বাবা আমাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাননি — শাইখ ইমতিয়াজ

জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছে রংপুরের অধিনায়ক শাইখ ইমতিয়াজ। ১০ ম্যাচে ৩৩ উইকেট ও ২০০ ছুঁই ছুঁই রান করে টুর্নামেন্ট–সেরাও হয়েছে এই ক্রিকেটার। লেগ স্পিনের ঘূর্ণিতে চারবার বাগিয়েছে ৫টি করে উইকেট। ফাইনাল শেষে নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সেদিন পুরস্কার সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিল নবম শ্রেণিপড়ুয়া ইমতিয়াজ! এই খুদে অলরাউন্ডারের সঙ্গে কথা বললেন মাহফুজ রহমান
শাইখ ইমতিয়াজ

প্রশ্ন :

তোমার দল চ্যাম্পিয়ন, তুমি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। কেমন লাগছে?

এটা আমার জীবনের সেরা টুর্নামেন্ট, সেরা জয়। তাই এই আনন্দের তুলনা নেই। খুব ভালো লাগছে। শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল, আমি সবচেয়ে বেশি উইকেট নেব। প্রতিটি ম্যাচে ভালো খেলব, প্রতিটিতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হব, নিজের সেরাটা দেব। এখন মনে হচ্ছে, সেটা পেরেছি। তবে সামনে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।

প্রশ্ন :

স্কুলে কেমন মজা হলো?

টুর্নামেন্টের আগে স্যাররা বলেছিলেন, আমরা চ্যাম্পিয়ন হলে ফুলের মালা পরিয়ে পুরো শহর ঘোরাবেন। সত্যি সত্যিই স্যাররা আমাদের ফুলের মালা পরিয়ে রংপুর শহর ঘুরিয়েছেন। খুব মজা লেগেছে। আসলে স্যাররা আমাদের সব সময় বলতেন, এবার তোরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে আয়, তোরা পারবি।

প্রশ্ন :

তার মানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলে?

হ্যাঁ, আমরা প্রাণপণ পরিশ্রম করেছিলাম, তাই আত্মবিশ্বাস ছিল। প্রথম ম্যাচ থেকেই জেতার জন্য মাঠে নেমেছি। দুই বছর আগের টুর্নামেন্টে আমরা সেমিফাইনালে হেরে গিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। একটা জেদ চেপে গিয়েছিল তখন থেকে।

প্রশ্ন :

সবচেয়ে বেশি উৎসাহ কি স্যাররাই দিয়েছেন?

হ্যাঁ, আমি ক্রিকেট কোচিং করি রংপুর পান্থকুঞ্জ ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখানকার প্রধান কোচ নাজিম আজাদ স্যার ও স্কুলের কোচ নাসির খান স্যার সব সময় উৎসাহ দেন। আর মা–বাবা তো আমাকে বড় ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নই দেখেন।

প্রশ্ন :

ক্রিকেট নিয়ে তাহলে বাড়িতে বকা খেতে হয় না?

একদমই না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকতে বাবাই আমাকে ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে কখনোই ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাননি। এমনকি বাবা আমাকে নিয়মিত ইংরেজিও শেখান। বাবা বলেন, তোমাকে বড় ক্রিকেটার হতে হবে। আর বড় ক্রিকেটার হতে চাইলে ইংরেজি ভালোভাবে রপ্ত করো। আমার মা ও ছোট ভাইও আমাকে সব সময় উৎসাহ দেয়।

প্রশ্ন :

প্রথম ব্যাটটা কি বাবাই কিনে দিয়েছিলেন?

হ্যাঁ। ওই যে রংপুর পান্থকুঞ্জ ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার সময়। এসএস ব্র্যান্ডের ব্যাট ছিল সেটা। রংপুর শহর থেকেই কিনেছিলাম।

প্রশ্ন :

রোজ কতক্ষণ প্র্যাকটিস করো? খেলাধুলা করে পড়াশোনা সামলাও কী করে?

রোজ আড়াই ঘণ্টা প্র্যাকটিস করি। বাবা আমাকে বলেন, ক্রিকেটার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ হতে পড়াশোনা করা দরকার। তাই চেষ্টা করি, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে।

প্রশ্ন :

তোমাকে আর তোমার দলকে গড়ে তোলার পেছনে কার কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

নাজিম স্যার আর নাসির স্যার; তাঁরা না থাকলে আমরা এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। সুজন স্যার, লিমন স্যারও আমাদের জন্য অনেক করেছেন।

প্রশ্ন :

লেগ স্পিন করতে শুরু করলে কবে থেকে?

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি আগে আমি ফাস্ট বলই করতাম। একদিন বৃষ্টি নামলে বাবা বললেন, ‘মাঠ তো ভেজা, লং রানআপে পিছলে পড়ে চোট পেতে পারো। তুমি বরং লেগ স্পিন করো দেখি।’ সেই থেকে লেগ স্পিন করতে শুরু করলাম।

প্রশ্ন :

তোমার চোখে সেরা লেগ স্পিনার কে? কোন তিন ক্রিকেটার সবচেয়ে প্রিয়?

শেন ওয়ার্নের বোলিং আমি ভিডিওতে বারবার দেখি, তবে আফগানিস্তানের রশিদ খানকেই বেশি ভালো লাগে। তাঁর বোলিংয়ে ভেরিয়েশন (বৈচিত্র্য) বেশি। প্রিয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রশিদ খান আছেন, আর আছেন আমাদের মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন।

প্রশ্ন :

ক্রিকেটের বাইরে তোমার কী করতে ভালো লাগে?

সবজির বাগান করতে, মাছ ধরতে আর কবুতর পালতে। একটা সময় আমাদের বাসায় প্রায় ২০ জোড়া কবুতর ছিল।

প্রশ্ন :

তোমার প্রিয় মাঠ কোনটা? কোন মাঠে খেলার স্বপ্ন দেখো?

রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনের মাঠটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। আর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলতে চাই। ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা কী? বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনারের অভাবটা পূরণ করতে চাই এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

প্রশ্ন :

তুমি দলে ঢোকার আগেই কি আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারি না?

হ্যাঁ, অবশ্যই হতে পারি। আমরা দারুণ কিছু করে ফেললে আগামী বিশ্বকাপটা আমাদের হতেই পারে।