কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, ক্লাস ফাইভ থেকেই শুরু করি। সেবারই মহুয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় আমার। আমার পাশে বসা মেয়েটা তখন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। মহুয়া তাই প্রায়ই উড়ে এসে জুড়ে বসত আমাদের পাশে। তখন থেকেই মোটামুটি ভালো একটা বন্ধুত্ব ছিল আমাদের। টিফিনের ঘণ্টা বাজলেই ক্যানটিনে গিয়ে ফুচকা খেতাম। ভদ্রতার খাতিরেও বলতাম না, ‘তোর একটা ফুচকা কি আমাকে দিবি?’ যে যার প্লেট থেকে নিয়ে নিতাম। আমরা এতই পটরপটর করতাম যে মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত কথা বলার জন্য আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখতেন ক্লাসের আপা। দিন কাটতে কাটতে শেষ পর্যন্ত পিএসসিতে গিয়ে ঠেকল। এখন তো নিজের ইচ্ছামতো যার পাশে ইচ্ছা বসা যাবে না। পরীক্ষা দিচ্ছিলাম খুব ভালো করেই। কী জানি কী একটা হয়ে গেল। আমার আর মহুয়ার সঙ্গে কথা হতো না, দেখাও হতো না ঠিকমতো। পরীক্ষা দিয়েই চলে যেতাম যে যার বাড়ি। পরীক্ষায় আমি গোল্ডেন এ+ পেলাম। কিন্তু কিছুদিন পরই আমার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেল। হাসপাতালে ভর্তি হলাম আমি। অসুস্থতার কারণে স্কুলে যেতে পারলাম না দুই বছর। বন্ধুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও ছিল না। কিছুদিন পর একটু সুস্থ বোধ করায় স্কুলের পরীক্ষাগুলো দিচ্ছিলাম। তখন আবার দেখা মহুয়ার সঙ্গে। আমাকে দেখে হইচই করে লাফাচ্ছিল ও। খুব খুশি। আমিও খুব খুশি হলাম ওকে দেখে। এত দিন পর নিজের বন্ধুদের দেখে খুব ভালো লাগল। পরীক্ষা দিতে যখনই স্কুলে আসতাম, মহুয়া দেখা করত আমার সঙ্গে। এখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। অসুস্থতার কারণে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছি আমি। মহুয়া এখন ক্লাস নাইনে। এক ক্লাস ওপরে বলে মাঝেমধ্যে ‘দিদিগিরিও’ করে আমার ওপর। ভালোই লাগে আমার। ওর ক্লাস এইটের সব বই, খাতা, নোট, গাইড, টেস্ট পেপার ও দিয়ে দিয়েছে আমাকে। পারলে কলম-পেনসিলও দিয়ে দেয় আর কী! সারাক্ষণই পড়ার খুঁটিনাটি বলতে থাকে আমাকে। এখন ও-ই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রতিদিন কথা না বললে তো আমাদের পেটের ভাতই হজম হয় না।
এই ছিল আমার আর মহুয়ার বন্ধুত্বের গল্প। ‘ফ্রেন্ড’ থেকে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হওয়ার গল্প।