স্টেথিস্কোপ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

অনেকক্ষণ ধরেই স্টেথিস্কোপটা নিয়ে নাড়াচড়া করছিল তনু। সেটা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল একবার। নাহ্, বাবাকে আর দেখা যাচ্ছে না। একটু আগেই বেরিয়ে গেছেন বাবা। তার বাবা ডাক্তার। তনু ঘ্যানঘ্যান করছিল বাবার ডাক্তারি যন্ত্রপাতিগুলো নেওয়ার জন্য। অন্য সময় হলে দিতেন না। কিন্তু আজ দিলেন। জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়ছে কোলে। বেশ আরাম লাগছে। তনু ঘড়ি দেখল একবার, ৯টা ২০ বাজে। অন্য দিন হলে এ সময় স্কুলে থাকত সে। কিন্তু আজ যায়নি। যাবেই বা কী করে? তার যে চিকেন পক্স হয়েছে। স্টেথিস্কোপটা নিয়ে আবার বসল তনু। পুতুলের ঘর থেকে বারবি ডলটাও নিয়ে নিল সে। যন্ত্রটা কানে দিয়ে বারবিটার হার্টবিট শুনতে চেষ্টা করল। নাহ্, শোনা যাচ্ছে না। মা বলেছিল এটা দিয়ে হার্টবিট শোনা যায়। তার মানে পুতুলের হার্টবিট নেই? কী আশ্চর্য! মন খারাপ হয়ে যায় তনুর। কিন্তু না থাকারই তো কথা। এবার নিজের হার্টবিট শোনার চেষ্টা করল সে। কই, না তো, কোনো শব্দ তো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করল আবারও। কোনো লাভ হলো না। আচ্ছা থাক, বারবিটা দিয়ে খেলতে চেষ্টা করল তনু। কিন্তু শরীর খারাপ থাকায় খেলা আর জমল না। এমন সময় দরজায় উঁকি দিল টুম্পা।

‘কিরে টুম্পা, আজ স্কুলে যাসনি?’

‘নাহ্। কেন? তুইও তো যাসনি।’

‘আমার কথা আলাদা। আমার চিকেন পক্স হয়েছে। মুরগি বসন্ত।’

টুম্পা আর তনু বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের বাসাও পাশাপাশি। একজন স্কুলে না গেলে অন্যজনও যায় না। টুম্পার সঙ্গে খেলতে খেলতে প্রশ্ন করল তনু,

‘আচ্ছা টুম্পা, স্টেথিস্কোপ দিয়ে যদি কারও হার্টবিট না শোনা যায়? তাহলে কী হবে?’

‘তাহলে বুঝতে হবে সে মারা গেছে।’

দ্রুত উত্তর দেয় টুম্পা। ধক করে একটা ধাক্কা লাগে তনুর মনে। মানে কী? সে মারা গেছে? তাহলে টুম্পা তাকে দেখছে কেমন করে? একটু আগেই যে মা এসে নাশতা করিয়ে গেল? মাথায় হাজারো প্রশ্ন এসে জমা হয়। তাহলে কি টুম্পা মিথ্যা বলেছে? নাকি সে জানেই না হার্টবিট পাওয়া না গেলে কী হয়? কিন্তু টুম্পা তো ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। প্লে গ্রুপ থেকে ওয়ান পর্যন্ত একবারও সে সেকেন্ড হয়নি। তার তো এ বিষয়ে অজ্ঞ থাকার কথা নয়। তার মানে চিকেন পক্সের জন্য তনু মারা গেছে? হঠাৎ অজানা এক আতঙ্কে কান্না পেল তনুর।

২.

‘তনুর কী অবস্থা?’ ঘরে এসে জুতা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলেন বাবা। ‘ভালো, তবে একটু চুপচাপ লাগছে।’ উত্তর দিলেন মা। তনুর ঘরে ঢুকে বাবা জিজ্ঞেস করলেন,

‘কিরে তনু, চিকেন পক্স হয়েছে বলে মন খারাপ নাকি?’

‘না।...আচ্ছা বাবা, কোনো প্রাণীর হার্টবিট না শোনা গেলে কি বোঝা যাবে যে প্রাণীটা মারা গেছে?’

‘হ্যাঁ, কেন?’

টুম্পা তো ঠিকই বলেছে তাহলে। তার মানে সে আর বেঁচে নেই। খানিকক্ষণ ইতস্তত করে ব্যাপারটা বলেই ফেলল তনু। শুনে বাবা খানিকক্ষণ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর হা হা করে হেসে বললেন, আরে বোকা মেয়ে, আমি তো তোকে নষ্ট স্টেথিস্কোপ দিয়েছিলাম।