ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ ২

অলংকরণ: রাকিব

(ছড়ায় ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ ১ এর পর)

এই দেশে বারবার দস্যুরা এসেছে
আমাদের ধোঁকা দিয়ে খুব ভালোবেসেছে।
বারবার বর্গিরা এসে হানা দিয়েছে
এ দেশের সম্পদ লুট করে নিয়েছে।
তবু এ দেশের লোক বশ্যতা মানেনি
ভয়ভীতি কাকে বলে ওরা সেটা জানেনি।
ভাষার লড়াই থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ
প্রতিরোধ–প্রতিশোধে বাঙালিরা ক্রুদ্ধ।

নৃশংস হানাদার জল্লাদ বাহিনী
লাখে লাখে বাঙালিকে হত্যার কাহিনি
ইতিহাসে লেখা আছে রক্তের হরফে,
পালটা আঘাতও ছিলো আমাদের তরফে।
বাঙালিও দিয়েছিলো সমুচিত শিক্ষা
পরাজিত হয়েছিলো ইয়াহিয়া টিক্কা...

প্রথম আঘাত ভাষার ওপর, ‘বাংলা’ মায়ের বুলি--
বাংলা ভাষার অসম্মানকে কেমন করে ভুলি?
উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার কী হীন কৌশল!

বাংলা আমার মাতৃভূমি, বাংলা আমার ভাষা,
বাংলাদেশকে ঘিরেই আমার স্বপ্ন এবং আশা
প্রিয় ভাষা বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা জানি
একদিনে তা হয়নি এবার সেই ইতিহাস টানি।
এই ভাষারই মান বাঁচাতে প্রাণ দিয়েছে ওঁরা
ওঁদের জন্য প্রভাতফেরি, মিছিল, ফুলের তোড়া।
আমার ভায়ের রক্তে লেখা সেই সে ইতিহাস
ইতিহাসে অমর হলো ফেব্রুয়ারি মাস।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ তখন দুপুরবেলা
পাকিস্তানি দস্যুগুলো খেলল হোলি খেলা।
বাংলাদেশটা তখন ছিল পূর্ব পাকিস্তান
জিন্নাহ সাহেব হঠাৎ এসে গাইল নতুন গান—
উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আর
উর্দু ভাষায় চলবে দেশের সমস্ত কারবার।
এই ঘোষণা শোনার পরে দামাল ছেলের দল
প্রতিবাদে মুখর হয়ে নামায় পথে ঢল।

ঢাকা শহর গর্জে ওঠে স্লোগানে স্লোগানে
ঘাবড়ে গিয়ে শাসক-শোষক নতুন আঘাত হানে।
নিষিদ্ধ হয় মিছিল, মিটিং এবং সমাবেশ
ভাবল ওরা, স্তব্ধ হবে এবার সারা দেশ।
স্বৈরাচারী করল জারি ওয়ান ফোরটি ফোর
থাকবে সবাই ঘরের ভেতর খুলবে না কেউ দোর।
কিন্তু সেটা মানল না কেউ, নামল পথে সবে
আকাশ-বাতাস মুখর হলো ওদের কলরবে
বুকের আগুন জ্বলল দ্বিগুণ জ্বলল ধিকিধিকি
সকল বাধা ছিন্ন করে মিছিল এগোয় ঠিকই।

চলবে...

আরও পড়ুন