সত্যিই মানুষের জীবনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায়, যা সে সহজে ভুলতে পারে না। এই যেমন দুই বছর আগের ঘটনাটির কথা খুব মনে পড়ছে।
আমরা তখন থাকি একটি মফস্বল শহরে। শহর থেকে একটু ভেতরের দিকে ছিল আমার বাসাটি। পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের তিনতলায় থাকতাম আমরা। আশপাশে আর তেমন কোনো বড় বিল্ডিং ছিল না। চারপাশ ছিল সবুজ গাছপালায় ঘেরা। আমার অনেক বান্ধবী খাঁচায় পাখি পুষত। তাই আমিও খাঁচায় পাখি পোষার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম। বিষয়টি জানালাম মা–বাবাকে। বাবা বললেন, পাখিকে মুক্ত আকাশে উড়তে দেওয়াই ভালো। আমি আবার বাবার কাছে পাখিদের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। বাবা আমাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত বললেন। যখন আমি জানলাম, পাখি ভাতও খায়, তৎক্ষণাৎ আমার মনে হলো, ‘প্রতিদিন তো অনেক ভাত অপচয় হয় তাহলে তো...’ কালক্ষেপণ না করে বাবাকে আমার প্রস্তাবটা জানালাম। তিনি রাজিও হয়ে গেলেন। বললেন, আগামীকাল খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পাখিদের খাবার দিতে। বাবা আমাকে প্রতিদিন একই সময়ে পাখিদের জন্য খাবার দিতে বললেন। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় গ্রিলহীন বারান্দায় বাইরের পাখির জন্য ভাত রেখে এলাম। সেদিন খুব কমসংখ্যক পাখি এসেছিল। দেখলাম, দিন যত বাড়তে থাকে, পাখির সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। বুলবুলি, শালিক, চড়ুই, দোয়েল—এসব পাখি হয়ে উঠল আমাদের প্রতিদিনের সকালবেলার অতিথি। অ্যালার্ম ঘড়ি বললেও অবশ্য ভুল হবে না। ওরা কখনো দেরি করে আসত না, পারলে সাড়ে পাঁচটারও আগে আসত। এসেই বারান্দার সামনের বৈদ্যুতিক তারে বসে শুরু করে দিত ডাকাডাকি। সকালবেলায় পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকত আমাদের বাসা। ভোরে ঘুম থেকে না উঠলে, ওদের ডাকে ঘুম ভেঙে যেত। ছুটির দিনেও ওরা আমাকে বেশি বেলা করে ঘুমাতে দিত না বলে মাঝেমধ্যে ওদের ওপর রাগও উঠত। তবে যখন ডিসেম্বরের দিকে শীত নেমে এল, তখন দেখলাম, মানুষের মতো ওদেরও শীতকালে সকাল সকাল উঠতে আলসেমি লাগে। ভোর পাঁচটায় আসা পাখিগুলো আসতে লাগল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে। ওদের যখন খাবার দিতে যেতাম, তখন ওরা আমার কাছাকাছি আসতেও দ্বিধা করত না। এভাবে ওদের নিয়ে আমার সকালবেলা ভালোই কাটছিল। ওরা ছিল আমার সকালবেলার বন্ধু, সকালবেলার অ্যালার্ম ঘড়ি।