তুমি কতটা মোবাইলে আসক্ত

অলংকরণ: আরাফাত করিম
ধরো, তোমার হাত ব্যথা করছে। মাকে গিয়ে বললে। অমনি মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, ‘সারা দিন মোবাইল নিয়ে থাকলে তো হাতব্যথা করবেই।’ আবার ধরো, তোমার পড়ায় মন বসছে না। সেটা মা টের পেয়ে একই মন্তব্য করলেন, ‘সারা দিন মোবাইল নিয়ে থাকলে তো এমন হবেই।’ ব্যাপারটা এমন, বাসায় একটা কাচের প্লেট ভাঙলেও তোমার মা সেটার সঙ্গে তোমার মোবাইল ব্যবহারের সম্পৃক্ততা বের করে ফেলেন, ‘ওর তো কোনো দিকে ধ্যান নাই, সব মন তো মোবাইলে। তাই তো প্লেট ভাঙল। পারলে তো মোবাইলের মধ্যেই ঢুকে যায়।’ অথচ প্লেটটা তুমি ভাঙোনি, ভেঙেছে তোমার ছোট ভাই। কিন্তু অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে তোমার এ ধরনের যাতনা প্রায়ই সহ্য করতে হয়। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন যাচাই করে ফেলো তোমার মোবাইলে আসক্তি রয়েছে কি না। ঝটপট করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও আর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও তুমি কতটা মোবাইলে আসক্ত!

১. অবসর সময় তুমি যেভাবে কাটাও—

ক. হাতে একটা ফোন থাকলে আমার সময়ের খেয়াল থাকে না। তাই কখন অবসর আসে আর যায়, আমার হিসাব থাকে না।
খ. বই পড়ে বা ঘুমিয়ে কাটাই। মোবাইল থেকে একশ হাত দূরে থাকি।
গ. ঠিক নেই। কখনো ফোন নিয়ে, আবার কখনো টিভি বা মুভি দেখে কাটে।

২. বাইরে বের হয়েছ। খেয়াল করলে মোবাইল সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছ। কী করবে?

ক. যদি দেখি বাসা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি, আর খুব একটা প্রয়োজন নেই, তাহলে মোবাইল ছাড়াই যেখানে যাওয়ার সেখানে যাব।
খ. মোবাইল ছাড়া বের হব আমি? এই ভুল তো আমার হতেই পারে না! তবু যদি হয়েই যায়, তাহলে প্রথমে আতঙ্কিত হব। তারপর দৌড়ে যাব বাসায়, ফোন আনতে।
গ. এটা কোনো ব্যাপার? মোবাইল ছাড়াই আসলে আমি বেশির ভাগ সময় ঘোরাঘুরি করি।

৩. নিচের যে অভ্যাসটি তোমার সঙ্গে যায়—

ক. ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে ওঠার পর মোবাইল থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা এবং ঠিক সময় ঘুমিয়ে পড়া।
খ. মাঝেমধ্যে ফোন ব্যবহার করতে করতে ঘুমাই। আবার অনেক সময় ফোন আফ্রিকায় না কোরিয়ায় থাকে, সে খেয়ালও থাকে না।
গ. দিনের শুরুও হয় ফোন দিয়ে, শেষও হয় সেভাবেই। ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে ওঠার পরে সবার আগে ফোন দেখি। নইলে তো দিনটা শুরুই হবে না আমার!

৪. বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছ। তোমার ফোন যেখানে থাকবে—

ক. প্রথমে সেলফি তুলব, এরপর সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করব। এরপর সেখানে কে কী কমেন্ট করছে, সেটা দেখব। এভাবেই অর্ধেক সময় চলে যাবে।
খ. সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বসে থাকব না, কিন্তু মাঝেমধ্যেই চেক করব।
গ. ফোন? সেটা আবার কী? বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মানে আড্ডাই। সেটার মধ্যে ফোনটোনকে পাত্তা দিই না।

৫. তোমাকে খুব সুন্দর একটি জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত খরচ, টাকাপয়সা, খাবার—সব দেওয়া হবে তোমাকে। কিন্তু শর্ত একটাই, তুমি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস; বিশেষত, ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। এ ব্যাপারে তোমার মন্তব্য—

ক. এক পায়ে খাড়া বলে একটা কথা আছে। আমি আসলে তার চেয়ে দুই ডিগ্রি ওপরে। রাজি না হওয়ার কোনো কারণ তো দেখি না। একদম স্বপ্নের মতো সুযোগ।
খ. মোবাইল সঙ্গে না থাকলে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করব কীভাবে? কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেব কীভাবে? নাহ্‌, ফোন ছাড়া আমার চলেই না। শর্তে রাজি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
গ. সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া থাকাটা মুশকিল। বাসার সবাইকে নিজের আপডেট জানানোর জন্য হলেও তো মোবাইল ব্যবহার জরুরি। তাই ভেবে দেখব।

৬. তোমার ফোনের ব্যাটারি সব সময় যেখানে থাকে—

ক. পারলে তো মাইনাস লেভেলে নেমে থাকে। কারণ, সারাক্ষণই ব্যবহার করতে থাকি। অনেক সময় চার্জারে যুক্ত রেখেই ফোন চালাতে থাকি।
খ. মাঝামাঝি থাকে। কখনোই ফুরিয়ে যায় না। কারণ, কাজ ছাড়া খুব কম সময় ফোন ব্যবহার করি আমি।
গ. সব সময়ই ফুল চার্জ। কারণ, ফোন তো আমি ব্যবহারই করি না।

৭. ফোন ছাড়া তুমি সর্বোচ্চ কতক্ষণ থাকতে পারবে?

