আমাদের নানাবাড়ি সেই নানুপুর
আশ্বিন মাসে ঝরে সোনা রোদ্দুর,
রোদ্দুরে ফুরফুরে ওড়ে শুধু ঘুড়ি
কার ঘুড়ি কত বড় চলে বাহাদুরি,
ঘুড়িদের কত রং সাদা লাল নীল
ঘুড়িতেই ঢেকে যায় আকাশের নীল,
ঘুড়ি যারা ওড়ায় না তারা কাছাকাছি
কেউবা হাডুডু খেলে কেউ কানামাছি,
একদল ফুটবল আর ডাংগুলি
এসে মেলে হায়দার ঘোষ গাঙ্গুলি
বড়ুয়া আলম মিনু রূপা মনোয়ারা
খেলার ঘোরেই সব ঝিম মাতোয়ারা।
খেলা করে বেলা যায় কাটে সারা দিন
লেখা নেই পড়া নেই বেজায় স্বাধীন,
এ রকম নানাবাড়ি কত যে মধুর
মার কাছে শুনে হই যেতে লোভাতুর।
আমাদের নানাবাড়ি সেই নানুপুর
বাড়ির সামনে আছে একটি পুকুর,
পুকুরেই আছে কত বড় বড় মাছ
সেই মাছ জানে নাকি মনকাড়া নাচ,
শহরের ছেলেমেয়ে যদি কাছে পায়
মাছেরা তাদের ডেকে সাঁতার শেখায়,
জলে নেমে খায় না তো কেউ হাবুডুবু
মাছেরাই দাদা যেন মাছেরাই বুবু,
বর্ষায় মেঘ নামে টাপুরটুপুর
এর মাঝে স্নান করো ঝাপুর-ঝুপুর
কারও কোনো বাধা নেই, নেই তো বারণ
কারণ পেছনে তার একটি কারণ,
নানুপুর ঠিক যেন আনন্দপুর
হাসিখুশি মজা আর গানে ভরপুর।
আমাদের আছে আরও এক মামাবাড়ি
সেখানে গরুর গাড়ি চলে সারি সারি,
মাঘ মাসে মেলা বসে মাইজভান্ডার
মানুষের সঙ্গে আসে পশুপাখি আর—
সার্কাসে হাতি নাচে, ছাতি ধরে বাঘ
ছাগলের হাসি দেখে গাধা করে রাগ,
মেলাজুড়ে সারা বেলা কত খেলা চলে
কেনাবেচা চেনাজানা চলে কৌশলে,
আর চলে একধারে ষাঁড়ের লড়াই
তুফানের বেগে ষাঁড় মারে গুঁতো-ঘাই,
মানুষের উল্লাস আকাশ ছাড়ায়
হঠাত্ তখন ওঠে রব হায় হায়
পালিয়েছে হাত থেকে পাগলা সে মোষ
সাবধান ঢুস দিলে নেই কারও দোষ,
এই শুনে নেই আর কারও মাঝে কেউ
একদিকে ঢলে পড়ে জনতার ঢেউ
ঠেলাঠেলি হাঁসফাঁস প্রাণ যায় যায়
ঢুস খেয়ে কেউ চিত, কেউ চিল্লায়।
এত মজা আনন্দ সেই মামাবাড়ি!
সাধ হয় একবার যেতে যদি পারি!
‘আমাদের নানাবাড়ি যদি নানুপুর
আমাদের মামাবাড়ি তবে কত দূর?’
এই কথা মাকে আজ শুধালাম যেই
দাঁতপাটি বের করে মা তো হাসছেই,
মার হাসি দেখে আমি ভেবেই আকুল
কোথায় কী বিগড়াল, কোথায় কী ভুল,
মাকে বলি, ‘বলে দাও, কোথায় কী গোল’
মা বলে থামিয়ে হাসি, ‘হায় রে পাগল
নানাবাড়ি মামাবাড়ি আলাদা তো নয়
নানার ছেলেই কি না তোর মামা হয়’।
তাই তো তাই তো বলি এমন না হলে
এত সব তুমি কি মা জানতে তাহলে?
নানাবাড়ি মামাবাড়ি এক যদি হবে
বেড়াতে যাওয়াটা খুব সহজই তো তবে।
নানাবাড়ি মামাবাড়ি নয় বহুদূর
চলো যাই এক্ষুনি সেই নানুপুর।
অলংকরণ: তুলি