মিশু

মিশু একটি বিড়ালের নাম। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট রাস্তার পাশ থেকে আনা হয়েছিল ওকে। মিশুর বয়স তখন প্রায় ৪ মাস। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের মনে জায়গা করে নিল সে। আগে মিশু থাকত একটা বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে। আমরা ওকে পাপোশ, ঝুড়ি কিংবা জুতার বাক্সতে থাকতে দিলাম। একেক সময় একেক জায়গা পছন্দ হয় ওর। একদিন পরপর নতুন জায়গা খোঁজে। মিশু মূলত বাইরেই থাকে। আমাদের বাসার ভেতরে আসে শুধু খেলার জন্য। মিশু সামনে যেটা পায়, সেটা নিয়েই খেলা শুরু করে দেয়। মনে করো তুমি (যে লেখাটি পড়ছ) চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসে আছ। মিশু তোমার পা নিয়েই খেলা শুরু করে দেবে। পায়ে থাবা দিতে থাকবে। কিংবা শুয়ে পড়ে পা ধরে টানাটানি করবে। আর যদি ওকে মাছের অ্যাকুয়ারিয়ামের সামনে রাখা হয়, তাহলে কাচের মধ্য দিয়েই মাছ ধরার চেষ্টা করবে সে। মিশুর আবার একটা শত্রুও আছে—মুমু (পুতুল)। একবার পুতুলটা নিয়ে খেলছিল মিশু, হঠাৎ ওর নখ পুতুলটিতে আটকে যায়। তারপর থেকে তার পুতুলটার ওপর সে কী রাগ! পুতুলটাকে পেলে সে কামড়াকামড়ি করতে থাকে।

আরেক দিনের ঘটনা। আমরা মাঝেমধ্যেই খাওয়ার পরে রাতে বাইরে হাঁটাহাঁটি করি। মিশুও আমাদের সঙ্গে হাঁটতে যায়। আমাদের পেছন পেছন আসে। আবার মাঝে মাঝে গাছে উঠে পড়ে। আমরা ‘মিশু’ বলে ডাক দিলেই আবার নেমে আসে। সেদিনও আমরা হাঁটতে গিয়েছিলাম। আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে একটা অনেক বড় তেঁতুলগাছ আছে। মিশু সাধারণত ওদিকে যায় না। তেঁতুলগাছটা খুব পছন্দ হলো ওর। গেছো বিড়াল মিশু। গাছ ওর এতটাই পছন্দ যে ভালো কোনো গাছের সন্ধান পেলে ১০ সেকেন্ডে সেখানে উঠে গিয়ে বসে থাকে। ওর বোধ হয় মনে হলো, আজ রাতে তেঁতুলগাছেই থাকতে হবে। গাছে উঠে গেল সে। শত চেষ্টা করেও আমরা ওকে গাছ থেকে নামাতে পারিনি। আমরা ঠিক করলাম, ও রাতে গাছেই থাকুক। সকালে এমনেই চলে আসবে। আমরা বাসায় ফিরে এলাম। সকাল হলো। আমি আর আমার বড় বোন মিশুকে আনতে সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম।

কিন্তু একি! মিশু তো গাছে নেই! আমরা বিস্মিত হয়ে গেলাম। তারপর আশপাশে দেখলাম। নাহ! নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় এসে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এভাবে বেলা ১১টা বেজে গেল। মিশু তো এত দেরি করার পাত্র নয়। ঘুম থেকে সকাল ৮টা অথবা ৯টায় উঠে পড়ে। বাবাও গিয়ে আশপাশে খুঁজে এল। নেই মানে নেই। মিশু কোথাও নেই। এমনকি বাবা মেইন গেটেও (আমরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে থাকি) খুঁজে এলেন। খোঁজ নিলেন যে কেউ কোলে করে নিয়ে গেছে কি না। কিন্তু নাহ্‌! পাওয়া গেল না মিশুর খোজ। পরে আবার বাবা আর আমার বড় বোন গাছের কাছে গিয়ে দেখলেন, গাছে সাদা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। তারপর দেখলেন ওটা আসলে মিশু। গাছে আরামে ঘুমাচ্ছিল বিড়ালটা। আর এদিকে আমরা তাকে পুরো দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। তারপর মিশুকে বাসায় আনা হলো। আচ্ছামতো বকা খেল মিশু। তো এই হলো মিশুর হারানোর ঘটনা। ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো। মিশুর প্রিয় জিনিস হলো টিকটিকি। টিকটিকি দেখার পর মিশুর অনুভূতিটা কেমন ছিল, তা পাশের ছবিতে দেখে নাও!