পাহাড় প্রিয়, কারণ ওঠা যায়! — মুসা ইব্রাহীম

মুসা ইব্রাহীম, একজন সাহসী অভিযাত্রী। জয় করেছেন সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট, যা বাংলাদেশের হয়ে প্রথম। ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেন শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে। পরবর্তীকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরেকবার মাস্টার্স করেন। কাজ করছেন নিজের প্রতিষ্ঠিত এভারেস্ট একাডেমিতে। তিনি শুধু দুঃসাহসিক অভিযাত্রীই নন, একজন সাংবাদিক, প্রশিক্ষক এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। এভারেস্ট একাডেমিতে তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল কিআর সাক্ষাৎকার দল। সেই দলে ছিল বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুমাইয়া চৌধুরী, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ফারিহা যাহিন, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের আফসানা ঋভূ চৌধুরী, সেন্ট যোসেফ মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ের সাহিব নিহাল এবং ঢাকা কলেজের মাশরিক ফাইয়াজ

প্রশ্ন: আমাদের একেকজনের শৈশব একেক রকম। আপনার শৈশবের সময়টা কেমন ছিল?

মু.ই: আমার শৈশব কেটেছিল পঞ্চগড়ে। সেখানে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছিলাম। ক্লাস ফাইভ থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে পড়েছি। পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় স্পষ্টভাবে। নদীর পাড়ের বালুর ঢিবি যেমন চকচক করে, কাঞ্চনজঙ্ঘাও তেমন চকচক করত। মনে করতাম যে এখানে আমি যেমন গড়াগড়ি খাই, বালুর ঢিবি বানাই, ওখানেও অনেক কাজ করা যাবে। বড় হয়ে জানলাম যে এটা আসলে বালুর ঢিবি না। তারপর ঠাকুরগাঁওয়ে আমাদের বাড়ির কাছে একটি ক্লাবে যেতাম। ক্লাবের পাশে গর্তে সাপ দেখতাম, মৌমাছি ধরতে চাইতাম। আমি প্রকৃতির মধ্যেই বড় হয়েছি।

প্রশ্ন: ছোটবেলায় লেখাপড়ার প্রতি কি আকর্ষণ ছিল?

মু.ই: স্কুলে যেতে ভয় পেতাম (হাসি)। ভয় পেতাম দেখে আমার বাসায় একজনকে রাখা হয়েছিল আমাকে যেন পড়ানো হয়। আমি শুধু একদিন পড়েছি। তারপর আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি (হাসি)।

প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকেই কি দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতি ঝোঁক ছিল? তখন দুরন্ত ছিলেন, না শান্ত ছিলেন?

মু.ই: আমি তো মনে করি যে আমি ও রকম দুরন্ত ছিলাম না। আমার মা বলতেন যে আমি দুরন্ত ছিলাম। আমার বয়স যখন তিন বা তারও কম, তখন আমি আর আমার সমবয়সী আরেকজন, আমরা একদিন ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম। আমরা জানিও না যে উঠলে একবার ফিরে যে আসতে পারব, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের ওই সুগার মিলের একজন গার্ড দেখে কোনোক্রমে ওই ট্রেনের ড্রাইভার বা ট্রেনের পরিচালককে বলে ট্রেনটা থামিয়েছিল। থামিয়ে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। যদি বলো যে ডানপিটে তাহলে ডানপিটে, দুরন্ত যদি বলো তাহলে দুরন্ত ছিলাম।

প্রশ্ন: তখন কি ভেবেছিলেন যে একদিন পাহাড়চূড়ায় আরোহণ করবেন?

মু.ই: না।

প্রশ্ন: আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছাটা হলো কেন? অর্থাৎ পাহাড়ে ওঠার ইচ্ছা কখন, কীভাবে মাথায় এল?

মু.ই: পাহাড় নিয়ে প্রথম চিন্তা করলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে। এইচএসসির পর সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলাম। আমার জানা ছিল না যে সেখানকার প্রকৃতি এত সুন্দর। আমরা সায়েদাবাদ থেকে ‘মিতালী’ বাসে করে যাচ্ছিলাম। সেটা হবিগঞ্জের পাহাড়ের কাছে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেল। আমি বাস থেকে নেমে এক দৌড়ে পাহাড়ের টিলায় গিয়ে হাজির হলাম। ওই পাহাড়ের নেশাটা হয়তো ছিলই আগে থেকে। সিলেটে গিয়ে আমি আরও পাহাড়ে ঘুরলাম। আমার কাছে খুবই ভালো লেগে গেল সিলেট। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে খুঁজতে শুরু করলাম যে কারা পাহাড়ে যায়। এ রকম খুঁজে খুঁজে একজনকে বের করলাম। ইনি হচ্ছেন এনাম তালুকদার। তার পরই ২০০০ সালে মূলত বান্দরবানের পাহাড় দিয়ে শুরু হয় পাহাড়ে ওঠা। সেবারই কেওক্রাডং গেলাম। আরও সুন্দর পাহাড় দেখার জন্য গেলাম অন্নপূর্ণায় ২০০২ সালে। এভাবেই মূলত শুরু।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে পরর্বতারোহনের নানা সরঞ্জামের সঙ্গে কিআ টিমকে পরিকায় করিয়ে দেন মুসা ইব্রাহীম
সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে পরর্বতারোহনের নানা সরঞ্জামের সঙ্গে কিআ টিমকে পরিকায় করিয়ে দেন মুসা ইব্রাহীম

