(এক স্বপ্নময়ী কিশোরী তেলাপোকার ডায়েরি থেকে)
আমি হেনরোচকুমারী। ককরোচি আমার রাজ্য। বলতে গেলে আমার স্বর্গ। আমার বাবা রাজা দ্বিতীয় পিককরোচ এবং মা পিহেনরোচ। আমাদের প্রাসাদটা একটা মিডল ক্লাস ফ্যামিলির বাসায় অবস্থিত। আমাদের থাকার জন্য অনেক রুম। বাবা-মার, আমার, ককরোচকুমার ভাইয়ার, মন্ত্রী-উজির আংকেলদের একটা করে, আর একটা গেস্টরুম। একটা স্টাডি রুম, একটা আমোদ রুম, বাবার দরবার আর মায়ের সাজঘর। একটা ভোজনাগারও আছে। আমাদের স্বর্গটা স্যাঁতসেঁতে ঘরে মাছের কাঁটা দিয়ে সাজানো। আমি যে রুমে থাকি তার পাশেই আছে রান্নাঘর। ‘পিরোচ’ বংশপরম্পরায় রাজার কনিষ্ঠ সন্তানের কক্ষ অবশ্যই রান্নাঘরের পাশে থাকতে হবে। এটাই নিয়ম। বাবা যখন ছোট ছিলেন, তখন বাবার বাবাকেও (মানে আমার দাদা) এই রুমে থাকতে হতো। দিনের বেলা খাবার জোগাড় করা জীবনের ঝুঁকি হয়ে পড়ে। এই বাড়িতে একটা বদরাগী মেয়ে আছে। কাজের মেয়ে নিশ্চয়। ভুল করে আমি আর মোচু কাকা একবার দিনের বেলা রান্নাঘরে ঢুকলাম। মোচু কাকাকে বাঁচাতে গিয়েই পায়ে একটা বাড়ি খেলাম। ততক্ষণে কোচি, নোচিরা মিলে আমাদের নিয়ে দ্রুত পালাল। বড় বাঁচা বাঁচলাম সেদিন! বদ্যি মামা বাবাকে বললেন তিন সপ্তাহের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। পায়ের ক্ষতটা এখনো সারেনি। রাজপ্রাসাদে আমার অনেক সাথি আছে। ওদের সঙ্গে আমি আনন্দ করি, খেলা করি। একসঙ্গে স্কুলেও যাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তিনজন—কুচি, খুশকা, ভুচি।
আমি ভীষণ ভোজনরসিক। সব ধরনের খাবারই খাই। তবে, বাসি খাবার যেমন: পরোটা, পচা ডিম আর সঙ্গে ঠান্ডা ঠান্ডা চা আমার প্রিয়। আমার টিভি প্রোগ্রাম দেখতে ভালো লাগে। ‘অগি অ্যান্ড দ্য ককরোচেস’ আমার ভীষণ প্রিয়। মানুষেরাও আমাদের থেকে বুদ্ধিশুদ্ধি শেখে! প্রোগ্রামটা অবশ্য বাস্তব না। মানুষেরাই অ্যানিমেশন করে এটা বানিয়েছে। আমাদের প্রাসাদে কোনো টিভি নেই। মিডল ক্লাস ফ্যামিলির তিনটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে ‘শো’টা দেখে। ওরা যখন দেখে, তখন আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, আমিও দুষ্টু ককরোচত্রয়ের মতো দুষ্টু কি না। আমি তখন উত্তর দিই আমি খুব শান্তশিষ্ট ডানাবিশিষ্ট ককরোচ। আমিও কী বোকা! মানুষ কি আমার কথা বুঝবে?