নাচ করতে ভীষণ ভালোবাসি

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

বিকেল। গোধূলির আবছা আলো গলে পড়েছে পশ্চিমের জানালা দিয়ে ঘরের শ্বেতপাথরের মেঝেতে, রিহার্সাল রুমের দেয়ালের গায়ে, আমার মসৃণ পায়ে। আমি অত্যন্ত সন্তর্পণে আমার ঘুঙুর দুটো পায়ে বেঁধে নিলাম। নাচ করতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এই পৃথিবীর মানুষকে আমি নাচের ভাষায় আমার মনের কথা বোঝাতে চাই। আমার খুব ইচ্ছে, আমার কাছে থাকা মানুষগুলো আমার অন্তরের ঢেউ তোলা শব্দগুলো শুনুক, চারপাশের ঘুমভাঙানিয়া পাখিগুলো আমার কণ্ঠ শুনতে পাক!

অথচ একটা সময় আমার জীবনেও এই আনন্দ ছিল। যখন আমি ইশারা না করে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম। আমার সাত বছর বয়সে কোনো এক কারণে আমি আমার বাক্‌শক্তি হারাই। তবে অল্পের জন্য শ্রবণশক্তিটা বেঁচে যায়। অর্থাৎ শুনতে পারি কিন্তু অল্প।

আচ্ছা, আমি যে তাদের ইশারা করে কিছু বোঝাতে চাই, তা কি তারা বোঝে? মনে তো হয় না। কারণ, সবাই শুধু আমার সামনে এসে চুপ করে বসে থাকে। আমি কখনোই আমার মনের সূক্ষ্ম অনুভূতির ঢেউগুলো কাউকে বলতে পারি না। তবে গানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শব্দ তরঙ্গ আমার হৃদয়কে আন্দোলিত করে। সেই আন্দোলিত অনুভূতি আমার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। আমার চরণগুলো সেই সুরের মূর্ছনায় নেচে ওঠে। রাত্রে যখন সুন্দর জ্যোৎস্না হয়, নীরবতা গ্রাস করে আমাকে, আমি তখন জানলার ধারে বসে মনের শব্দগুলোর বুনন ঘটাই। তবে সেগুলো কারও কাছে পৌঁছায় না।

মাঝেমধ্যে আমি জানালার পাশের মাঠে বেড়াতে যাই। আমি তখন বাতাস, বাচ্চাদের চিৎকার ও দুরন্তপনা অনুভব করতে পারি। তবু তাদের মতো চিৎকার করে পৃথিবীকে জানান দিতে পারি না আমার অস্তিত্ব।

তবে আমি হারব না। আমার হৃদয়ের এক এক শব্দ মালা হয়ে নৃত্য হয়ে উঠবে। নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি তার বাস্তবায়ন ঘটাব। হঠাৎ মঞ্চে শোনা গেল, ‘লাবণ্য’! আমি ঘুঙুরের শব্দ ঢেউ তুলে দৌড়ে গেলাম মঞ্চে। সারিবদ্ধ দর্শকের হাততালিতে মুখর হয়ে উঠল পরিবেশ। প্রসন্ন চিত্তে আমি মনে মনে বললাম, ‘আজ আমার নৃত্য কথা বলবে, প্রকাশ ঘটবে আমার সব্র আকাঙ্ক্ষার।’

প্রতীতি মৃধা

নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা