ধরা যাক, তুমি একটা সমস্যার সমাধান খুঁজে বেড়াচ্ছ। কিন্তু সারা দিন ধরে আকাশ–পাতাল হাতড়েও সেই সমস্যার সমাধান পেলে না। অগত্যা সেটাকে মাথায় নিয়েই চলে গেলে ঘুমাতে। বিছানায় অনেকক্ষণ এপাশ–ওপাশ করার পর ঠিক যখনই ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি তোমার বাড়িতে ঘুম নিয়ে হাজির, তখনই সমস্যার জট খুলে গেল। মাথায় উঁকি দিল সারা দিন ধরে ভাবতে থাকা সমস্যার সমাধান। এমন ঘটনা কি তোমার সঙ্গে ঘটেছে কখনো? ঘুমের মধ্যেই পেয়ে গেছ চমৎকার সব আইডিয়া?
অনেক যুগান্তকারী আইডিয়াই আসে ঘুমের মধ্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছ কেন এমন হয়?
আসলে ঘুমের মধ্যে কেন এ ধরনের ব্যাপার হয়, এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করেছেন। বেশ কিছু ব্যাপারে জানতে পেরেছেন তাঁরা (ঘুমের মধ্যে নয়)। চলো জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে।
অনেক যুগান্তকারী আইডিয়াই আসে ঘুমের মধ্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছ কেন এমন হয়?
সারা দিন কোনো এক ভাবনা নিয়ে পড়ে থাকলে কিন্তু আমাদের চলে না, পাশাপাশি অন্য অনেক কাজই করতে হয়। ফলে কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি সময় ধরে ভাবার অবকাশ আমরা পাই না, মনোযোগ দিতে হয় অন্য জায়গায়। তাই বলে কি সেই ভাবনা হাওয়াই–মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে যায় বাতাসে? না, মোটেও না। এসব চিন্তাভাবনা চলতে থাকে আমাদের মস্তিষ্কের মূল ভাবনার আড়ালে অবচেতনে। গোলমেলে লাগছে? অবচেতন ভাবনা বলতে কী বোঝায়, তা আরেকটু পরিষ্কার করা যাক। কম্পিউটার বা ফোনের মতো ডিভাইসে আমাদের মূল কাজের পাশাপাশি ‘ব্যাকগ্রাউন্ডে’ও চলতে থাকে নানা কার্যক্রম। তেমনি মস্তিষ্কও মূল ভাবনার পাশাপাশি ভাবতে থাকে আরও অনেক কিছু, যেগুলো আমরা টেরও পাই না! কোনো সমস্যা নিয়ে আমরা ভাবা ছেড়ে দিলেও মস্তিষ্ক তা নিয়ে ভাবতে থাকে। সারা দিন বুদ্বুদের মতো ফুঁসতে থাকা সেই ভাবনাগুলো ডানা মেলার ফুরসত পায় রাতে। যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। অবচেতন অংশ থেকে সেগুলো চলে আসে চোখের সামনে। সারা দিন ধরে এসব ভাবনা নিয়ে মস্তিষ্ক লুকিয়ে কাজ করে গেছে। তাই কাজের খাটনির ফলাফল সে তোমাকে জানাতে ভোলে না। আর জানানোর জন্য বেছে নেয় ঘুমের একটা বিশেষ পর্যায়কে, যাকে বলা হয় ‘হিপনেগজিক স্টেট’। এই সময়ে আমরা ঠিক ঘুমিয়েও পড়ি না, আবার জেগেও থাকি না। অনেকটা আধো ঘুম আধো জাগরণ। সত্যি বলতে, হিপনেগজিক স্টেট একটা রহস্যময় সময়। তখন আমাদের মস্তিষ্ক খুবই অদ্ভুত আচরণ করে। তবে এর সঙ্গে সৃজনশীলতার একটা সম্পর্ক বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। বলা যায়, এই সময়ে হঠাৎই আমাদের মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে সৃজনশীল। খুব দ্রুত সামনে হাজির করে দারুণ সব আইডিয়া কিংবা সমস্যার সমাধান। শুধু আমি–তুমি না, অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গেও এমন হয়েছে (কিংবা এমন হওয়ার পর তাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন)। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় লেখক মেরি শেলির কথা। তিনি কিন্তু জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন–এর প্লট ঘুমের মধ্যেই পেয়েছিলেন।
আশা করি জেনে গেছ কেন ঘুমের মধ্যে আসে সমাধান। তাই এরপর থেকে কোনো কিছু নিয়ে ভাবার দরকার হলে, কিছুক্ষণ বিষয়টা মাথায় নাড়াচাড়া করে ভুলে যাওয়ার ভান করতে পারো, যাতে তোমার হয়ে ভাবার কাজটা মস্তিষ্ক করে দেয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এটা সমস্যা সমাধানের একটা কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।
ও, আরও একটা কথা। যদি ভেবে থাকো, সারা রাত ঘুমের সঙ্গে আইডিয়া আসতেই থাকবে, আসতেই থাকবে, তাহলে কিন্তু ভুল করছ! ঘটনাটা শুধু হিপনেগজিক স্টেটেই ঘটে। আর এই স্টেট খুব বেশিক্ষণ থাকে না। কারণ, এর পরপরই আমরা গভীর ঘুমে ডুবে যাই, আর সকালে বেমালুম ভুলে যাই চমৎকার আইডিয়াগুলো। তাই এরপর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথার পাশে কাগজ–কলম রাখতে ভুলো না যেন।