প্রশ্ন: পাহাড়ে ওঠার এই ইচ্ছাটা আপনার পরিবার কীভাবে দেখত?

মু.ই: পরিবার আমাকে যেতে দিতে চায়নি। প্রতি মুহূর্তে এত বিপদ! কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা ছিলাম। মাকে বলেছিলাম ২০১০ সাল পর্যন্ত আমাকে আর কোনো অনুরোধ করা যাবে না। যা কিছু করি, এটা আমি ২০১১ থেকে করব। যখন নাছোড়বান্দা হয়ে গেলাম তখন আর কী বলবে দোয়া করা ছাড়া (হাসি)।

প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে আপনার বাবা-মায়ের স্বপ্ন কী ছিল?

মু.ই: মা চাইত আমি ডাক্তার হই। আর বাবা মনে হয় একবারই বলেছিলেন যে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।

প্রশ্ন: গল্পের বই পড়তেন বা পড়েন? আমাদের দেশের অনেক বাবা-মায়ের ধারণা, গল্পের বই পড়লে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে, এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

মু.ই: হ্যাঁ, অনেক গল্পের বই পড়তাম। আমি পড়তে ভালোবাসি। আর গল্পের বই অবশ্যই পড়তে হবে। তা না হলে অনেক জ্ঞানই লাভ করা সম্ভব হবে না।

প্রশ্ন: ছেলে রায়ীদকেও কি এভারেস্টে পাঠাবেন?

মু.ই: ও যেতে চাইলে যাবে, আমার কোনো সমস্যা নেই। অন্য কিছু করতে চাইলেও করতে পারবে। আর ও এখন থেকেই এভারেস্টে যেতে চায়। আমি দেশে ফেরার পর আমাকে বলল, ‘বাবা, তুমি এভারেস্টে গেলে। আমাকে নিলে না!’

প্রশ্ন: আনিসুল হক স্যারের মতে, আপনি নাকি অনেক বেশি সময় ধরে বক্তৃতা দেন। এ বিষয়ে আপনার কী বলার আছে?

মু.ই: তুমি আমাকে সময় বেঁধে দেবে, আমি সে অনুযায়ী বক্তৃতা দিতে পারব; কোনো সমস্যা নেই। যদি বলো ১০ মিনিটের বক্তৃতা দিতে, সেটাও পারব। তোমাদের কিশোর আলোর প্রকাশনায় আমি মাত্র তিন শব্দে বক্তৃতা শেষ করেছি। আসলে আমার মাথায় বিভিন্ন সময়ের ফরম্যাটে বক্তৃতা তৈরি করা আছে, সে অনুযায়ী বক্তৃতা দিতে পারি (হাসি)।

প্রশ্ন: এভারেস্টের চূড়ায় উঠে প্রথম কার কথা মনে হলো? তখনকার অনুভূতিটা বলেন।

মু.ই: আসলে তখন কারও কথাই মনে হয়নি। শুধু দুটো জিনিস মনে হয়েছিল। এক. চিৎকার করতে ইচ্ছে করছিল। মনে হচ্ছিল সবাইকে জানাতে, ‘দেখো আমি পেরেছি’। আরেকটা যেটা হচ্ছে, মনে হচ্ছিল যদি তখনই উড়ে বাংলাদেশে চলে যেতে পারতাম! কিন্তু সেটা তো সম্ভব না, যে পথ দিয়ে উঠেছি সে পথ দিয়েই নামতে হবে।

প্রশ্ন: আমরা জানি যে চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে আপনার অক্সিজেন পাইপে সমস্যা হচ্ছিল। আবহাওয়াও খারাপ ছিল। এত বিপদের মধ্যে মনে হয়নি কেন এখানে এলাম? না এলেই হতো?

