মিলেনিয়াল এবং জেন-জিদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়
তোমার বড় ভাই বা বোন কি হয়তো এখনো ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে পছন্দ করে। কিন্তু তোমার ওসব ভালো লাগে না। তুমি হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকটক কিংবা ইনস্টাগ্রামে কাটিয়ে দাও। এই যে তোমার বড় ভাই বা বোনের সঙ্গে তোমার যে পার্থক্য, মিলেনিয়াল আর জেন-জিদের মধ্যেও এই একই পার্থক্য। দুটি আসলে দুই প্রজন্মের গল্প।
কে কোন দলে?
চলো, প্রথমে পরিচয় পর্ব শেষ করি। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তারা মিলেনিয়াল। আর ১৯৯৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যারা জন্মেছে, তারা সবাই জেন-জি। এই জেন-জি প্রজন্মের বেশিরভাগই এখনো কিশোর বা বয়স বিশের কোঠায়।
বলা হয়, জেন-জিরা মোবাইল ও ইন্টারনেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে বড় হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, মিলেনিয়ালরাই প্রথম প্রজন্ম যারা ইন্টারনেটের সঙ্গে বড় হয়েছে। আর জেন-জিরা একেবারে ছোট থেকেই এগুলো হাতে পেয়েছে। জেন-জিদের কাছে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন বা কম্পিউটার খুব সাধারণ বিষয়। কারণ, তারা ছোট থেকে এগুলো দেখছে। কিন্তু মিলেনিয়ালদের জন্য এটা সহজ ছিল না। ইন্টারনেট তখন থাকলে সবাই ব্যবহার করতে পারত না।
ভিন্ন সময়, ভিন্ন অভিজ্ঞতা
দুই প্রজন্মের বেড়ে ওঠার গল্প একেবারে আলাদা। মিলেনিয়ালরা দেখেছে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান। মানে মিলেনিয়ালরা যখন বড় হচ্ছিল, তখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো নতুন এসেছে। ইন্টারনেটের গতি ছিল খুব ধীর। একটা গান ডাউনলোড করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত!
কিন্তু জেন-জিরা এমন এক সময়ে বড় হচ্ছে, যখন সবকিছু চোখের পলকে হয়ে যায়। এক ক্লিকেই মুভি দেখা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা যায়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর মুহূর্তে পেয়ে যায় জেন-জিরা। তাই তাদের ধৈর্য একটু তুলনামূলক কম।
প্রযুক্তি আর যোগাযোগের ভাষাও ভিন্ন
দুই প্রজন্মের মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাসটাও বেশ মজার। মিলেনিয়ালরা ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম বেশি ব্যবহার করে। তারা সুন্দর করে ছবি তুলে গুছিয়ে একটা ক্যাপশন লিখে পোস্ট করতে পছন্দ করে। কিন্তু জেন-জিদের প্রথম পছন্দ হলো টিকটক বা ইউটিউব শর্টসের মতো প্ল্যাটফর্ম। তারা লম্বা লেখা পড়তে খুব একটা পছন্দ করে না। বরং ১৫-৩০ সেকেন্ডের ছোট ছোট মজার ভিডিও দেখতে আর বানাতে বেশি ভালোবাসে। তাদের কাছে ভিডিওটাই আসল।
কাজের জগতে ভিন্ন অগ্রাধিকার
যখন কাজের প্রসঙ্গ আসে, তখনো দুই প্রজন্মের চাওয়া আলাদা। মিলেনিয়ালরা এমন কাজ করতে চায়, যার একটা ভালো উদ্দেশ্য আছে। তারা কাজের পাশাপাশি স্বাধীনতা বা ফ্লেক্সিবিলিটি পছন্দ করে। অন্যদিকে জেন-জিরা চায় কাজের জায়গায় যেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া হয়। তারা এমন একটি পরিবেশ চায়, যেখানে সবাই সবাইকে সম্মান করবে। কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনকে তারা আলাদা রাখতে ভালোবাসে। এতে পরিবার বা বন্ধুদেরও সময় দেওয়া যায়।
মিলও আছে অনেক!
পার্থক্য থাকলেও মিলেনিয়াল আর জেন-জিদের মধ্যে অনেক মিল আছে। দুই প্রজন্মই আগের তুলনায় বেশি বৈচিত্র্যময়। সামাজিক সচেতনতা তাদের বেশি। দুই প্রজন্মই চায় পৃথিবীটা আরও সুন্দর হোক। তারা পরিবেশ নিয়ে ভাবে, সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলে। পুরোনো বা ভুল নিয়মকে প্রশ্ন করতে মোটেও ভয় পায় না। তাদের মধ্যে পছন্দ-অপছন্দের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু দিন শেষে একসঙ্গেই পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। বর্তমানের ফ্যাশন, গান, মুভি বা টেকনোলজি এই দুই প্রজন্মের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। তারাই ঠিক করছে, আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। এরা যেন একই পরিবারের দুই ভাই-বোন!
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস