পরীক্ষা

অলংকরণ: এস এম রাকিব

আস্তে কথা বলুন প্লিজ, শব্দ করুন আস্তে
এই বাড়িতে আসার কারণ লিখবেন দরখাস্তে—
কার সঙ্গে কী প্রয়োজন উদ্দেশ্য কোনটা?
প্লিজ জানাবেন বিস্তারিত সঠিক প্রয়োজনটা।
বাসায় এখন মার্শাল ল চলছে সর্বত্র
তাকিয়ে দেখুন ফ্লোরে সোফায় ছড়ানো বইপত্র।
বন্ধুরা নয়, টিচার এলেই দরজার লক খুলছে
ওই যে দেখুন নোটিশ বোর্ডে ‘Don’t Disturb’ ঝুলছে।
একটু ভালো ফলের আশায় সতর্কতা বাড়তি
পাশের রুমে প্রবেশ নিষেধ, পড়ছে পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষার্থী খুব ফাঁকিবাজ চাইত না সে পড়তে
ইশকুলে সে যেত কেবল দোলনা-স্লিপার চড়তে।
স্যারের চাপে ক্লাস করেছে সপ্তাহে তিন–চারটা
কোচিংয়ে তার শোচনীয় উপস্থিতির হারটা।
ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন এই ছিল সঙ্গী
এখন ওসব জব্দ বলেই বিদ্যাসাগর–ভঙ্গি।
রোজ সে এখন বন্দী রুমে দিচ্ছে পড়ার চাষটা
সুযোগ দিলেই ফসকে যাবে স্বপ্নের এ প্লাসটা।

দুষ্টু ছেলের পড়ার রুমে শুধুই বইয়ের গন্ধ
পাঠ্য ছাড়া অন্য কিছু এক্কেবারে বন্ধ।
খাওয়ার সময় ঢুকছে কেবল খাদ্য-খানার ডিশটা
ধন্য ছেলের অধ্যবসায় ধৈর্য এবং নিষ্ঠা।
একপ্রকারের শাস্তি এটা, পড়াটা পয়মন্ত
এই শাস্তি চলবে শুধু পরীক্ষা পর্যন্ত।
বাইরে থেকে আসবে না কেউ, বন্ধু, দর্শনার্থী
খুব সাবধান! পাশের রুমে পড়ছে পরীক্ষার্থী।

দুষ্টু ছেলে পড়ছে আহা অপূর্ব তার চেষ্টা
পড়তে থাকো লক্ষ্মীসোনা, রক্ষা করো শেষটা।
পড়তে পড়তে লক্ষ্মীসোনার ফরসা হলো চামড়া
চুল দাড়ি গোঁফ গজিয়ে গেল চোখ দুটো গোল আমড়া।
পড়ার চাপে কমল জ্যোতি, জমল পেটে চর্বি
থামছে না সে, যতই বলো—আর কতক্ষণ পড়বি?

দুষ্টু ছেলে শান্ত এখন, দেখায় নানান যুক্তি
আর মাত্র কদিন বাকি তারপরে তো মুক্তি।
মুক্তি ছাড়া চাইছে না সে পড়ার ইতি টানতে
পরীক্ষা যে স্থগিত পারেনি সে জানতে।