ক. ফোন ছাড়া আমাকে থাকতে হবে কেন? এক সেকেন্ডও থাকতে চাই না।
খ. আমি তো ফোন ছাড়াই থাকি। প্রশ্নটা হওয়া দরকার, ফোন নিয়ে কতক্ষণ টিকতে পারব। বড়জোর মিনিট দশেক!
গ. হিসাব তো করি না, কিন্তু দিনে তিন-চার ঘণ্টা ব্যবহার করি। কাজেই বাকি সময়টা ফোন ছাড়াই থাকতে পারব।

৮. কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে যে মাধ্যমটি তোমার সবচেয়ে প্রিয়—

ক.সরাসরি দেখা করা! দেখা হবে, চা খেতে খেতে আড্ডা দেব, তবেই না জমবে।
খ.যখন যেটা দরকার হয়। কখনো ফোনেই চালিয়ে নিই, কখনো সাক্ষাতে।
গ. ইয়ে মানে, যোগাযোগপ্রযুক্তির এত ভালো অবস্থা। যেখানে ফোনেই কাজ চালানো যায়, সেখানে সরাসরি যোগাযোগ করার কী দরকার? অবশ্যই মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলে নেব।

৯. অনেকেই মনে করে, স্মার্টফোন বা মোবাইল ফোন না থাকলেই দুনিয়াটা বেশি ভালো হতো। মানুষ নিজেকে মুঠোফোনে আবদ্ধ করে ফেলছে। এই ধারণার ব্যাপারে তোমার প্রতিক্রিয়া কী?

ক. ওকে বুমার! যারা পিছিয়ে থাকতে চায়, তারাই এমনটা ভাবে। হাতের মুঠোয় সব এনে দিয়েছে মোবাইল, তবু ভাল্লাগছে না?
খ. ব্যাপারটার সঙ্গে আংশিক একমত। যোগাযোগের জন্য ফোন প্রয়োজন, তবে সব কাজ ফেলে শুধু মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকাটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
গ. সহমত ভাই। একদম ঠিক কথা। এই মোবাইলই তো জেনারেশনটাকে শেষ করে দিচ্ছে।

১০. তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছ। এমন সময় তোমার ফোনে টিং টিং শব্দ হলো, নোটিফিকেশনের। তুমি যা করবে—

ক. আগে কাজ, তারপর সব। অবশ্য ফোন বেজেছে, এটা খেয়ালই করব না।
খ. ফোন দেখব। যদি কিছু জরুরি ব্যাপার হয়, তবে সেটাকে প্রাধান্য দেব। নয়তো কাজে মন দেব আবার।
গ. সঙ্গে সঙ্গে ফোন নেব। এরপর ফোন নিয়েই দুই ঘণ্টা পার করে দেব, কাজের কথা বেমালুম ভুলে।

নম্বর

১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
২. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৩. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৪. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০  
৫. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫ 
৬. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০ 
৭. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৮. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৯. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
১০. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: তোমার শত্রুকে পেয়ে গিয়েছি! মোবাইল! হ্যাঁ, যেন তোমার দুই চোখের বিষ। তুমি মোবাইল থেকে এতটাই দূরে থাকো যে, তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করাটাই অনেক সময় মুশকিল হয়ে যায়। আবার অন্য কেউ ফোন ব্যবহার করছে মানেই ‘গেল গেল উচ্ছন্নে গেল’ ভাবাটাও কিন্তু ঠিক নয়। তোমাকে দৈনন্দিন জীবনে মোবাইলের ভূমিকা বিষয়ক রচনা আর বললাম না। তবে তুমি যদি নিয়ন্ত্রণ রেখে গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে মোবাইল ব্যবহার করতে পারো, তবে সেটা কিন্তু দোষের না।

৪৫–৭০: তুমি মোবাইলটা কাজের জন্যই ব্যবহার করো। তুমি জানো, কতটুকু সময় ব্যবহার করা দরকার, আর কখন সেটা রেখে পড়ায় মন দিতে হবে। যদিও অনেক দিন এমন কাটে, যখন তুমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন নিয়েই পড়ে থাকো। আর তারপর কাজ ফেলে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকায় নিজেকেই গালাগাল দাও। মাঝেমধ্যে এমনটা হতেই পারে, তবে সতর্ক থাকতে ক্ষতি কী বলো? তাই ফোন ব্যবহারে আরও নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করো।

৭৫-১০০: বলো তো, প্রথম মোবাইল আবিষ্কার করেন কে? নাহ্‌, তোমার সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়ার উদ্দেশে জিজ্ঞেস করিনি। আসলে, যেই মহান ব্যক্তি মোবাইল আবিষ্কার করেছিলেন, তিনিও বোধ হয় এত বেশি মোবাইলে নাক ডুবিয়ে থাকতেন না। তোমার আম্মু যদি বলে থাকেন যে, তুমি পারলে মোবাইলের মধ্যেই ঢুকে যাও, ব্যাপারটা কিন্তু ভুল নয়। তুমি আক্ষরিক অর্থেই মোবাইলের জগতে আটকে যাচ্ছ। এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে নিজেকে সময় দাও। বই পড়ো। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো। জানো তো, মোবাইল ব্যবহার করাই জীবন উপভোগ করার একমাত্র উপায় নয়।