছি। দেখো না, এই সূর্যটা আমাদের রাজ্যের লোকজনকে কত কষ্ট দেয়? রাজ্যের লোকেরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে ঠিক। কিন্তু তারা কি গরমে কষ্ট পাচ্ছে না?’

রাজপুত্রকে কোনোভাবে বোঝানো গেল না। রানি সারা দিন কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করেন। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা রানির প্রার্থনা শুনলেন। সূর্যকে পেড়ে আনতে কী কী করতে হবে, স্বপ্নে দেখালেন রানিকে।

পরদিন ভোরে সূর্য ওই রাজ্যের অনেক কাছাকাছি নেমে এল। বিশাল একটা মই নিয়ে সূর্যকে পেড়ে আনল রাজপুত্র। তারপর বড় একটা বয়ামে বন্দী করে রাখল সূর্যটাকে। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য অন্ধকারে ডুবে গেল। একি! এ দেখি রাতের থেকেও অন্ধকার! রাতের বেলা চাঁদের আবছা আলো থাকে। রাজ্যের মানুষের আশা, চাঁদ উঠলে আঁধার কাটবে। কিন্তু চাঁদের দেখা নেই। কারণ সূর্য থেকেই চাঁদ আলো পায়। এভাবে বেশ কিছুদিন রাজ্য অন্ধকারে ডুবে থাকার পর রাজকুমার তার ভুল বুঝতে পারল। সে আবার মইয়ে উঠে সূর্যকে মুক্ত করে দিয়ে এল আকাশে। সূর্যও তার নিজের জায়গায় গিয়ে আলো-ঝলমল কিরণ ছড়িয়ে দিতে লাগল। রাজ্যে আবার আলো ফিরে এল। রাজকুমার এবার বুঝল, সূর্য আমাদের কতটা উপকার করে।