মু.ই: না, এ রকম চিন্তা মাথায় আনিনি। একটা বই পড়েছিলাম আমি,  'Man of Everest' যেটা তেনজিং নোরগের অটোবায়োগ্রাফি। সেখানে জানলাম তিনি সপ্তম চেষ্টায় এভারেস্ট জয় করেছেন। আমি চিন্তা করলাম যে এত কাঠখড় পুড়িয়ে এলাম, আমাকে তো পারতে হবে। আমি মনে করলাম এ সিজনে যদি একজনই এভারেস্ট জয় করে, সেটা হব আমি। আমার জন্য অসম্ভব কিছু না এটা। মানে সব সময় পজিটিভ ছিলাম।

প্রশ্ন: কোনো কষ্টের স্মৃতি আছে?

মু.ই: তেমন কিছু নেই। কেবল পঞ্চম শ্রেণীতে সেকেন্ড গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলাম দেখে তখন একটু কষ্ট পেয়েছিলাম (হাসি)। আরেকটি কষ্টের ব্যাপার ছিল। তা হলো যে ছোটবেলায় আমি পড়তে অনেক পছন্দ করতাম। কিন্তু বই পেতাম না। আমি যেখানে থাকতাম সেখানে তেমন কোনো ভালো লাইব্রেরি ছিল না।

প্রশ্ন: আপনি এভারেস্ট একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। এটি সম্পর্কে কিছু বলেন।

মু.ই: আসলে এভারেস্ট যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে নেই। এভারেস্ট একাডেমির আগে ছিল না। আমাদের করার অনেক কিছু আছে। যেমন সাইক্লিং, ম্যারাথন, সাঁতার, পর্বতারোহণ। সবগুলোর জন্যই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। জন গডার্ড নামের একজন ভদ্রলোক তাঁর ১৫ বছর বয়সে ১২৭টি লক্ষ্য ঠিক করেন। যার মধ্যে ছিল—বিশ্বের ১৮টি পর্বত আরোহণ, নীলনদ একাই পাড়ি দেওয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার সবগুলো খণ্ড পড়া, জেট ফাইটার চালানো ইত্যাদি। এখন তাঁর বয়স ৮০ বছরের বেশি। তিনি ১০৯টি লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। তোমরা তাঁর ওয়েবসাইটে ( www.johngoddord.info) গিয়ে দেখতে পারো। তিনি যদি এক জীবনে এত কিছু করতে পারেন, তাহলে আমরাও কেন আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে থাকব না? সেই লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতেই এভারেস্ট একাডেমি।

প্রশ্ন: আপনার বর্তমান সময় কীভাবে কাটছে?

মু.ই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিম এভারেস্ট নিয়ে এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা করছি। গাছ লাগানো, সাইক্লিং, সাঁতার—এসব নিয়ে কাজ করছি। সেভেন সামিট (৭ মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি পর্বত) জয় করতে চাই, যার মধ্যে তিনটি জয় করা হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মু.ই: কাঞ্চনঙ্ঘায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে চাই। আর রাজনীতিতে আসতে চাই। বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে, ঠিক সে রকমটা না। সৎ লোকদের সঙ্গে নিয়ে নতুন দল করে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করব। তিন শ আসনে যেন তিনশ জন বা তাঁরও বেশি সৎ লোক মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন, সে রকম কিছু করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি তো রাজনীতিতে আগ্রহী, নির্বাচনে জিতলে কী করবেন?

মু.ই: তুমি যদি তোমার ক্লাসের ক্যাপ্টেন হও আর কেউ যদি তোমাকে পছন্দ না করে, তাহলে কিন্তু তুমি টিকে থাকতে পারবে না। কাজেই আমার বিশ্বাস, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। তাই সৎ, শিক্ষিত, ভালো মানুষদের একসঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। যারা দুর্নীতি করবে না এবং দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারবে।

প্রশ্ন: কোনো কিছু পরিবর্তন করার সুযোগ পেলে কী পরিবর্তন করতে চান?

মু. ই.: শিক্ষায় পরিবর্তন করতে চাই। আমি চাই, পড়াশোনার চাপ যেন কমে যায়, কাউকে যেন কোচিং করতে না হয়। আমি চাই, বাংলাদেশের প্রতিটা ছেলে কৃষি সম্পর্কে জানবে, কম্পিউটার সম্পর্কে জানবে, আউটসোর্সিং সম্পর্কে জানবে। শহরের ছেলেরা গ্রামে যেয়ে তাদের জীবনটাও প্রত্যক্ষ করবে, যেন তাদের ব্যবহারিক শিক্ষা হয়। কেননা দেশকে না জেনে ঢাকা শহরে বসে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব না।

২৩ মে, ২০১০ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম
২৩ মে, ২০১০ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম

প্রশ্ন: পাহাড় না সমতল, কোনটা বেশি প্রিয়?

মু.ই: পাহাড় প্রিয়, ওঠা যায়!

প্রশ্ন: উচ্চতাভীতি ছিল কখনো?

