দুপুরবেলা তোমার পাশে শুয়ে থাকতে বলো।
—কড়া শাসন; তাই বলে কি একটু আমি মানি?
ভানটি করে ঘুমের মাগো ঘাপটি মেরে থাকি।
একটু পরে যেই না দেখি গভীর ঘুমে তুমি
অমনি আমি চুপটি করে বাইরে চলে আসি।
ঘরের থেকে বেরিয়ে আমি ঘুরতে থাকি পাড়া
খাঁ-খাঁ দুপুর আকাশ যেন তাতানো এক তাওয়া
নেইকো হাওয়া, গাছেরা সব এক্কেবারে থির
সবুজ পাতা, গুল্ম-লতা নাচতে গেছে ভুলে
ফাঁসির দড়ি সবাই পরে ঝুলছে যেন ডালে।
ভাল্লাগে কি দেখে এসব? তাই তো সোজা আমি
তরতরিয়ে গাছে উঠেই দেই ঝাঁকিয়ে ডাল
অমনি পাতা-পত্র যত মুখর নেচে ওঠে
গাছে এবং গাছের ডালে গানের ধারা ছোটে।
তারপর মা চালিয়ে দু-পা পুব-দিঘিতে আসি
পাই দেখতে তার সে বুকে ঢেউ নেইকো—থির
কেউ কাটে না সাঁতার তাতে, বিষাদে মুখ কালো
বাতাস যেন দিয়েছে তার সাথে কঠিন আড়ি।
এসব দেখে চুপটি করে থাকতে পারি বলো?
তাই তো আমি ঝপ করে যে ঝাঁপিয়ে পড়ি জলে
ইচ্ছে-খুশি সাঁতার কেটে ঢেউ তুলি মা কত!
আর এদিকে তুমি হঠাৎ ঘুমের থেকে জেগে
যখন দেখো আমি তো নেই তোমার পাশে শুয়ে
তখন তুমি আমায় খোঁজো, গেলাম কোথা আমি?
ঠিক তখুনি হঠাৎ করে দাঁড়াই ঘরে এসে।
চমকে তুমি আমায় দেখে ‘হতচ্ছাড়া’ বলে
মারতে আসো, জিগেস করো, ‘ভর দুপুরের বেলা
কী কাজ ছিল, দুষ্টু পাজি?’ জবাব তুমি চাও।
আমি তখন গাছের ডালে, দিঘির জলে জলে
ঢেউ, ছন্দ তোলার কথা বললে তুমি বলো,
‘অমন কাজে রোদে পোড়ার কি আছে বল মানে?’
আমি তখন বলি তোমার মুখের দিকে চেয়ে,
‘মাগো আমার হঠাৎ করে খারাপ হলে মন
অথবা কেউ আমার সাথে হঠাৎ দিলে আড়ি
আমার মুখে ঘনায় ছায়া, মন বিষাদে ঢাকে
যাই না কোথাও খেলতে আমি, ভাল্লাগে না কিছু;
কিংবা সারা দিন ধরে মা কেবল শুয়ে থাকি।
তখন তুমি আমার কাছে সোহাগ-ভরা মনে
এগিয়ে এসে বলোই নাকি, কী হয়েছে বল্
কী নিবি তুই? হাস্ না সোনা, যা না খেলতে মাঠে;
চুপটি করে থাকলে পরে মন কি ভালো থাকে?’
তোমার মতো আমিও মাগো নিথর কোনো কিছু
দেখতে পেয়ে থির থাকতে একটু পারি নাকো।
তাই তো আমি গাছের থেকে গাছের পরে উঠে
নাচিয়ে দেই ডাল ও পালা, নিথর জলে জলে—
সাঁতার কেটে ছন্দ তুলি হাওয়ার মতো করে।