যদি তুমি আর না ঘুমাও?

সকালে ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি শুরু করতে হয় তোমাকে। অ্যালার্মে সময়মতো ঘুম না ভাঙার কারণে উঠেই ব্যাগ গোছানো, টিফিন, দাঁত ব্রাশ করা, জতা মোছা, ইউনিফর্ম পরা...উফ্‌ কত কাজ যে করতে হয় এতটুকু সময়ে। তবে কখনো মনে হয়নি যে না ঘুমিয়েই যদি সব কাজ করা যেত? হয়তো না ঘুমালেই এত সব ঝামেলা থাকত না। তখন তুমি সময়মতো সব কাজ করতে পারতে। হয়তো আরেকটু বেশি সময় গল্পের বইটা পড়তে পারতে? তাহলে কী হবে, যদি তুমি আর না ঘুমাও?

একজন সাধারণ মানুষ তার জীবনের এক–তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করে বিছানায়। এটা জেনে ভাবতেই পারো যে তোমার জীবনটাও তাহলে এভাবে বৃথা বিছানায় শুয়ে কেটে যাবে। কিন্তু তোমার দেহের জন্য এই সময় কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের দেহের বিশেষ কিছু হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব হরমোন আমাদের দেহের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে সেখানে নতুন কোষ তৈরি করে। তাই দেহের সঠিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য তোমার পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন।

তবে তুমি ২৪ ঘণ্টার বেশি না ঘুমালে হঠাৎই তোমার খুব ভালো লাগবে। এমনকি আগের থেকে বেশি ভালো লাগবে। নিজেকে বেশ চাঙা মনে করবে তুমি। কারণ তোমার মস্তিষ্ক তখন ডোপামিন নামে এক বিশেষ হরমোন নিঃসরণ করবে। এই হরমোন তোমার যাবতীয় কাজকে শেষ সময় অব্দি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু এই চাঙা ভাব অল্প সময়ের জন্য। কিছু সময় পরেই তুমি তোমার কাজের কথা মনে রাখতে পারবে না। তোমার নিজেকে তখন নেশাগ্রস্ত মনে হবে। তুমি ধীরে ধীরে তোমার দৈহিক কাজে সমন্বয় হারাবে।

তবে কী হবে, যদি তুমি টানা ৪৮ ঘণ্টা না ঘুমাও? এ পর্যায়ে তোমার দেহ ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। দেহের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন, তোমার দেহ সেটা সরবরাহ করতে পারবে না। তোমার চোখের ভেতরের পর্দা আরও লাল হয়ে উঠবে। তোমার মুখের চামড়ার ভাঁজের দাগ আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তবে ধীরে ধীরে তোমার সঙ্গে হ্যালুসিনেশন হওয়া শুরু হবে। তোমার মস্তিষ্ক স্বপ্ন আর বাস্তবে পার্থক্য করতে পারবে না।

তোমার ঘুম–বিরতি যদি ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে যায়, তাহলে তোমার দেহ এবার নিজের ভেতরের প্রোটিন ব্যবহার করা শুরু করবে। এ ছাড়া নিজস্ব কোষ, অবশিষ্ট গ্লুকোজ, চর্বিসহ দেহ সব ধরনের শক্তির উৎস ব্যবহার করবে। দুই সপ্তাহ পেরোতেই তোমার দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়বে যে তুমি সাধারণ রোগেই মারা যাবে। আর তিন সপ্তাহ পেরোতেই, তুমি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। তুমি যদি একটু বেশি স্বাস্থ্যবান হও, তাহলে হয়তো আরও কিছুদিন বেশি ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে। তাই কখনোই না ঘুমিয়ে এসব পরীক্ষা করতে যেয়ো না।

যদি তোমার বেশি ক্লান্ত লাগে, তাহলে অবশ্যই তোমার পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে সময়মতো ঘুমাও। তাহলেই সময়মতো ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারবে। সময়মতো সারতে পারবে তোমার প্রাত্যহিক কাজ।

ইনশ ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে