বঙ্গবন্ধু : আমার শৈশব আমার কৈশোর

ছোটবেলায় আমি ছিলাম গনক

আমার শুধু মনে হতো বঙ্গবন্ধু হবেন জাতির জনক।

আমি কিশোর, এইটুকু এক ছেলে

ছুটে যেতাম কোথাও তিনি যাবেন খবর পেলে।

এইখানে ঐখানে

ধানমন্ডির বত্রিশে আর পল্টন ময়দানে...

সেদিন সাতই মার্চে

রাজনৈতিক মাঠ কী গরম, উত্তেজনা বাড়ছে!

দলে দলে ছুটে গেলাম সক্কলে রেইসকোর্সে

‘জয় বাংলা’ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলাম জোরসে।

লক্ষ লোকের সমাবেশে ছিলাম যেন স্টেইজে

এর চে দামি স্মৃতি আমার এই জীবনে নেই যে।

পঁচিশে মার্চ রাত্রে তিনি হলেন যখন গ্রেফতার

মন কেঁদেছে আর কিছু না মুক্তি চেয়ে স্রেফ তাঁর।

তখন আমি কিশোর, কত ছোট

ইচ্ছে হলেও নিষেধ ছিল পরা মুজিব কোটও।

আমার মনে জাগত তবু বঙ্গবন্ধু হই

কিন্তু সেটা কাকে এবং কেমন করে কই!

যুদ্ধ শুরুর পরে

আর্মি-ভয়ে তাঁর ছবিটা কেউ রাখেনি ঘরে।

একটা ছোট ছবি আমি লুকিয়ে

রেখেছিলাম বাংলা বইয়ের মাঝখানটায় ঢুকিয়ে।

চুপিচুপি দেখতে হতো... মিলিটারির ভয়

মনে মনে বলতাম তাই ‘জয় বাংলার জয়’।

মনে পড়ে বাহাত্তুরের দশই জানুয়ারি

দেখতে গিয়েছিলাম তাঁকে, ভুলতে কি আর পারি?

তেজগাঁ এয়ারপোর্টটা সেদিন লোকে লোকারণ্য

হাজার হাজার মানুষ গেছি তাঁকে দেখার জন্য।

স্বদেশ ফিরে এসেছিলেন সেদিন জাতির পিতা

টগবগে সেই আবেগ স্মৃতি, ভুলতে পারি কি তা!

বঙ্গবন্ধু খোলা ট্রাকে, আমি পাশে দাঁড়িয়ে

যেতে যেতে যাওয়ার পথে তিনি দু হাত নাড়িয়ে...

আমার মনে তখন শুধু বঙ্গবন্ধু হই

সে কথাটা কাকে আমি কেমন করে কই!

আমি তখন কিশোর, কত ছোট

কেউ আমাকে দেয়নি কিনে একটা মুজিব কোটও!