ট্রাম্প কেন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন না?
প্রতিবছর অক্টোবর মাসে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। কে পেল, কেন পেল, আর কে পেল না—এই নিয়েই দুনিয়াজোড়া আলোচনা।
এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকে ভেবেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই হয়তো এবার পুরস্কারটা পেয়ে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পেলেন না।
নরওয়ের নোবেল কমিটি এ বছর শান্তি পুরস্কার দিয়েছে ভেনেজুয়েলার সরকারবিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে। নিজ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মান। আর ট্রাম্পের পুরস্কার পাওয়ার আশা? আপাতত স্বপ্নই থেকে গেল।
ট্রাম্প কিন্তু নিজেকে শান্তির দূত হিসেবেই ভাবতেন। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর সময়ে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছিল—এসবই তাঁর নেতৃত্বে সম্ভব। তাই তাঁর সমর্থকেরা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো ট্রাম্পই নোবেল পাবেন। কিন্তু নোবেল কমিটির চোখে এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না।
নোবেল কমিটি সাধারণত যেসব মানুষ বা সংগঠনকে পুরস্কার দেয়, তাদের কাজ দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী শান্তি আনে এবং মানবতার কল্যাণে বাস্তব প্রভাব ফেলে। ট্রাম্পের উদ্যোগগুলোর অনেকগুলোই ছিল হঠাৎ শুরু হয়ে আবার থেমে যাওয়া ধরনের। অনেকের মতে, তাঁর বক্তব্য ও রাজনৈতিক আচরণে বিভেদ বাড়ে, কমে না। ফলে শান্তির প্রতীক হিসেবে তাঁকে দেখা কঠিন। তা ছাড়া এ বছর মারিয়া কোরিনা মাচাদোর সাহসী ভূমিকা ও মানবিক প্রচেষ্টাই নোবেল কমিটির নজর কেড়ে নেয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধু ট্রফি বা পদক নয়—এটি এমন এক স্বীকৃতি, যা তাঁদের দেওয়া হয়, যাঁরা ঘৃণার বদলে সহানুভূতি, যুদ্ধের বদলে বোঝাপড়া, আর ক্ষমতার বদলে মানবতার পক্ষে দাঁড়ান। তাই পুরস্কার জেতার চেয়ে বড় বিষয় হলো শান্তির জন্য সত্যিকারের কাজ করা।
কৌতূহল কর্নার: নোবেল শান্তি পুরস্কার
নোবেল শান্তি পুরস্কার শুরু কবে?
১৯০১ সালে প্রথম দেওয়া হয়। তখন থেকেই নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
কখনো কেউ পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছেন?
হ্যাঁ। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের লি ডাক থো মার্কিন রাজনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে যৌথভাবে পুরস্কার পান। কিন্তু লে ডাক থো সেটা নিতে অস্বীকার করেন; কারণ, কিসিঞ্জার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছিলেন।
সবচেয়ে কম বয়সে কে পেয়েছেন?
পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি পুরস্কার পান!
সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত জয় কোনটা?
অনেকে বলেন, ১৯৭৩ সালের হেনরি কিসিঞ্জারের নোবেল জয় সবচেয়ে বিতর্কিত ছিল। কেউ কেউ বলেন, ট্রাম্প জিতলে সেটাও হতো সেই তালিকার শীর্ষে!
শেষ কথা
ট্রাম্প বলেছেন, ‘একদিন আমি নোবেল পাবই।’
কিন্তু নোবেল জেতার চেয়ে বড় কাজ হলো দুনিয়ায় শান্তি আনা।
কারণ, যেখানে যুদ্ধ নেই, সেখানেই সবচেয়ে বড় পুরস্কার—মানুষ!