আধুনিকতার অপর নাম কল্যাণ

আমরা আধুনিক যুগে বাস করছি। আধুনিক সুযোগসুবিধা ভোগের পাশাপাশি কিছু ধ্বংসাত্মক অভ্যাসেও আমাদের নিমজ্জিত করছে। সভ্যতা যখন বিস্ময়কর সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তরুণেরা আক্রান্ত সর্বনাশা নেশায়—সে নেশা মাদকের। যে তরুণের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের প্রতিবাদের-যুদ্ধজয়ের, তাদের ভবিষ্যৎ অসার করার, জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করার ষড়যন্ত্র চলছে। যার পরিণাম অশুভ, তা আধুনিক হতে পারে না, সুন্দর হতে পারে না। তাই ‘মাদককে না বলাই আধুনিকতা’।

নেশার ইতিহাস প্রাচীন হলেও তা ছিল সীমিত। ফরাসি বিপ্লবের সময় পরাজিত সৈনিকদের অনেকে মাদকাসক্ত হন। সীমান্ত বা আকাশপথে কিছুকাল আগেও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের স্বর্গভূমি ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’।

মাদক গ্রহণের বেশ কয়েকটি কারণ আছে।

ভয়াবহতা জেনেও অনেকে কৌতূহলে মাদক নেয়। ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। অসৎ বন্ধুদের প্ররোচণায় অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হতাশা, পরীক্ষায় ফেল, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, সেশনজট বা বেকারত্বে তরুণেরা নেশাগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতায় মাদকের সহজপ্রাপ্যতায় তরুণেরা নেশায় ঝুঁকে পড়ে।

কথায় আছে, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’। মাদকে আসক্ত হওয়ার আগেই আধুনিক মানুষ মাদককে না বলেন। এ জন্য কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে।

উৎপাদন ও আমদানি নিষিদ্ধ করা। স্কুল-কলেজে মাদকের কুফল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি। সভা, সমিতি, সেমিনার ও প্রচারমাধ্যমের মাধ্যমে একটাই মন্ত্র জাগ্রত করতে হবে, ‘মাদককে না বলো।’

মাদককে না বলতে কিছু উপায় কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন: জীবনের পরিণতি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করা। চিন্তা করা যে মাদক না নিলে সে হয়তো এমন কিছু পাবে যা তাকে সফলতর করবে। সেটা হতে পারে ক্যারিয়ার বা পরিবারের বন্ধন ও বন্ধুর ভালোবাসা। নিজের প্রতিভা বা দক্ষতা নিয়ে ভাবা। এ প্রতিভার প্রধান অন্তরায় মাদককে তখন সহজেই না বলা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি ফল অনুধাবন করা। মাদক তখনই না বলা সম্ভব যখন ব্যক্তি বুঝবে এর ফলাফল ভালো নয়। নিজেকে সব প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে সংযমী করা যে কারও কাছ থেকে পাওয়া ঘৃণ্য প্রস্তাবকে যেন বলতে পারা—না, না এবং না। মাদকাসক্ত ব্যক্তির সাহচর্য এড়িয়ে এমন ব্যক্তির সান্নিধ্য খুঁজে নেওয়া যে তাকে আলোর পথ দেখাবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা যা কি না তার বিবেকবোধ জাগ্রত করবে। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবার, আত্মীয় সবার কথা চিন্তা করে মাদককে না বলা।

মাদকাসক্তির মতো সর্বনাশা নেশার গ্রাসে তরুণ প্রজন্ম অথর্ব ও অসার হতে চলেছে। আধুনিক হতে গিয়ে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মনে রাখা দরকার, আধুনিকতার অপর নাম মানোন্নয়ন, কল্যাণকর। তাই যার মধ্যে কল্যাণ ও সমাজের অগ্রগতি নিহিত তাই আধুনিকতা। মাদকাসক্তির মতো বিষধর ছোবল থেকে নিজেকে, সমাজকে রক্ষা করতে মাদককে না বলাই প্রকৃতপক্ষে আধুনিকতা।