আমরা বিশ্বনেতাদের বলেছি, আপনারা ভুল পথে যাচ্ছেন
আজ থেকে ছয় বছর আগে কথা। ২০১৯ সালের আগস্ট মাস। আমার বয়স তখন ১৩ বছর। একজন কিশোরী হিসেবে আমি গ্রেটা থুনবার্গের ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেদিনই পৃথিবীকে রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। তার পর থেকে এর সঙ্গেই আছি।
এই পুরো সময়ে আমি ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু-স্বাস্থ্য অ্যাম্বাসেডরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কাজ করেছি। আমি চেয়েছি জলবায়ু সুবিচার, সাম্য ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে। আমি বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই মানে শুধু নিজের নয়, বরং বিপন্ন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবা।
বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন। ছয় বছর আগেও যারা জলবায়ু সংকটে বিপর্যস্ত ছিল, তারা আজও ন্যায়বিচার পায়নি। দিন দিন এমন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই শিশুরা আজও দুঃস্বপ্নের ভেতর বাস করে। কারণ, তাদের জন্য বাস্তবতা খুব কঠিন। ভাঙা ঘরবাড়ি, খেত লবণাক্ত পানি দিয়ে ভরা।
গত ছয় বছরে আমি দেখেছি, সারা বিশ্বে শত শত মানুষ দুর্যোগে মারা গেছেন। দুই শতাধিক প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তির পথে এগিয়ে গেছে। বনভূমি উজাড় হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন দুর্যোগ আসছে। যাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছি, তারা বেশ শক্তিশালী। তাদের হাতে অর্থ, প্রভাব, ক্ষমতা—সবই আছে। তারা জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও তীব্র করছে। বৈশ্বিক জলবায়ুতে ক্রমেই বাড়ছে তাদের কাজের প্রভাব। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে পড়ছে শিশু ও তরুণদের ভবিষ্যত। তাই আমাদের দাবি, এই ধ্বংসাত্মক সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হবে।
১৩ থেকে শুরু করে এই ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত একজন কিশোরী হিসেবে আমি দেশের শিশু-কিশোরদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। আমরা কপ সম্মেলনে গিয়ে বিশ্বনেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছি, আপনারা ভুল পথে যাচ্ছেন! ইয়ুথনেট গ্লোবালের কর্মীদের সঙ্গে আমরা তৈরি করেছি যুব জলবায়ু আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সেই সিস্টেমের মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই। যে শক্তি জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি নীতি ও শক্তির বিরুদ্ধে। কারণ, এই প্রতিরোধটা জরুরি।
জলবায়ু অধিকারকর্মী হওয়া আমার কাছে কেবল একটি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বা স্বেচ্ছাসেবা নয়, এটি খরায় পুড়ে যাওয়া কৃষক, বন্যায় ভেসে যাওয়া পরিবার এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর জন্য।
আমাদের থেমে গেলে চলবে না। জলবায়ু সংকটকে বাস্তব সংকট হিসেবে মেনে নিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। ন্যায্য অর্থায়ন ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে হবে। নিজের অধিকার জানার সঙ্গে অন্যের অধিকার রক্ষার দায়িত্বও নিতে হবে। আমাদের দাঁড়াতে হবে পৃথিবীর পক্ষে। জলবায়ু নিয়ে কথা বলতে হবে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। আমরা সবাই সব পেশা ও বয়স থেকেই জলবায়ুকর্মী হতে পারি। ডাক্তার, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষার্থী, শিল্পী, উন্নয়নকর্মী সবাই জলবায়ুকর্মী হতে পারে।
আমি আশা করি, বয়স বা বৈষম্যের ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই জলবায়ুর জন্য একত্র হব। আমরা হব প্রকৃতির, গাছের, জোনাকি পোকার কণ্ঠস্বর। আমরাই এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারব।