সৌরজগতের বাইরে থেকে ধেয়ে আসছে নতুন ধূমকেতু
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) নতুন ছবি প্রকাশ করেছে। এসব ছবি একটি বিশেষ ধূমকেতুর। নাম থ্রিআই অ্যাটলাস (3I ATLAS)। এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের অঞ্চল থেকে এসেছে।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে দিয়ে যাবে। যদিও দূরত্ব তখনো অনেক। প্রায় ১৭ কোটি মাইল। মানে, পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণের বেশি।
গত জুনে এই ধূমকেতু আবিষ্কার করা হয়। জুলাইয়ে নিশ্চিত করা হয় যে এটি আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু। এর আগেও এমন দুটি বস্তুর দেখা পাওয়া গেছে। নাম ‘ওউমুয়ামুয়া’ ও ‘বরিসভ’। থ্রিআই অ্যাটলাস সেই তালিকার তৃতীয়। এ কারণে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।
থ্রিআই অ্যাটলাস কয়েক মাস ধরে মহাকাশে ছুটছে। গতি প্রায় প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৩০ হাজার মাইল। এটি গত অক্টোবর মাসে মঙ্গল গ্রহ ও সূর্যের সবচেয়ে কাছ দিয়ে গেছে। সূর্যের তাপে এর বরফ উষ্ণ হয়ে গ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার নাম ‘সাবলিমেশন’। ফলে ধূমকেতুর মাথায় উজ্জ্বল কোমা তৈরি হয়েছে। সূর্যের বিপরীত দিকে তৈরি হয়েছে লম্বা লেজ। তাই এখন থ্রিআই অ্যাটলাস খুবই উজ্জ্বল, সক্রিয়।
নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ধূমকেতুর নতুন ছবি তুলেছে। ছবিতে মাঝখানে একটি উজ্জ্বল সাদা অংশ দেখা যায়। ওটাই ধূমকেতুর মূল অংশ আর কোমা। এ ছবি তোলা হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। তখন পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ছিল প্রায় ১৭ কোটি ৮০ লাখ মাইল।
ইসার ‘JUICE’ মহাকাশযানও একে ক্যামেরাবন্দী করেছে। দুটি সংস্থার ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, থ্রিআই অ্যাটলাস অনেক গ্যাস ও ধুলা ছড়িয়ে চলেছে। সূর্যের তাপই এর কারণ।
গত জুলাইয়ের শুরুর দিককার ছবি ছিল খুব অস্পষ্ট। নীলচে দাগের মতো। কিন্তু গবেষকেরা তখনই আকারের হিসাব করেন। তাঁরা বলেন, এর আকার ৪৪০ মিটার থেকে ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে বড় আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ধূমকেতুর ছবিতে দেখা পাওয়া গ্যাস আর ধুলা সম্পর্কে আরও তথ্য পরে প্রকাশ করা হবে। নতুন তথ্য আসছে। থ্রিআই অ্যাটলাস এখন আমাদের পাশ দিয়ে চলে যাবে মহাশূন্যের অজানা পথে। হয়তো আর কখনোই দেখা যাবে না। তাই এ সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আকাশে আমরা খালি চোখে থ্রিআই অ্যাটলাস দেখতে পাব না। তবে টেলিস্কোপের চোখে ধরা থাকবে বিদায়ী যাত্রা। মহাবিশ্বের দীর্ঘ ভ্রমণে এটি যেন ক্ষণিকের এক অতিথি। তাই থ্রিআই অ্যাটলাসের গল্প বিজ্ঞানীদের কাছে রোমাঞ্চের।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স