হামশাকল

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

দুটি মানুষের চেহারা অনেক সময় মিলে যায়। কখনো কখনো মিল এত বেশি হয়, আলাদা করা মুশকিল।

জাকির হোসেন রোডে বাসা নেওয়ার পর আমি টের পেলাম, এ মহল্লায় আমার চেহারার আরেকটা লোক আছে। একটু–আধটু না, হুবহু আমার চেহারার। আমার মতো খাড়া নাক। আমার মতোই ঘনাদা টাইপ চওড়া কপাল, হালকা কোঁকড়ানো চুল। আর আমার মতো শুকনা, লম্বা সে।

ব্যাপারটা প্রথম বুঝলাম টাউন হলের বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে। দেখি অচেনা মাছওয়ালারা চেনা ভঙ্গিতে মাছ বেছে দিচ্ছে। মুদি দোকানদার জানতে চাইল, আগের বকেয়া টাকাসহ হিসাব করে দেবে কি না।

আমার চেহারার লোক আমি আগেও দেখেছি। আমাকে অন্য একজন ভেবে লোকে ভুল করে পিঠে হাত রেখে কথা বলছে, এ দৃশ্য আমার জন্য নতুন নয়। কিন্তু এবার অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, সেই অন্য লোকটার সঙ্গে আমার চেহারায় শুধু নয়, নামেও মিল। তারও নাম মনিমুল হক।

ব্যাপারটা অবাক করা। কারণ, আমার নামটা আসলে একটা ভুলের ফসল। আমার নাম হওয়ার কথা ছিল মমিনুল হক। ক্লাস ফাইভে রেজিস্ট্রেশনের সময় বানান ভুলে সেটা মনিমুল হক হয়ে গেছে। সেই ভুল আরেকজনের ক্ষেত্রেও একইভাবে ঘটবে, আর সেই লোক দেখতে হবে হুবহু আমার মতো?

কৌতূহলের বশে আমি সেই অপর লোকটাকে খুঁজতে শুরু করলাম। আর খুঁজতে গিয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম। দেখলাম, এ মহল্লায় একটা নয়, আমার দুটা দোসর বা লুক অ্যালাইক বিরাজ করছে। সেই তৃতীয় লোকটার নামও মনিমুল হক।

এ আবিষ্কারের পর আমি দম নিতে চাইলাম। ভাবলাম, পুরো ব্যাপারটা বুঝে দেখা দরকার। আমি যা দেখছি, তা মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়। 

কিন্তু আমাকে দম নিতে দেওয়া হলো না। বিস্ময়ের একের পর এক সারিবদ্ধ ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে গেলাম। সব ধাক্কা শেষে ঠান্ডা মাথায় হিসাব কষে দেখি, এই মহল্লায় আমিসহ মোট পাঁচজন মনিমুল হকের বসবাস। সবাই দেখতে হুবহু আমার মতো। যেন জমজ ভাই, আইডেনটিক্যাল টুইনস।

জগতের কোথাও বড় কোনো কারসাজি, একটা লুকানো ষড়যন্ত্র কল্পনা না করে এ জিনিস হজম করা কঠিন। একই মহল্লায় একই চেহারার সমবয়সী পাঁচটা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে একই নামে, তাদের মধ্যে না আছে রক্তসম্পর্ক, না আছে পরিচয়, কী করে এটা সম্ভব?

আমরা খুব দ্রুতই পরস্পরের পরিচিত হয়ে গেলাম। লক্ষ করলাম, কারোরই খুব বেশি দিন হয়নি এ মহল্লায় আসার। সবচেয়ে পুরোনোজন বছরখানেক ধরে এখানে বসবাস করছেন। আমি নবীনতম।

সবচেয়ে পুরোনোজনের ড্রইংরুমে বসে আমরা পাঁচজন যখন গল্প করছি, তখন হুট করে আমাদের একজন প্রস্তাব দিয়ে বসলেন, চলুন, একটা ক্লাব খুলে ফেলি, মনিমুল হক লুক অ্যালাইক ক্লাব। কথাটা ঠাট্টাচ্ছলে বলা। কিন্তু আমরা সিরিয়াসলি নিলাম। একবাক্যে সবাই রাজি হয়ে গেলাম, যদিও কেউ বুঝতে পারছিলাম না, ক্লাব বানিয়ে আমরা করবটা কী!

