মন ভালো করার নিনজা টেকনিক

কিছু মানুষ আছে, যাদের মন সব সময়ই থাকে খারাপ। আবার মাঝেমধ্যে মন খারাপ হয় এমন মানুষও আছে। মন খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা যখন কোনো একটা কিছু আশা করি, চেষ্টা করেও সে আশা পূরণ না হলে আমাদের মন খারাপ হয়। কখনো কোনো কারণ ছাড়াও মন খারাপ হতে পারে।

মনে করা যাক, গত অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় তুমি ভালো ফলাফল করতে চেয়েছিলে। এ বছরের শুরুতে ভাবলে, এবার পরীক্ষায় ভালো করব। গণিতে পাব ১০০। মন দিয়ে পড়লে ১০০ তুমি পেতেই পারো। কিন্তু ধরো, কোনো একটা প্রশ্নে সামান্য ভুলের কারণে ১০ নম্বর কাটা গেল। তোমার নম্বর হয়ে গেল ৯০। গণিতে তোমার আশা ছিল ১০০ পাওয়ার। কিন্তু চেষ্টা করেও হলো না। তখন কি তোমার খানিকটা মন খারাপ হয়? হতেই পারে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষের মন খারাপ থেকে ভালো করার সঙ্গে মিষ্টির সম্পর্ক আছে। কারণ, মুখে কোনো খাবারের স্বাদ পেলে আমাদের আবেগ তৈরি হয়। খাদ্য যখন মুখ থেকে পেটের ভেতরে যায়, তখন মুখ ও নাকের শক্তিশালী স্বাদ এবং ঘ্রাণগ্রন্থির মাধ্যমে আবেগ–অনুভূতি দেওয়া অংশগুলো সক্রিয় হয়।

গন্ধ শোঁকার জন্য অনেক অনেক গ্রন্থি আছে আমাদের নাকে। প্রতিটি গন্ধের মিশ্রণকে নাক নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারে। অন্যদিকে মুখের ভেতরের ত্বক ও জিহ্বায় অনেক বেশি সূক্ষ্ম স্নায়ু আছে। খাবারের স্বাদ আর অবস্থা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে। আমরা খেতে গেলে টের পাই, খাবারটি গিলতে ভালো কিংবা খারাপ লাগছে। চকলেট মুখে দেওয়ার পর গলে গেলে আমরা ভালোভাবে অনুভব করতে পারি।

মুখ ও জিহ্বা আমাদের স্বাদবিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে। ছয়টি মৌলিক স্বাদ আছে। মিষ্টি, টক, নোনতা, তেতো, সুস্বাদু (শব্দটি জাপানি শব্দ, উমামি থেকে এসেছে) এবং চর্বিযুক্ত। এর মধ্যে মিষ্টি, সুস্বাদু ও নোনতা খাবারগুলো মেজাজ, আবেগ এবং স্মৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

সুস্বাদু ক্যারামেলযুক্ত আইসক্রিম দেখলে তুমি না বলতে পারো না? তুমি একা নও। বহু মানুষ আইসক্রিম দেখলে নিজেকে খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে না। দোষ যদি দিতে হয়, তবে তোমার মস্তিষ্ককে দোষারোপ করো। স্বাদ এবং গন্ধ টের পাও তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। এখন বিভিন্ন খাবার খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে কোন অংশে কেমন প্রভাব হয়, এমআরআই স্ক্যানার দিয়ে তার বিস্তারিত মানচিত্র পাওয়া যায়।

মিষ্টি, সুস্বাদু ও নোনতা খাবারগুলো মস্তিষ্কের অনেকগুলো কাজ করে। মেজাজ, আবেগ ও স্মৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সুতরাং তুমি যখন আইসক্রিম মুখে দাও, তখন মস্তিষ্কের ভেতরে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সুস্বাদু স্বাদকে সুখী সংবেদনশীল জায়গাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে।

তিক্ত স্বাদের জন্য আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যা সম্ভাব্য বিপজ্জনক খাবার খাওয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। কিছু তেতো খাবার খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যেমন বমি করা। যা–ই হোক, স্বল্পমাত্রায় তিক্ত স্বাদ সহ্য করা যেতে পারে। যেমন সকালের তিতকুটে কফি পান না করলে অনেকে দিনই শুরু করতে পারে না।

অনেকেই প্রচুর পরিমাণে জাঙ্ক ফুড ও মিষ্টি এবং ঠান্ডা কোমল পানীয় খান। এই অভ্যাসকে অনেকে আসক্তি মনে করেন। তবে মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেলে মন ভালো থাকে। মিষ্টি খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। সেরোটোনিন হলো ফিলগুড হরমোন। মন খুশি করতে তাই মিষ্টি খাবার খেতে পারো।

তবে ঘন ঘন বা বেশি মন খারাপ হলে একজন মনোবিদের সহায়তা নিতে পারো। বন্ধুর কাছে মন খারাপের কথা খুলে বলেও মন হালকা করা যায়।