পচা ডিম

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নানা ছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একবার কলকাতার কাছেই এক গ্রামে গেলেন এক ভদ্রলোকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। ভদ্রলোক হরেক পদের খাবার খেতে দিলেন তাঁদের। ছিল ডিমের কালিয়াও। ক্ষিতিমোহন কালিয়াটা খেতে গিয়েও খেলেন না। কারণ পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল ওটা থেকে। কিন্তু অন্যের বাড়িতে মেহমান হওয়ার কিছু ঝামেলা আছে। বিশেষ করে বাঙালি সমাজে। ভদ্রতার ঝামেলা। খাবার খেতে যত খারাপই হোক, ভদ্রতা করে বলতে হয়, খাবার খুব সুস্বাদু, চমৎকার রান্না ইত্যাদি।

ক্ষিতিমোহন পড়লেন বিপদে। ডিমটা যদি না খান, তাহলে অভদ্রতা হয়। যিনি নিমন্ত্রণ করেছেন, তিনি হয়তো অপমান বোধ করতে পারেন। তাই তিনি ব্যাপারটা ছেড়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথের ওপর। যদি দেখেন, রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছেন না, তাহলে তিনিও খাবেন। কবিগুরু যদি না খান, তিনিও খাবেন না।

কিছুক্ষণ পর ক্ষিতিমোহন দেখলেন অবাক কাণ্ড। রবীন্দ্রনাথ একটা পচা ডিম মুখে চালান করে সুড়ুৎ করে গিলে ফেলেছেন! কী আর করা, দেখাদেখি ক্ষিতিমোহনও চোখ–কান বুজে একটা ডিম কোনোমতে খেয়ে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে পেট মোচড় দিতে শুরু করল।

ফেরার পথে ক্ষিতিমোহন রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গুরুদেব, পচা ডিম কী করে খেলেন? আমার তো খাওয়ামাত্র বমি পেয়ে গেছিল।’

রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘ওই ডিম আমি খেয়েছি নাকি! আমার দাড়ির ফাঁক দিয়ে একেবারে জামার ভেতর চালান করে দিয়েছি। এখন এটা বার করতে পারলে বাঁচি!’