আমরা খুব দ্রুতই পরস্পরের পরিচিত হয়ে গেলাম। লক্ষ করলাম, কারোরই খুব বেশি দিন হয়নি এ মহল্লায় আসার। সবচেয়ে পুরোনোজন বছরখানেক ধরে এখানে বসবাস করছেন। আমি নবীনতম।

জাকির হোসেন রোড মিউনিসিপ্যাল মাঠের এক কোনায় পরিত্যক্ত একটা ভবনের দোতলায় এক রুম ভাড়া নেওয়া হলো। সঙ্গে একটা গ্রিল দেওয়া বারান্দা। বারান্দায় বসে নিচে মাঠে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখা যায়।

বারান্দায় টাঙানো হলো আমাদের ক্লাবের সাইনবোর্ড। ক্লাবের নাম ‘হামশাকল’। হিন্দি শব্দ। আসলে ফারসি। অর্থ একই রকম চেহারা। লুক অ্যালাইক। যে মনিমুল হক মহল্লার সবচেয়ে পুরোনো বাসিন্দা, তাঁর পরের জন এ নাম রাখলেন। তিনি হিন্দি সিনেমার ভক্ত, এ কারণে হিন্দি-ফারসি নাম। তাঁর পরের জনের পরের জন আবার বিদেশি নাম রাখার বিপক্ষে। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লুক অ্যালাইকের চলনসই বাংলা পাওয়া গেল না। ফলে হামশাকলই বহাল থাকল।

প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা হামশাকল ক্লাবে জড়ো হই। একমাত্র কক্ষে গোল হয়ে চেয়ার টেনে বসি। মধ্যখানে একটা কনফারেন্স টেবিল। তাতে কফি রাখা থাকে। আমরা কফিতে চুমুক দিতে দিতে গল্প করি। আসবাবহীন কক্ষে আমাদের গলার স্বর ফাঁপা প্রতিধ্বনি তোলে।

গল্পের বিষয়—কেন আমাদের চেহারা একই রকম। দিনের পর দিন আমরা এ নিয়ে আলোচনা করি। ব্যাপারটা উল্টেপাল্টে দেখি। শিগগিরই আমরা একমত হলাম, আসল রহস্যটা মোটেও চেহারা ও নামের মিলের মধ্যে নেই। পৃথিবীতে একই চেহারা ও নামের বহু লোক একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। করছেই হয়তো। কিন্তু তাদের একই সময়ে একই মহল্লায় হাজির করানোর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গুপ্ত ষড়যন্ত্র কাজ করছে। অন্ধ দৈবের বশে এত দূর যাওয়া যায় না।

কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমি বললাম, এটা ষড়যন্ত্র কি না, নিশ্চিত হওয়া যাবে ষষ্ঠ আরেকজন মনিমুল হক এ পাড়ায় উপস্থিত হলে।

তখন আমার চার মাস আগে এ মহল্লায় আসা মনিমুল হক বললেন, ইতিমধ্যে যতটুকু দৈব ঘটে গেছে, তা কি যথেষ্ট নয়?

কথা ঠিক। ষষ্ঠজনের জন্য কেন অপেক্ষা করতে হবে? পাঁচজনই তো যথেষ্ট প্রমাণ।

তবু মনে মনে ষষ্ঠ মনিমুল হকের জন্যে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। প্রতি মাসের এক তারিখে মহল্লায় আসবাববোঝাই কোনো ঠেলাগাড়ি ঢুকতে দেখলেই আমরা তৎপর হয়ে উঠি। খোঁজখবর নিই। গৃহকর্তার চেহারা দেখার চেষ্টা করি।

পরবর্তী ছয় মাসেও নতুন কোনো মনিমুল হক হাজির হলেন না।

আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, দৈবের যে ষড়যন্ত্রই থাক না কেন, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে আমাদের এই পাঁচজনকে দিয়ে। এই পঞ্চপাণ্ডবকে নিয়েই কেউ একজন তার গোপন মহাভারত লিখছে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের চেহারার মিলের ব্যাপারটা পুরো মহল্লায় চাউর হয়ে যেতে বেশি দিন লাগল না। অনেকে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করে গেলেন। রাস্তাঘাটে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে লোকজন। ‘হামশাকল’ ক্লাব নিয়ে পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখিও হলো। দুটি টিভিতে আমাদের নিয়ে স্টোরি গেল। আমরা ইন্টারভিউ দিলাম। আমাদের এক সারিতে বসিয়ে ছবি তোলা হলো।

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

এ মাতামাতি বেশি দিন থাকল না। দ্রুতই সবাই কেমন অভ্যস্ত আর উদাসীন হয়ে যেতে থাকল। আমরা পাঁচ-পাঁচটা লোক যে একই চেহারা নিয়ে একই মহল্লায় বসবাস করছি, এটা যেন তেমন কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। দৈবের বশে এ ঘটনা যেন ঘটতেই পারে।

