অবাক ফল ভক্ষণ

এই বঙ্গদেশে ফলের আকাল কোনো কালেই ছিল না। আজকাল আরও কত ফলই না যোগ হয়েছে। সেসব যোগ করলে দাঁড়ায় ‘যোগফল’। পরীক্ষা দিয়েছ। হয়তো পেয়েছ ঘোড়ার ডিম। সেটাও কিন্তু ফল। ‘ফলাফল’ আর কি! জীবনে কেউ সফল হয়, কেউ বা বিফল। ভূত-ভবিষ্যৎ জানতে চাও? হাত বাড়াও ‘রাশিফলের’ দিকে। কেউ কেউ ‘মাকাল ফল’-এর কথাও বলে থাকে। মাকাল বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর, কিন্তু তার ভেতরে কিচ্ছুটি নেই।

জানোই তো, ডুমুরের ফুল দেখা যায় না। এমন একটা ফলও তো থাকা চাই, যা কখনো প্রকাশিত হয় না বা দেখা যায় না। এ রকম ফলও আছে এই দেশে। নাম ‘তদন্ত ফল’। আছে কর্মফল, সুফল, কুফল।

ফলময় এই বঙ্গে ফল বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা চালানো কোনো বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, এসবের ফলে তেমন কোনো ফল লাভ হবে কি না!

ফল নিয়ে নিষ্ফল প্রলাপ বকে লাভ হোক বা না হোক, গাছ থেকে পাওয়া ফল খেলে তোমার যে ত্রিমুখী ফল লাভ হবে, সেটা কিন্তু নিশ্চিত।

   * প্রথমত, ফলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ থাকে;

   * দ্বিতীয়ত, এটি লো ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, অর্থাৎ এটি খেলে মোটা হওয়ার ভয় নেই;

* তৃতীয়ত, এটির ফাইবার বা ছিবড়েযুক্ত অংশ কোষ্ঠকাঠিন্য-জাতীয় সমস্যা দূর করে।

কী কী ফল আছে, তার পরিচয় লিখে জায়গা ভরে কী ফল পাবে, বলো? সবই তো তোমাদের চেনা। তাই শুধু একটা ছড়া বলি:

‘জাম জামরুল কতবেল

আতা কাঁঠাল নারকেল

তাল তরমুজ আমড়া

কামরাঙা বেল পেয়ারা

পেঁপে ডালিম জলপাই

বরই দিলাম আর কী চাই?’

হ্যাঁ, আরও চাই আম, লিচু, আপেল, কমলা, আনারস, আঙুর, আখ—আরও অনেক কিছু। কেন চাই জানো তো? শুধুই কি ফলগুলো মজাদার বলে?

না। ফলে রয়েছে ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পানি। ফল অ্যান্টি-অ্যাসিডিক। এতে থাকা অর্গানিক অ্যাসিড ও ন্যাচারাল হাই সুগার শরীর সুস্থ ও তাজা রাখে, সেই সঙ্গে দেহে এনে দেয় শক্তি বা বল। ফলে প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। তাই ফল খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইমসমৃদ্ধ ফল আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ফল খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কমে। বার্ধক্যও প্রতিরোধ করে ফল। মেটাতে সাহায্য করে শরীরে ভিটামিনের প্রয়োজন। এনভায়রনমেন্টাল টক্সিন ডিটক্সিফাই করার জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন। আর ফল সেই প্রয়োজন মেটাতেও সাহায্য করে।

বেশি করে মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত সবার। কারণ, এতে এনার্জি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ফল হাই ব্লাডপ্রেশার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হার্টের সমস্যা দূর করে।

তোমার অতি চেনা দেশি ফলগুলোর কথাই ধরো। মজাদার রসাল আম একদিকে যেমন শরীরে শক্তি বাড়ায়, অন্যদিকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে। কাঁঠাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, জাম রক্ত পরিষ্কার করে, তরমুজ যেমন তোমাকে তৃপ্ত করবে, তেমনি তোমার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। সাইজে পিচ্চি হলেও লিচু তোমার দেহের শক্তি তো বাড়াবেই, সেই সঙ্গে বাড়াবে মস্তিষ্কের শক্তিও। লেবু, মোসাম্বি, কমলালেবু—এসবের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। সময় সময় যারা জ্বরে জর্জর, তাদের জন্য এই ফলগুলো ওষুধের কাজ করে। এতে থাকে গ্লুকোজও, তাই আঙুর খেলেই এনার্জি বেড়ে যায়। পেঁপে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় আর সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসকেও রাখে নিয়ন্ত্রণে। জ্বরজ্বারি হলে আনারস খেলে দেহে বল বৃদ্ধি পায়, বাড়ে মুখের রুচি। ডাবের পানি যেমন খুবই উপাদেয়, তেমনি তা শরীর ঠান্ডা রাখতেও বেশ কার্যকরী। ফল ছাড়া আর কিসেই বা এত সুফল পাবে বলো? ফরমালিনমুক্ত ফলের ক্ষেত্রে তাই অনায়াসেই বলে দেওয়া যায়, ‘বিফলে মূল্য ফেরত’!

তোমাকে আদর করে অনেকে ‘কচি’ বলে, আবার তোমার পরিণত বুদ্ধি দেখে বলে, ‘খুব দেখি পেকে গেছিস!’ তুমি যেন রসাল কোনো ফল, কচি থেকে এইমাত্র পাকলে। তোমার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে বলে, কমলার কোয়ার মতো ঠোঁট।

ফল এভাবেই আমাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই যে দেখ না, জনতা সব সময়ই হয় ‘আমজনতা’। সেই আমজনতার মাথায় তাদের নেতারা আবার ‘কাঁঠাল’ ভেঙে খেতেই বেশি ভালোবাসেন। জানোই তো, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ‘কলা’, সংগীতের সঙ্গে মেলাতে হয় ‘তাল’। কাউকে এগিয়ে নিতে ঝোলানো হয় ‘মুলা’, এত কিছুর পরও রক্ষা করতে হয় ‘কুল’।

ফলের সঙ্গে তোমার আমার এত যে সম্পর্ক, বাবা-মা যখন ফল কেটে পেছন পেছন ঘোরেন, তখন তুমি কেনই বা তা খেতে অস্বীকার করবে? তার চেয়ে তুমি বরং সুফল লাভের আশায় গাছে কাঁঠাল দেখলেই গোঁফে তেল দিয়ে বসে থেকো। ফল ভালোই হবে।