কত বড়? কত দূর?

এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। হিসাব-নিকাশের জন্য নানা রকম গ্যাজেট পাওয়া যায়। এ ধরনের গ্যাজেটের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় আমরা খুব বেশি চিন্তা করতে চাই না। সমস্যার সমাধান দ্রুত করে ফেলি গ্যাজেটের মাধ্যমেই। ধরো, গ্যাজেট নেই কিংবা কাজ করছে না। তাহলে কী করে আমরা হিসাব-নিকাশ করব, ভেবে দেখেছ? আজ এমন কিছু সমস্যা তুলে ধরব, যেগুলো নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে এবং কয়েকটি সহজ গণনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। এ জন্য কোনো গ্যাজেট ব্যবহার করার দরকার নেই। চলো, তাহলে শুরু করা যাক।

হাত ও পায়ের সাহায্যে পরিমাপ

ধরো, তুমি ভাসতে ভাসতে একটি দ্বীপে এসে উঠেছ। তোমার কাছে জামাকাপড় এবং সামান্য সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নেই। তুমি তোমার এই সম্পদ মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতে চাও। সুতরাং তোমাকে এই দ্বীপে একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যাতে সম্পদ আবার পরে খুঁজে পেতে পারো। তুমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছ, তার থেকে কিছুটা দূরে একটি লম্বা পামগাছ আছে। পামগাছ থেকে কিছুটা দূরে আছে নরম বালু। এখন তোমাকে এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে তুমি বুঝতে পারো এই দ্বীপের কোথায় সম্পদ লুকিয়ে রেখেছ। কাজটি তুমি কীভাবে করবে? চলো, উত্তর জানা যাক। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বিশ্বের প্রথম পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে, অর্থাৎ মানবদেহ। প্রাচীন মিসরীয় এবং রোমানরা এ পদ্ধতিতে পরিমাপ শুরু করেছিল। অর্থাৎ পা মেপে মেপে পথ মাপা। প্রথমে পা মেপে মেপে পামগাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে সম্পদ লুকিয়ে রাখতে হবে। কত পা দূরে লুকিয়ে রেখেছ, সেটা মনে রাখলেই সম্পদ খুঁজে পাওয়া যাবে। অবশ্য এই পদ্ধতিতে একটা সমস্যাও আছে। কারণ, পৃথিবীর সব মানুষের হাঁটার গতি সমান নয়। তা ছাড়া প্রত্যেকের পায়ের সাইজও আলাদা। তাই একজনের পায়ের মাপের সঙ্গে অন্যজনের পায়ের মাপ না-ও মিলতে পারে। অর্থাৎ তোমার ২০ পায়ের সমান অন্যজনের ১৫ বা ২৫ পা হতে পারে।

ছায়া দেখে পরিমাপ

কখনো ভেবে দেখেছ, তোমার বাড়িটি কিংবা পছন্দের গাছটি কতটুকু লম্বা? রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে নিজের ছায়া ব্যবহার করে এটা মাপা খুবই সহজ। সূর্য যখন আকাশে ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকবে, তার ঠিক আগে এটা মাপা সবচেয়ে সহজ।

তোমার যা যা প্রয়োজন হবে:

  • একটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন

  • মাপার জন্য একটি ফিতা

প্রথম ধাপ

গাছের দৈর্ঘ্য মাপার জন্য একটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন বেছে নাও। খেয়াল রাখবে সূর্য যেন তোমার পেছনে থাকে। এবার তুমি মাটিতে শুয়ে পড়ো এবং তোমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছায়ার উচ্চতা মেপে রাখো।

দ্বিতীয় ধাপ

এবার তুমি উঠে দাঁড়াও এবং অপেক্ষা করো। নিজের ছায়াটা ভালো করে লক্ষ করো। সূর্য যখন ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকবে, তখন তোমার এবং তোমার ছায়ার উচ্চতা সমান হবে।

তৃতীয় ধাপ

তুমি যে গাছটির দৈর্ঘ্য মাপতে চাও, তার ছায়া মেপে রাখো। কারণ, সূর্য ৪৫ ডিগ্রিতে এলে গাছের দৈর্ঘ্য এবং ছায়ার দৈর্ঘ্য সমান হয়।

তোমার এবং তোমার ছায়ার দৈর্ঘ্য সমান না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না চাইলেও কোনো সমস্যা নেই। একটি ফিতা দিয়ে তোমার এবং তোমার ছায়ার দৈর্ঘ্যের পার্থক্য হিসাব করে রাখো। ধরো, ছায়ার দৈর্ঘ্য তোমার উচ্চতার তুলনায় অর্ধেক। তাহলে ছায়ার দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ করে দিলেই তোমার উচ্চতার সমান হয়ে যাবে।

