ছেলে ও মেয়েদের শার্টের বোতাম বিপরীত দিকে থাকে কেন

পুরুষের শার্টে বোতাম থাকে ডানে, নারীর শার্টে বাঁয়ে, এই ধারা প্রাচীনকালেরমডেল: নিরব ও নীলা: ছবি: প্রথম আলো

কখনো কি খেয়াল করেছ, ছেলেদের শার্টের বোতাম ডান দিকে আর মেয়েদের শার্টের বোতাম থাকে বাঁ দিকে? প্রথমবার এই বিষয় খেয়াল করলে মনে হতে পারে, শার্ট বানানোর সময় কোনো ভুল হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এটি কোনো ভুল নয়। শত শত বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। আমরা শুধু খেয়াল করিনি। কেন এমনভাবে বোতাম লাগানো হয়।

অনেকে হয়তো ভাবতে পারো, এর কারণটা বাঁ বা ডানহাতি হওয়ার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আসলে তা নয়। কারণ, বেশির ভাগ মানুষই তো ডানহাতি। আসলে ছেলে ও মেয়েদের শার্টের বোতাম বিপরীত দিকে থাকার পেছনে রয়েছে পুরোনো দিনের ফ্যাশন।

ছেলে ও মেয়েদের শার্টের বোতাম বিপরীত দিকে থাকা নিয়ে বেশ কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। এর একটি কারণ হলো, পোশাক পরার অভ্যাস। একসময় মানুষের পোশাক–পরিচ্ছদ আজকের মতো সহজ ছিল না। ইতিহাসে দেখা যায়, বেশির ভাগ পুরুষ নিজেরাই নিজেদের পোশাক পরতেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুরুষেরা কোমর কোট, প্যান্টালুন, গেটার ও উলের জ্যাকেটের মতো কয়েকটি পোশাকই পরতেন। যেহেতু বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ডানহাতি। তাই ডান হাত দিয়ে শার্টের বোতাম লাগানো ও খোলা সহজ করার জন্য বোতামগুলো ডান দিকে রাখা হয়। এর ফলে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে শার্ট পরতে পারতেন।

আরও পড়ুন

তখন পুরুষদের পোশাক তুলনামূলকভাবে সাধারণ হলেও নারীদের পোশাক ছিল অনেক জটিল। পোশাকে পেটিকোট, ব্লুমার, গাউন ও কর্সেটের মতো এক ডজনের বেশি অংশ থাকত। এসব পোশাক একা পরা খুবই কঠিন ছিল। অভিজাত পরিবারের উচ্চবিত্ত নারীদের পোশাক অনেক জটিল হওয়ায়, সেগুলো পরতে সাহায্য লাগত। দাসী বা পরিচারিকারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন তাঁদের গৃহকর্ত্রীকে পোশাক পরানোর জন্য। যেহেতু এই পরিচারিকাদের বেশির ভাগই ডানহাতি ছিলেন, তাই তাঁদের সুবিধার কথা ভেবে পোশাক প্রস্তুতকারীরা বোতামগুলো পোশাকের বাঁ দিকে বসাতেন। একসময় এটি উচ্চবিত্ত নারীদের ফ্যাশনে পরিণত হয়। তখন থেকে সেই প্রথা আজও চলছে।

তাহলে আবার এখন একটা প্রশ্ন চলে আসে। আধুনিক যুগে নারীরা যখন নিজেরাই পোশাক পরতে পারেন, তখনকার সময় দাসীদের সুবিধার জন্য চালু হওয়া এই প্রথা কেন এখনো টিকে আছে? এর উত্তর আছে আমাদের অভ্যাস ও ঐতিহ্যে।

আরও পড়ুন

পুরোনো প্রথা আজও কেন আমরা মেনে চলি, তা বোঝানোর জন্য কোয়ার্টি কি–বোর্ডের উদাহরণটি দারুণ। আমরা যে কি–বোর্ড ব্যবহার করি, তা আসলে টাইপরাইটার থেকে এসেছে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, যাতে ঘন ঘন ব্যবহৃত অক্ষরগুলো দূরে দূরে থাকে। এর কারণ ছিল, দ্রুত টাইপ করলে টাইপরাইটারের যান্ত্রিক লিভারগুলো জ্যাম হয়ে যেত। যদিও এখন আরও সহজ ও দ্রুত টাইপ করার জন্য অনেক কার্যকর কি–বোর্ড লেআউট রয়েছে। তবুও আমরা সেই পুরোনো কোয়ার্টি লেআউটই ব্যবহার করি।

আজকের দিনে এমন সমস্যার কোনো সমাধান না থাকলেও আমরা এখনো সেকেলের জিনিস ব্যবহার করি। কারণ, এটি প্রচলিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। একইভাবে পোশাকের বোতামের এই প্রথাও পরিবর্তন করার কোনো আসল কারণ নেই। যেহেতু এই ছোট পার্থক্যটি খুব কম মানুষই লক্ষ করে বা এ নিয়ে অভিযোগ করে। তাই পোশাক প্রস্তুতকারী বা ক্রেতা কারও পক্ষ থেকেই এটি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি। এভাবেই শত শত বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্য আজও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে টিকে আছে। তবে ডানহাতি মেয়েদের কথা মাথায় রেখে তাঁদের জীবনকে সহজ করতে বোতামের পাশ পরিবর্তন করা যেতেই পারে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নিউইয়র্ক পোস্ট

আরও পড়ুন