মু.ই: ছিল। ২০০২ সালে আমি অন্নপূর্ণায় গিয়েছিলাম, সেখানে নদীর ওপর একটা ব্রিজ পার হওয়ার সময় খুব ভয় লাগছিল। তখনই প্রথম টের পেলাম যে আমার উচ্চতাভীতি আছে। তবে গাইতে গাইতে যেমন, তেমনি পাহাড়ে উঠতে উঠতে আমিও সেই ভীতি দূর করে ফেলেছি।

প্রশ্ন: অসীম নেশা নাকি বিশেষ দক্ষতা, পাহাড় জয়ের জন্য সবচেয়ে দরকার কোনটি?

মু.ই: ইচ্ছা দরকার। তীব্র ইচ্ছা। কারণ এটা একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন: হর্ন ছাড়া ছয় মাস ধরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, এই চিন্তাটা মাথায় এল কী করে?

মু.ই: ইউরোপে ‘মাউন্ট এলবোসো’ আরোহণ করতে গিয়েছিলাম একবার। সেখানে দেখলাম কেউ কখনো হর্ন বাজাচ্ছে না। রাশিয়ার মস্কোতে হর্ন নেই। ওদের দেখেই মূলত আমি অনুপ্রাণিত। কেননা হর্ন বাজিয়ে আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই কোনো লাভ হয় না। হর্ন না বাজালে সতর্ক থাকা হয়। নিজের জন্যও, আবার পথচারীর জন্যও।

প্রশ্ন: আপনাকে সব সময় হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায় এবং আপনার হাসিটাও অনেক সুন্দর। শত ঝামেলার মাঝেও কীভাবে নিজেকে হাসিখুশি রাখেন?

মু.ই: (হাসি) শত ঝামেলা বলতে যখন কোনো বাধা-বিপত্তি আসে, যখন কেউ বলে ‘এহ, এইটা জীবনেও করা সম্ভব না’, তখন তার বোকার মতো কথা শুনে হাসি!

প্রশ্ন: এভারেস্টে খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন?

মু.ই: খাওয়ার ব্যবস্থা ভালোই। আপনি যা খেতে চাইবেন তা-ই দেওয়া হবে, তবে তা ২১ হাজার ফুট পর্যন্ত। তার পরেরটুকু সেলফ সার্ভিস! কেবল বরফ গলিয়ে পানি খেতাম। তারপর...

প্রশ্ন: কোনো কিশোর এসে যদি বলে কখনো উঁচু পর্বত দেখিওনি, কিন্তু এভারেস্টে উঠতে চাই, কীভাবে এভারেস্টে ওঠা সম্ভব হতে পারে?

মু.ই: প্রথমে এভারেস্টে উঠতে হবে (হাসি), আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিশোরদের প্রথমে লেখাপড়া করতে হবে। লেখাপড়া শেষ করে ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রথমে শিক্ষিত হওয়া উচিত।

উঠবে নাকি এমন দেয়াল বেয়ে?
উঠবে নাকি এমন দেয়াল বেয়ে?

প্রশ্ন: পাহাড় ছাড়া আর কোথায় যেতে ভালো লাগে?

মু.ই: পাহাড় ছাড়াও আর সব জায়গাতেই যেতে আমার ভালো লাগে। যেখানে অ্যাডভেঞ্চার আছে সেখানেই।

প্রশ্ন: পর্বতারোহণকে কি পেশা হিসেবে নেওয়া যায়? নাকি এটা নেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই ভালো?

মু.ই: হ্যাঁ, পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। আমাদের দেশে যদিও এখনো এটা পেশা হিসেবে ততটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। কিন্তু নেপাল, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ আরও অনেক দেশে এটি পেশা। তাই এটি শুধু নেশা নয়, পেশায়ও পরিণত করা যায়।

প্রশ্ন: কিশোর, রবিন না মুসা কে বেশি প্রিয়? নিজের নাম মুসা বলে কি মুসা চরিত্রের প্রতি আলাদা কোনো ভালো লাগা ছিল?

মু.ই: তিনজনই প্রিয়। আসলে সবার প্রতি এক ভালো লাগা ছিল।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয়—

মু. ই: লেখক—আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, বুদ্ধদেব গুহ

বই—খোয়াবনামা

মুভি— walk in the clouds

ব্যক্তিত্ব—জিনেদিন জিদান

অভিনেতা-অভিনেত্রী— Tom Hanks

গায়ক-গায়িকা—সায়ান, প্রতুল মুখোপাধ্যায়

গান—আইয়ুব বাচ্চুর সব গান

রং—সবুজ, সাদা-কালো

বেড়ানোর জায়গা—সব জায়গা

অবসরে প্রিয় কাজ—আড্ডা দেওয়া

পোশাক—ক্যাজুয়াল

খেলোয়াড়—ব্রায়ান লারা, হ্যানসি ক্রনিয়ে, মুশফিক, সাকিব