গোঁফ চুরি

সুকুমার রায়ের আঁকা ছবিটি রঙিন করেছেন মাহফুজ রহমান

হেড্ আফিসের বড় বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জান্ত?
দিব্যি ছিলেন খোস্‌মেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা ব’সে ঝিমিঝমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে!
আঁতকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক’রে গোল
হঠাৎ বলেন, “গেলুম গেলুম, আমায় ধ’রে তোল”!
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ বা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, “কামেড় দেবে সাবধানেতে তুলিস্।”
ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক কর্‌ছে ঘোরাঘুরি—
বাবু হাঁকেন, “ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি”!
গোঁফ হারান! আজব কথা! তাও কি হয় সত্যি?
গোঁফ জোড়া ত তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি।
সবাই তাঁরে বুঝিয়ে বলে, সাম্‌নে ধ’রে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না।

রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
“কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি।
“নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
“এমন গোঁফ ত রাখ্ত জানি শ্যামবাবুদের গয়লা।
“এ গোঁফ যদি আমার বলিস কর্‌ব তোদের জবাই”—
এই না ব’লে জরিমানা কল্লেন তিনি সবাই।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়—
“কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায়।
“আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর
“গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর।
“ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধ’রে খুব নাচি,
“মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধ’রে কোদাল দিয়ে চাঁচি।
“গোঁফকে বলে তোমার আমার—গোঁফ কি কারো কেনা?
“গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।”