বজ্রপাতের দূরত্ব মাপা

ধরো, তুমি আকাশের দিগন্তরেখায় বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলে। তাহলে নিশ্চয়ই বাজ পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু তোমার থেকে কত দূরে বাজ পড়বে? নিচের নিয়মগুলো লক্ষ করলে সেটা তুমি নিজেই খুঁজে বের করতে পারবে।

প্রথম ধাপ

প্রথমত, বজ্রপাতের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবার ভালো করে বজ্রপাতের শব্দ শোনার চেষ্টা করো। বিদ্যুৎ চমকাতে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সেকেন্ড গোনা শুরু করতে হবে। এক, দুই, তিন…। বিদ্যুৎ চমকানোর পর বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে সময় গুনহতে হবে। অবশ্য তোমার হাতে একটি ঘড়ি থাকলে সময় গণনার জন্য সেটাও ব্যবহার করতে পারো।

দ্বিতীয় ধাপ

এবার তোমার গোনা মোট সময়কে ৫ দিয়ে ভাগ করো। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমার থেকে কত মাইল দূরে বজ্রপাত হবে। অবশ্য দূরত্ব কিলোমিটারে বের করতে চাইলে মোট সময়কে ৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে। সুতরাং তুমি যদি মোট ১৫ সেকেন্ড সময় গুণে থাকো, তাহলে বজ্রপাতটি ৩ মাইল বা ৫ কিলোমিটার দূরে পড়বে।

ঘড়ি ছাড়াই সেকেন্ড গণনা করতে চাইলে, নির্দিষ্ট ছন্দে একটি বড় শব্দ উচ্চারণ করতে পারো। অর্থাৎ এমন শব্দ, যা পড়তে এক সেকেন্ড সময় লাগবে। যেমন একটি মিসিসিপি, দুটি মিসিসিপি…। এ ছাড়া শিম্পাঞ্জি, খরগোশ বা এ ধরনের যেকোনো শব্দ ব্যবহার করতে পারো।

পৃথিবীর আকার পরিমাপ

প্রায় দুই হাজার বছর আগে, প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইরাটোস্থেনিস পৃথিবীর আকার পরিমাপ করেছিলেন এবং তিনি প্রায় সঠিকভাবেই পরিমাপ করেছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি কীভাবে পৃথিবীর আকার পরিমাপ করেছিলেন? দেখো তো, এখন তুমি ইরাটোস্থেনিসের মতো পৃথিবীর আকার পরিমাপ করতে পারো কি না!

প্রথম ধাপ

ইরাটোস্থেনিস মিসরের দক্ষিণে সাইনের একটি কূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে কূপের মধ্যে তিনি একটি আলোকরশ্মি দেখতে পেলেন। কূপের পানিতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। বছরে মাত্র একটি দিন দুপুরে এ অবস্থা ঘটে। এটা দেখে ইরাটোস্থেনিস বুঝতে পেরেছিলেন, সূর্য ঠিক মাথার ওপরে আছে।

দ্বিতীয় ধাপ

এরপর ইরাটোস্থেনিস আবিষ্কার করেন যে মিসরের উত্তরে আলেকজান্দ্রিয়ায় গ্রীষ্মের ঠিক মাঝামাঝি একটি দিনে সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে কিছুটা হেলে থাকে এবং মাটিতে ছায়া ফেলে। তিনি একটি ত্রিভুজ এঁকে সেই ছায়া মেপে দেখলেন মাত্র ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন করেছে।

তৃতীয় ধাপ

তুমি নিশ্চয়ই জানো পৃথিবী গোলাকার। তাহলে তুমি দুটি রেখা কল্পনা করো। একটি উল্লম্ব রেখা এবং অন্যটি ৭.২ ডিগ্রি কোণের রেখা। অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত। তুমি নিশ্চয়ই এটাও জানো, একটি বৃত্ত ৩৬০ ডিগ্রি হয়। তাহলে পৃথিবী যেহেতু গোলাকার, তাই ৩৬০ ডিগ্রিকে ৭.২ ডিগ্রি দিয়ে ভাগ করে দাও। এবার তুমি যে ভগ্নাংশ পাবে, সেটা পৃথিবীর এক অংশের পরিধি। সাইন থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার দূরত্ব ৫০০ মাইল (৮০০ কিলোমিটার)। এবার কি তুমি পৃথিবীর পরিধি গণনা করে বের করতে পারবে?

সূত্র: হাও টু বি আ ম্যাথ জিনিয়াস