সফল হতে চাইলে আগে মস্তিষ্ককে শেখাও
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধ হয় মুশকিল হবে—যে কি না সফল হতে চায় না। কিন্তু সবাই তো আর সফল হতে পারে না। সফলতার চেষ্টা করেও শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে যায়। অনেকে এই ব্যর্থতা থেকে শিখেই আবার পরবর্তী সময়ে সফল হতে পারে। এমনটা কেন হয় জানো? শোনো, সফলতা আসে নিজের চিন্তা আর অভ্যাস থেকে।
মনোবিজ্ঞান বলছে, মানুষের চিন্তা–ভাবনা তার অভ্যাস গড়ে তোলে। আর এই অভ্যাস নিয়ে আসে ফলাফল। তাই যদি কেউ ইতিবাচকভাবে ভাবতে শেখে, মস্তিষ্ককে পুনঃসংযুক্ত করে মনোযোগী হয়, আর নিয়মিত অনুশীলন করে—তাহলে একদিন সফলতা আসবেই।
এবার কিছু বিজ্ঞানসম্মত ও মনস্তাত্ত্বিক কৌশল দেখে নেওয়া যাক, যা মস্তিষ্ককে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে—
শিখতে থাকো, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করো
শরীরের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়ামের দরকার হয়। আর মস্তিষ্কের ব্যায়াম হলো নতুন কিছু শেখা। নতুন দক্ষতা অর্জন, বই পড়া বা ধাঁধার সমাধান—এসব চিন্তাশক্তি আর স্মৃতিশক্তি দুই-ই বাড়ায়। তাই প্রতিদিন শেখার জন্য একটু সময় রেখো—দেখবে, কঠিন কাজও ধীরে ধীরে সহজ মনে হবে।
নিজেকে বলো ‘আমি পারব’
এটা ‘আমি পারব না’ বলার বদলে বলো—‘আমি শিখে নেব’, ‘আমি পারব’। মনোবিজ্ঞান বলছে, এমন ইতিবাচক কথা বললে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামে একধরনের রাসায়নিক বের হয়, যা মানুষকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। যা মানুষকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
তাই প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শক্তির কথা ভাবো। আর বলো যে ‘আজ আমি কিছু ভালো করব।’ দেখবে, তোমার দিন কেমন চমৎকার কেটে যাচ্ছে!
নিজের লক্ষ্য নিয়ে ভাবো
কল্পনা বা ভাবনা একটি শক্তিশালী মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল। সফল মানুষ তাদের লক্ষ্যপূরণে মনোযোগী থাকতে এই কৌশল অনুশীলন করে। তাই চোখ বন্ধ করে ভাবো—তুমি পরীক্ষায় ভালো ফল করছো, কোনো প্রতিযোগিতায় জিতেছ বা তোমার স্বপ্নের প্রজেক্ট শেষ করেছ। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং মন সাফল্যের জন্য প্রস্তুত হয়। আর মস্তিষ্ক অবচেতনে সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে কাজ শুরু করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এভাবে কল্পনা করলে মস্তিষ্ক বিশ্বাস করতে শুরু করে, তুমি এটা করতে পারবে। আর তখনই তুমি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠো!
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বা সকালে একটু সময় নিয়ে কল্পনা করো—তুমি তোমার লক্ষ্যটা অর্জন করেছ। দেখবে, এমন ভাবনা কীভাবে তোমার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মনোযোগী ও মননশীল হও
বর্তমানে ডিজিটাল দুনিয়ায় মনোযোগ ধরে রাখা সত্যিই কঠিন। কিন্তু এই মনোযোগই সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি। মননশীলতার মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব। এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মননশীলতার অনুশীলন মস্তিষ্কের সেই অংশকে শক্তিশালী করে, যেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া আর আত্মনিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত।
তাই প্রতিদিন ১০ মিনিট সময় রাখো একদম চুপচাপ বসে থাকার জন্য। একদম নিরিবিলি হয়ে নিজের শ্বাসের শব্দ শুনে দেখো। দেখবে, এতে কীভাবে মন শান্ত হয়ে কোনো কিছুর দিকে মনোযোগ বেড়ে যাচ্ছে—চিন্তাশক্তি বেড়ে যাচ্ছে।
ভুল থেকে শিখতে হবে
সফল মানুষ ব্যর্থতাকে ভয় পায় না, বরং ভুলকে শিক্ষা হিসেবে নেয়। ভুলই শেখার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তাই ভুল করলে মন খারাপ কোরো না। বরং ভাবো—এটা থেকে তুমি কী শিখলে?
ভুল করলে হতাশ না হয়ে ভাবো, পরের বার কীভাবে আরও ভালো করা যায়। পরের বার কোনো কাজ ঠিক না হলে খাতায় লিখে ফেলো—‘আমি এবার কী শিখলাম?’
এই মানসিকতার পরিবর্তন মস্তিষ্ককে এমনভাবে সাজায়, যাতে চ্যালেঞ্জগুলো বাধা নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার ধাপ হিসেবে দেখা যায়, যা সফল ব্যক্তিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ভালো বন্ধু বেছে নাও
চারপাশের পরিবেশ মানুষের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। তুমি যাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাও, তোমার আচরণও ধীরে ধীরে তাদের মতো হয়ে যায়। অবচেতনে সেই মানুষদের অভ্যাস, আবেগ ও মনোভাব অনুকরণ করে মানুষ, যাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো হয়। একে বলা হয় ‘সোশ্যাল কনটাজিওন’।
তাই এমন বন্ধু বেছে নাও, যারা ইতিবাচক, পরিশ্রমী আর অনুপ্রেরণা দেয়। তাদের সঙ্গেই থাকো—দেখবে, তুমিও বদলে যাচ্ছো।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।