আমরাও ধীরে ধীরে হতোদ্যম হয়ে যেতে থাকলাম। হামশাকল ক্লাবে বসে কফি খেতে খেতে আমরা গল্প করি। আর অপেক্ষা করি দৈবের গোপন ষড়যন্ত্র কবে উন্মোচিত হবে। কিন্তু কোথাও কোনো লুকানো নীলনকশার আভাস পাই না। কোথাও অস্বাভাবিক কিছুই আর নেই, আমাদের চেহারার মিলটুকু ছাড়া। মনে হয় যেন বিশাল প্রকৃতির কোনো প্রান্তে একটা কোনো প্রকল্প, একটা কোনো পরিকল্পনা একবার হাতে নেওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু সামান্য পথ এগিয়ে সেটা পরিত্যক্ত হয়েছে। বাস্তবায়িত হয়নি। আয়োজনকারীরা ভুলে গেছে। একটা ভবন বানাতে গিয়ে যেন পাইলিংয়ের কাজ শেষে ফেলে রাখা হয়েছে। তারপর তাতে শেওলা জমছে। বৃষ্টির পানি জমছে।

আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। নিজেদের এক বিরাট মহাপরিকল্পনার পরিত্যক্ত মালমসলা হিসেবে গণ্য করতে কিছুতেই মন সায় দেয় না।

প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা পাঁচটা লোক গম্ভীর মুখে বসে থাকি ক্লাবের বারান্দায়। নিচে শিশুরা ক্রিকেট খেলে। তারা এমন তন্ময়ভাবে খেলে, একবার ফিরেও তাকায় না আমাদের দিকে। জীবনটা বড় একঘেয়ে, পানসে লাগে।

তারপর একদিন আমাদের পাঁচজনের কেউ একজন দুম করে টেবিলে এক ঘুষি বসিয়ে দেন। মগ থেকে কফি ছলকে ওঠে। আমরা চমকে উঠি।

ক্রুদ্ধ মনিমুল হক বলেন, এভাবে চলতে পারে না।

আমরা বলি, এভাবে কী চলতে পারে না?

ক্রুদ্ধজন বলেন, আমরা জীবনটা এ রকম একঘেয়ে হতে দিতে পারি না।

কেন আমাদের জীবনটা একঘেয়ে মনে হবে, আর কেনই–বা তা হতে দেওয়া যাবে না, এসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় উঁকি দিল না। আমরা সমস্বরে বললাম, একদম ঠিক। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না।

তখন আমরা ভাবতে বসলাম, কী করা যায়। বিশেষ করে পাঁচটা লোকের এক রকম চেহারা নিয়ে এমন কী করা যায়, যাতে জীবনটা একঘেয়ে হয়ে উঠবে না।

তারপর অনেক দিন পর একদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা সবাই যখন ক্লাবঘরে বসে গুলতানি–আড্ডা দিচ্ছি, ছাদ কাঁপিয়ে হাসছি, তখন দরজায় কড়া নড়ে উঠল।

ঠিক করলাম, আমরা ভূমিকা বদল করব। যেমন ধরা যাক, ৩ নম্বর মনিমুল হকের (মহল্লায় আসার ক্রম অনুযায়ী) ব্যাংকের অফিসে একদিন আমি হাজির হলাম। ঠিক সকাল নয়টায়। ব্যাংক খোলার মুহূর্তে। তারপর গিয়ে বসলাম নির্ধারিত ডেস্কে। ৫ নম্বর মনিমুল হক হওয়া সত্ত্বেও আমি সারাটা দিন ব্যাংকের মধ্যে কাটালাম ৩ নম্বর মনিমুল হক হিসেবে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত স্নায়ুটান উত্তেজনায় কাটল। পইপই করে সবকিছু শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও সারা দিনে ১৪টা বড় বড় ভুল করলাম আমি। সহকর্মীরা বারবার সন্দেহের চোখে তাকাল।

একবার ম্যানেজার ডেকে পাঠালেন। বললেন, আর ইউ ওকে, মনিম?

বললাম, ওকে না, স্যার। ঝামেলা হচ্ছে।

কী ঝামেলা?

সারাক্ষণ মনে হচ্ছে, আমি আর আপনাদের সেই মনিমুল হক নই। আমি আসলে অন্য কেউ।

উদ্বিগ্ন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন ম্যানেজার। বললেন, আপনি আজ ছুটি নেন। প্রেশার মাপেন। দরকার হলে আমি একটা নম্বর দিচ্ছি। আমার বন্ধু। মগবাজারে বসে।

মনোবিজ্ঞানী?

ওই রকম আরকি।

অবশ্যই যাব, স্যার।

ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের ক্লাস সেভেনের অঙ্কের নির্ধারিত ক্লাস নিচ্ছিলেন ৩ নম্বর মনিমুল হক, যিনি ব্যাংকার। পরে শুনেছি, লসাগুর অঙ্ক উনি এমন গুবলেট পাকিয়ে বোর্ডে এঁকেছিলেন যে, হেড মিস এসে তাকিয়ে ছিলেন ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে।

এক বুধবার আমি গেলাম ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কে যোগব্যায়াম কেন্দ্রে প্রাণায়াম শেখাতে। যা শেখালাম, দুজন যোগব্যায়াম শিক্ষার্থী দম আটকে খাবি খেতে লাগল।

এভাবে একেক দিন আমরা একেক রকম জীবন কাটাতে শুরু করলাম। কোনো দিন ব্যাংক কর্মী, কোনো দিন ওয়াসার সেকেন্ড অফিসার, কোনো দিন যোগব্যায়াম ইনস্ট্রাক্টর ইত্যাদি।

একদিন স্টার কাবাবে মাটন বিরিয়ানি খেয়ে বিল দিতে গিয়ে হাঙ্গামা বাধালাম। ওয়েটার বলে, পাঁচ প্লেট বিরিয়ানি খেয়েছি। আমি ম্যানেজারকে বলি, মাথা খারাপ নাকি! একটা লোক পাঁচ প্লেট বিরিয়ানি খেতে পারে!

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

ওয়েটার কসম কেটে ম্যানেজারকে বলে, আমি নিজ চোখে দেখছি, স্যার। এই লোক, খাইতেই আছে, খাইতেই আছে।

ক্যাশের ম্যানেজার ওয়েটারকে বকা দেন, ওই মিয়া, একটা লোক ক্যামনে পাঁচ প্লেট বিরিয়ানি খায়, নিজে খাইয়া দেখা।

এবারকার বিশ্ব এইডস দিবসে হাতিরঝিলে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার পুরোটা জুড়ে সাঁইসাঁই করে দৌড়ে অন্যদের অনেক পেছনে ফেলে প্রথম হলো যে লোকটা, তাঁর নাম মনিমুল হক। সবাই ফিসফিস করে বলাবলি করল, লোকটাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না, সে একটানা এতক্ষণ দৌড়েছে। মনে হচ্ছিল, এইমাত্র নেমেছে, ফ্রেশ।

এভাবে আমাদের জীবনটাকে বৈচিত্র্যময় ও রঙিন করে তুলতে শুরু করলাম আমরা। প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের ক্লাবের কফির টেবিল বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আর গল্পে ভরে যেতে শুরু করল। ছোট্ট, ফাঁকা ক্লাবঘর খিকখিক আর হা হা অট্টহাসিতে কেঁপে উঠতে শুরু করল। প্রকৃতির গুপ্ত কারসাজি উন্মোচনের আর দরকার হয় না আমাদের। বরং ক্লাবঘরে এখন আমরা নতুন নতুন সব গুপ্ত কারসাজির জন্ম দিই।

তারপর অনেক দিন পর একদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা সবাই যখন ক্লাবঘরে বসে গুলতানি–আড্ডা দিচ্ছি, ছাদ কাঁপিয়ে হাসছি, তখন দরজায় কড়া নড়ে উঠল।

সচরাচর আমাদের ক্লাবে কেউ আসে না।

আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখি, মধ্যবয়সী একটা লোক একটু বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। হাফ হাতা শার্ট ঘামে ভেজা। পায়ে চপ্পল। বললেন, কিছু মনে করবেন না, আমি জি-৩২ নম্বর বাসাটা খুঁজে পাচ্ছি না। এ গলিতেই থাকার কথা।

কেন?

আজ সেখানে উঠছি আমি। নতুন ভাড়াটে। ঠেলাগাড়িতে আসবাব আগে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার ভাগনে ইউসূফের সব গুছিয়ে ফেলার কথা। কিন্তু আমি বাসাটাই খুঁজে পাচ্ছি না।

বললাম, পাশের গলিতে চলে যান। তিনটা বিল্ডিং পর চতুর্থ বিল্ডিংটা। গিয়ে হাত–মুখ ধুয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়েই সোজা এখানে চলে আসুন। এটা আমাদের ক্লাব। হামশাকল। এ ক্লাবের ৬ নম্বর সদস্য হিসেবে আপনাকে আমরা স্বাগতম জানাচ্ছি জনাব মনিমুল হক।