শূন্যের দাম

অলংকরণ: জুনায়েদ আজীম

গ্রামের নাম সংখ্যাপুর। সেই গ্রামে এক ছোট্ট বাড়িতে থাকে করিম শূন্য। সে খুব অসহায়। কারণ তার কোনো দামই নেই। একদিন জামাল এক তার বাড়িতে গিয়ে বলল, ‘করিম শূন্য, বাড়িতে আছো কি?’ ভেতর থেকে কথা শোনা গেল। করিম শূন্য বলছে, ‘হ্যাঁ। আছি গো। ভেতরে আসো।’ জামাল এক বলল, ‘কী গো, তোমাকে আজকাল দেখা যায় না। ব্যাপার কী?’ করিম শূন্য বলল, ‘না, তেমন কিছু না। আর বের হয়েই বা কী হবে? আমাকে তো কেউ দাম দেয় না।’ জামাল এক বলল, ‘চলো, আমার সঙ্গে।’

করিম শূন্য বলল, ‘কোথায়?’ জামাল এক বলল, ‘বাইরে আসো। দেখি তোমার দাম না হয় কীভাবে।’ তারা দুজন বাইরে বের হলো। হাঁটতে গিয়ে জামাল এক দেখল যে করিম শূন্য তার আগে আগে হাঁটছে। জামাল এক তার সমস্যা বুঝতে পেরে বলল, ‘তুমি আমার আগে আগে হাঁটছ, তোমার দাম কে দেবে? তুমি আমার পেছনে পেছনে আসো। দেখবে সবাই তোমার দাম দেবে।’

এক আগে এবং শূন্য পেছনে হাঁটতে লাগল। তারা দুজন তারপর গেল রহিম শূন্যের বাড়িতে। জামাল এক বলল, ‘রহিম শূন্য, বাড়িতে আছো কি?’ রহিম শূন্য বলল, ‘আছি গো। ভেতরে আসো।’

জামাল এক বলল, ‘কী গো, তোমাকে আজকাল দেখাই যায় না।’

রহিম শূন্য বলল, ‘বের না হলে কীভাবে দেখা যাবে। তোমাদের দাম আছে, তাই তোমরা সারাক্ষণ ঘুরঘুর করো। আমাদের দাম নেই, তাই আমরা বাইরে যাইও না। যার ফলে আমাদের দেখা যায় না।’

জামাল এক বলল, ‘তাই বুঝি? আমার সঙ্গে বাইরে চলো। আমি দেখতে চাই যে তোমাকে কেউ কেন দাম দেয় না?’ তারা তিনজন হাঁটতে শুরু করল। জামাল এক দেখল যে রহিম শূন্য এক ও শূন্যের আগে হাঁটছে। জামাল এক বলল, ‘তুমি যে আমাদের আগে হাঁটছ তোমাকে দাম দেবে? তুমি আমার ও করিম শূন্যের পেছনে থাকলে সবাই তোমার দাম দেবে।’ তারা এভাবে ১০০ হয়ে হাঁটতে লাগল।

এরপর দেখা গেল, সবাই তাদের দাম দিচ্ছে। করিম ও রহিম শূন্য আনন্দে লাফাতে লাগল। তারা জামাল এককে বলতে লাগল, ‘তোমার জন্য আজ আমরা এত ওপরে। তোমাকে ধন্যবাদ।’

জামাল এক বলল, ‘এখন থেকে আগে আগে নয়, পেছনে পেছনে থাকবে।’

এর পর থেকে সংখ্যাপুর গ্রামে শূন্যের দাম বাড়তে থাকে ও শূন্যরা ধনী হয়ে গেল।