শীতকাল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো

শীতের সময় আমাদের মনে হয় গরমই ভালো। আবার গরমের সময় মনে হয় ঠিক উল্টোটা, ভালো লাগে শীত। দেশে এখন প্রচণ্ড শীত। তাই মনে প্রশ্ন আসে, কবে দূর হবে শীত? আমরা অনেকেই মাঝেমধ্যে শীত ও গ্রীষ্ম নিয়ে রীতিমতো তর্ক-বিতর্ক শুরু করি। বিজ্ঞের মতো খাড়া করি যুক্তি। যার যুক্তির জোড় বেশি, দিন শেষে সে-ই জেতে। সে যুক্তি হতে পারে শীতের পক্ষে বা বিপক্ষে। কিন্তু আসলে আমাদের জন্য কোন ঋতুটা ভালো? এ শীতে হয়তো প্রশ্নটা এসেছে তোমার মাথায়ও। তর্কযোগ্য এ প্রশ্নের উত্তরে জয়ী হতে পারে শীত, গ্রীষ্ম যেকোনো ঋতুই। তবে এখন যেহেতু চলছে শীতের মৌসুম, তাই শীতকাল স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ভালো, সেটাই জানা যাক।

এ মুহূর্তে শীতে কাবু হয়ে গেলেও স্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু শীতকাল বেশ উপকারী। যেমন, ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২০১৭ সালে এ ব্যাপারে একটি গবেষণা করেছেন। কিছু মানুষকে জ্ঞানভিত্তিক কয়েকটি কাজ করতে বলেন তাঁরা। যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া বা মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করা। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে কাজ করার সময় বেশি আবেগী না হয়ে কাজটা ঠিকঠাকভাবে করেন অংশগ্রহণকারীরা। আরও দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে জটিল কাজ করার ঝোঁক থাকে বেশি। এর পেছনেও আছে বিজ্ঞান। মূলত মস্তিষ্কের কাজ করার জন্য দরকার গ্লুকোজ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর প্রচুর গ্লুকোজ ব্যবহার করে। কারণ, পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি থাকে। শীতকালে যেহেতু তাপমাত্রা এমনিতেই কম থাকে, তাই শরীরে গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয় কম। ফলে মস্তিষ্ক বেশি গ্লুকোজ ব্যবহারের সুযোগ পায়।

শীতকালে আমাদের বেশি ক্যালরি খরচ হয়। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এ ঋতুতে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ জন মানুষের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ৩৪ শতাংশ মানুষ বেশি ক্যালরি খরচ করে। সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, শীতকালে ক্যালরি খরচ হয় তার চেয়ে বেশি। যাঁরা স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, তাঁদের জন্য শীতকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করলে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, শীতকালে সেই পরিমাণ ক্যালরি খরচ করতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে ঠান্ডা আবহাওয়া। কারণ, শরীর যথেষ্ট গরম রাখতে ক্যালরি খরচ হয়। শীতকালে রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শোষণে সহায়তা করে। এ ছাড়া অ্যালার্জি উপশমেও সাহায্য করে ঠান্ডা আবহাওয়া। অনেকের গাছ, ঘাস বা আগাছা থেকে অ্যালার্জি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকায় পরাগায়ন কম হয়। গাছপালা বা ঘাসও হয় কম। ফলে কমতে পারে অ্যালার্জির সমস্যা।

ভালো ঘুমের জন্য শীতের বিকল্প নেই। ঠান্ডার কারণে শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ফলে চোখজুড়ে ঘুম আসতে আর সময় লাগে না। ভালো ঘুমের কারণেই শীতকালে তুলনামূলক জটিল কাজ করতে পারে মস্তিষ্ক।

রোগ প্রতিরোধেও ঠান্ডা আবহাওয়া সহায়তা করে। এটা ঠিক, শীতকালে আরও বেশি ভাইরাসের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরও বেশি সক্রিয় থাকে। এ ছাড়া আঘাত লাগলে যেমন শীতকালে বেশি ব্যথা লাগে, তেমনি আঘাত ভালোও হয় দ্রুত।

আমাদের হৃদয়কে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে শীতকাল। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য আমাদের হৃদ্‌যন্ত্র আরও বেশি পরিশ্রম করে। এতে আরও বেশি শক্তিশালী হয় আমাদের হৃদ্‌পেশিগুলো। শীতকালে ব্যায়াম করারও একটা সুবিধা আছে। গরমের সময় আপনি যতটুকু হাঁটতে বা দৌড়াতে পারবেন, শীতকালে একবার ব্যায়াম করার পর তার চেয়ে বেশি দৌড়াতে পারবেন।

ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমরা বাসা থেকে কম বের হই। অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যাই না সাধারণত। ফলে পরিবারের সঙ্গে অনেক সময় কাটানো যায়। এতে আমাদের অবসাদ কমে। মানসিকভাবে আরও বেশি চাঙা থাকা যায়। শীতকালে খিদে বেড়ে যায়। ফলে ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করলে কমতে পারে পুষ্টির অভাব।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট