দীর্ঘ জীবনে সুস্থ থাকতে জেন গুডঅল যে তিন নিয়ম মেনে চলেছেন
বিশ্বজুড়ে শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা করে বিখ্যাত হওয়া বিজ্ঞানী ডা. জেন গুডঅল। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন তিনি। বয়সকালেও সুস্থ ছিলেন। জেরিয়্যাট্রিশিয়ান বা বার্ধক্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ জীবন পাওয়ার পেছনে কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলেন। সুস্থ থাকতে এই নিয়মগুলো মানা জরুরি। ডা. গুডঅল সারা জীবন এই তিন সহজ নিয়ম মেনে চলেছেন। নিয়মগুলো হলো, এক, কাজের মধ্যে থাকা বা সক্রিয় থাকা। দুই, জীবনের একটি উদ্দেশ্য থাকা। তিন, আশাবাদী মন নিয়ে চলা।
গুডঅল তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন। প্রায় সাত দশক ধরে চলা কর্মজীবন তাঁর। তিনি বছরে প্রায় ৩০০ দিন কাজের প্রয়োজনে ভ্রমণে থাকতেন। সবার মধ্যে 'আশার বাণী' ছড়িয়ে দিতেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাজকে চাপ হিসেবে না দেখে জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকার মাধ্যম মনে করলে অনেক দিন বেঁচে থাকা যায়। অবসর নেওয়াটা যত দেরিতে হবে, মানুষ শারীরিকভাবে তত সক্রিয় থাকবে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও সতেজ থাকবে।
গুডঅলের নিয়মিত ভ্রমণের অভ্যাস ছিল। তিনি সবসময় মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। প্রকৃতিতে প্রচুর সময় কাটাতেন। এই সবগুলো অভ্যাস তাঁর স্বাস্থ্য ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে আসে। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। সামাজিক যোগাযোগগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলা বন্ধ না করলে নতুন শব্দ ব্যবহার করার মতো দক্ষতাগুলো হারিয়ে যায় না।
গুডঅলের জীবনে একটি লক্ষ্য ছিল। তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কাজ করতেন। তাঁর জীবনের উদ্দেশ্যই এটি। এটি তাঁর দীর্ঘজীবনের শক্তিশালী চালিকাশক্তি। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনে একটি পরিষ্কার উদ্দেশ্য আছে এমন মানুষেরা উদ্দেশ্যহীনদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচেন। নিজেদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন। যখন মানুষ অনুভব করেন যে তার জীবনে কিছু করার আছে। কোনো এক কারণে তাঁর বেঁচে থাকা দরকার। তিনি স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ থাকতে চান। কাজ ছাড়াও এই উদ্দেশ্য শখ থেকেও আসতে পারে। অন্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থেকেও আসতে পারে। জীবনের উদ্দেশ্য যাই হোক, এই উদ্দেশ্য মানুষকে সব সময় শিখতে উৎসাহ দেয়। অন্যদের সঙ্গে মিশতে অনুপ্রেরণা যোগায়। বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিদিন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে কাজ শুরু করার প্রেরণা যোগায়।
জীবনের কঠিনতম সময়েও গুডঅল ছিলেন একজন সত্যিকারের আশাবাদী মানুষ। তাঁর লেখা বইগুলোতে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জের মুখেও আশা বাঁচিয়ে রাখা যায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আশাবাদী ব্যক্তিরা দীর্ঘজীবী হন। কারণ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি স্ট্রেস বা চাপ সামলানোর ক্ষমতা বাড়িয়। চাপের প্রতি প্রতিরোধ তৈরি করে।
মৃত্যু নিয়েও গুডঅলের ভাবনা ছিল অনুপ্রেরণামূলক। তিনি মৃত্যুকে ‘পরবর্তী মহান দুঃসাহসিক অভিযান’ হিসেবে দেখতেন। তিনি বলতেন, মরে যাওয়ার পর কী আছে, তা খুঁজে বের করার চেয়ে বড় কোনো অ্যাডভেঞ্চার হতে পারে না। এই দৃষ্টিভঙ্গিই প্রমাণ করে, তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটি ইতিবাচক মন নিয়ে বেঁচে ছিলেন।
জেন গুডঅলের জীবন থেকে আমাদের শেখার আছে। কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে, জীবনের গভীর উদ্দেশ্য থাকলে এবং মনের মধ্যে আশা থাকলে দীর্ঘ জীবন পাওয়া সম্ভব। এতে জীবনের একটা মানে থাকে। জীবন আনন্দে কাটে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস