স্কুল তোমার কতটা প্রিয়

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা
স্কুল পালালেই নাকি রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না! মুরব্বিরা অন্তত তা–ই বলেন। আবার অনেক দস্যি ছেলেমেয়ে বলে, স্কুল পালিয়ে রবীন্দ্রনাথ হওয়ার সুযোগ কোথায়? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর সেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক তর্ক–বিতর্ক রয়েছে, সে আলাপে আর না যাই। তবে, জীবনের মোটামুটি ১০-১২ বছরের মতো লম্বা সময় যেখানে কাটাতে হয়, তার প্রতি ভালোবাসা, আবেগ, আক্ষেপ, দুঃখ অনেক রকম অনুভূতি কাজ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তা বলো তো, তোমার স্কুল কেমন লাগে? এই ভালো, এই খারাপ? ঠিক আছে, আর দ্বিধান্বিত হতে হবে না। নিচের প্রশ্নগুলোর ঝটপট উত্তর দিয়ে জেনে নিতে পারো, স্কুল তোমার কতটা প্রিয়।

১. অনেক দিন ছুটির পর ক্লাসে ফিরছ। আগামীকাল ক্লাস। ভাবতেই তোমার যেমন লাগছে—

ক. ‘ইশকুল খুইলাছে রে মওলা, ইশকুল খুইলাছে…’ এই গানের মূল অর্থ ভিন্ন হলেও গান থেকে যে একটা হইহই রইরই আমেজ পাওয়া যায়, অমন খুশিতে গান গাইতে থাকব। রাতে ঘুম হবে না। কখন ক্লাস হবে, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হবে—এসব ভেবে ছটফট করব।
খ. আমার তো রাতে একফোঁটাও ঘুম হবে না। এই দুঃখে, আয় হায়! স্কুল খুলে দিয়েছে? এখন আমার কী হবে? সুখের দিন শেষ!
গ. ভালোই লাগবে, যেহেতু স্কুল খুলল, তা–ও লম্বা ছুটির শেষে। কিন্তু বাড়ির কাজ, রুটিনমাফিক ক্লাস আর পড়া বেড়ে গেলেই এই ভালো লাগাই গলার কাঁটা হয়ে যাবে।

২. পরশু অ্যাসাইনমেন্ট/বাড়ির কাজ জমা দেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তোমার প্রতিক্রিয়া কী?

ক. করতে ইচ্ছা করবে না। কিন্তু উপায় নেই জেনে এক টন কষ্ট নিয়ে করে ফেলব, আর কী!
খ. পরশু জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা মানে? আমার তো সপ্তাহখানেক আগেই সব কাজ শেষ। আমি তো পরশু কখন শিক্ষককে মনে করিয়ে দেব যে কে কে করে আনেনি। তারপর কারা ধরা খাবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব।
গ. চুলোয় যাক সবকিছু। করবই না। যা হওয়ার হবে ভেবে রেখে দেব।

৩. তোমার স্কুলে যাওয়ার পেছনে প্রধানত যে কারণ কাজ করে—

ক. স্কুলে না গেলে বাসায় টিকতে পারব? যেতে হয় বলে যাই। যদিও স্কুলে যাওয়ার নাম করে মাঝেমধ্যে এখানে–সেখানে ঘুরি। হে হে!
খ. আরেহ, স্কুল গেলেই না আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। আড্ডা হবে। টিফিন করব একসঙ্গে।
গ. স্কুলে না যাওয়ার তো কোনো কারণই দেখি না। পড়ব, পরীক্ষা দেব। ভাবতেই ভালো লাগছে।

৪. ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টিকে যেভাবে দেখো—

ক. ছি! খেয়েদেয়ে কাজ নেই। কবি বলেছেন, ‘লোকে তবে করে, কী সুখেরই তরে এমন দুখেরও আশ’—খুব সম্ভবত ক্লাস ফাঁকি দেওয়া নিয়ে ভেবে না পেয়েই বলেছেন।
খ. মাঝেমধ্যে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া খারাপ নয়। তবে হ্যাঁ, বুঝেশুনে আরকি!
গ. ক্লাস ব্যাপারটা পৃথিবীতে তৈরিই হয়েছে ফাঁকি দেওয়ার জন্য, বুঝলেন?

৫. সহপাঠীদের ক্ষেত্রে তোমার মনোভাব কেমন?

ক. আমি তো সবার নামও জানি না। আসলে জানবই–বা কীভাবে, ক্লাসই তো করি না ঠিকমতো।
খ. আমার তাদের নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যারা পড়াশোনা করে, তাদের সঙ্গে আমি আছি শুধু। কিন্তু বাকিগুলোর মাথায় মস্তিষ্ক আছে কি না, তা নিয়ে আমার গভীর সন্দেহ।
গ. সবার সঙ্গে মিশি না। যারা আমার মতো ঠিক আঁতেলও নয়, আবার কেয়ারলেসও নয়—এমন মানুষদের সঙ্গে আমার জমে।

৬. লেকচার চলছে। এমন সময় তুমি যা করো—

ক. সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার গতিতে খাতায় লেকচার তুলি। দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন সব নিয়ে।
খ. যতক্ষণ মনোযোগ থাকবে, লেকচার তুলব খাতায়। এরপর না তুললেও তোলার ভান করব। কাউকে তো আর বিরক্ত করছি না।
গ. খাতার শেষ পাতায় যুগ যুগ ধরে মানুষ যা করে আসছে। আঁকিবুঁকি—হিজিবিজি আঁকিবুঁকি।

৭. শিক্ষকদের বকাঝকা শোনা, ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া কিংবা এ ধরনের কোনো শাস্তির সম্মুখীন হয়েছ কখনো?

ক. আমি একটা বিশ্ব রেকর্ড করার চিন্তায় আছি। কখনো স্কুলে শাস্তি না পাওয়ার রেকর্ড।
খ. আমারও একটা বিশ্ব রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা সবচেয়ে বেশি শাস্তি পাওয়ার! এ তো নিত্যদিনের কথা।
গ. মাঝেমধ্যে হয়েছি। তবে খুব কম।

৮. স্কুলের ইউনিফর্ম ঠিকমতো পরা বা অন্যান্য নিয়মকানুন কতটা মানো?

ক. আমার এত নিয়মকানুন মনে থাকে না। নিজের যেটা ভাল্লাগে করে ফেলি!
খ. মানি তো সব সময়। তবে সময়-অসময় অমান্য হয়ে যায় অজান্তেই।
গ. স্কুলের নিয়মকানুন লেখা কাগজের কত নম্বর পাতায় কোন নিয়মটা লেখা রয়েছে, সব আমার জানা।

৯. আচ্ছা, শিক্ষকদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন?

ক. শিক্ষকেরা তো আমার বন্ধুর মতো। আমাকে সবাই খুব ভালোবাসেন।
খ. মোটামুটি। কেউ কেউ পছন্দ করেন, আর কেউ কেউ ভাবেন আমি পাজির পা-ঝাড়া!
গ. একেবারে সাপে-নেউলে সম্পর্ক! সাপে-নেউলে বাগ্‌ধারাটা অনেক আগে পড়েছিলাম। উত্তরে ব্যবহার করতে পেরে বেশ লাগছে।

১০. ইয়ে, না মানে, জিজ্ঞেস করা ঠিক নয়। কিন্তু তুমি গড়ে কেমন নম্বর পাও?

ক. ১০০! তবে তার আগে একটা মাইনাস বসিয়ে নিন!
খ. এই তো, পাস করে যাই। ফেল করি না। কিন্তু সেটাকে ভালো ফল বলে না। এই হলো আমার নম্বরের নাম!
গ. খুবই খারাপ পাই। এই তো গতবার আমি ৯৯ দশমিক ২ পেলাম। আর অমুক পেল ৯৯ দশমিক ৯৯৯৯৯৯৯৯। এটা কোনো ভালো ফল হলো?

নম্বর

১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
২. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০
৩. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৪. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৫. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫
৬. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
৭. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫
৮. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০
৯. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০
১০. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: সত্যি করে বলো তো, তুমি কি স্কুলে কখনো বুলিংয়ের শিকার হয়েছ? বা প্রতিনিয়ত হও? এমন কিছু ঘটেছে, যার জন্য তোমার স্কুল অপ্রিয়? হয়ে থাকলে মা–বাবা কিংবা কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করো। আর যদি ব্যাপারটা এমন না হয়, তাহলে বলো তো, এত অপ্রিয় হওয়ার কারণ কী? স্কুলজীবন একবার চলে গেলে আর কখনো ফিরে পাবে না। ভবিষ্যৎ থেকে পেছন ফিরে তাকালে তুমি কি নিশ্চিত, স্কুলের প্রতি তোমার এই বিমুখিতা তোমার জন্য ভালো কিছু বয়ে এনেছিল? সবদিক ভেবে দেখো।

৪৫–৭০: তুমি হলে সেই ব্যক্তি যে স্কুলকে ভালোও বাসো না, মন্দও বাসো না। তবে পড়ালেখা কিংবা বন্ধুদের ভালোবাসো। স্কুল ‘করার জন্য করা’ এই মনোবৃত্তি তোমার মধ্যে থাকলেও শেষে গিয়ে আবার স্কুলটাকে না ভালোবেসেও পারো না। তোমার স্কুল ভালোই লাগে, যদি বন্ধুরা থাকে। ক্লাসে দুষ্টুমি করেও ধরা না খাওয়ার রেকর্ড তোমার ঝুলিতে আছে। তবে বন্ধুদের বাইরে তুমি কিন্তু খুব একটা সহনশীল নও। এদিকে আরও নজর দাও।

৭৫-১০০: তুমিই প্রকৃত স্কুলপ্রেমী। তবে তুমি আবার স্কুলকে এতটাই ভালোবাসো যে সারা বিশ্বে যা–ই ঘটুক না কেন, তুমি ক্লাস নিয়েই পড়ে থাকবে। হয়তো তোমার স্কুলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এলেন। তুমি বিরক্ত হয়ে বলবে, এটা আসার কোনো সময় হলো? অঙ্ক ক্লাসের সময় কেউ আসে? এখন তো ক্লাস মিস হবে। তবে যারা তোমার মতো ভালো ফলাফল করে না, তুমি কিন্তু তাদের সঙ্গে খুব একটা মেশো না। বরং তাদের অবজ্ঞা করো। এটা ঠিক নয়। স্কুলকে ভালোবাসো, সেই সঙ্গে ভেবে দেখো, নিজের স্কুলটাকে কীভাবে সবার প্রিয় করে তোলা যায়।