ঝকঝকে দাঁতে সুন্দর হাসি

পিনপতন নীরবতা ক্লাসে। একটু খেয়াল করলে মনে হয় সবার নিশ্বাস নেওয়ার শব্দটাও স্পষ্ট শোনা যাবে। ভয়ে কাঠ হয়ে বসে আছে সবাই। ক্লাস ক্যাপ্টেনকে স্যার বলে গেছেন, ‘আমি একটু মিটিংয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুরো ক্লাসে একটা কথাও হবে না। যার দাঁত দেখা যাবে, তার নামই লিখে রাখবি বোর্ডে। আমি এসে বোঝাব মজা।’ ক্লাস ক্যাপ্টেনের আনন্দ আর দেখে কে! নাম লেখার জন্য আঁকুপাঁকু করছে তার মন। কিন্তু আজ মনে হয় কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। কথা বলা তো দূরের কথা, মুখই খুলছে না কেউ। আরেকটু হতাশই হলো ক্লাস ক্যাপ্টেন। ঠিক এমন সময় ‘আউ’ বলে একটা শব্দ করল কে যেন। মনে হয় লাস্ট বেঞ্চ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে হাসির বাঁধ ভেঙে সুনামির মতো ছড়িয়ে গেল পুরো ক্লাসে। ক্লাস ক্যাপ্টেনের মাথায় হাত। সবাই তো হেসেছে। কার নাম লিখবে সে? কে হেসেছে এটা লেখার চেয়ে সহজ, কে হাসেনি, তার নাম লেখা। কারণ ক্যাপ্টেন ছাড়া আর সবাই হেসেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ক্যাপ্টেন। এমনিতেই খুব একটা হাসে না সে। হাসলেই বেরিয়ে পড়ে হলদেটে দাঁতগুলো। ফলে মুখে একটা সিরিয়াস ভাব ঝুলিয়ে রাখাই তার অভ্যাস। কিন্তু হাসি সংক্রামক। একজন হাসতে শুরু করলে সে হাসি অন্যের মুখ হয়ে ঘুরতে থাকে। অট্টহাসি, চাপা হাসি, মাপা হাসি—কত রকমের হাসি যে আছে! সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে হাসতে খুব ইচ্ছা করছে তার। কিন্তু হাসা যাবে না। কারণ, সে ক্লাস ক্যাপ্টেন। তার চেয়েও বড় কারণ, দাঁতগুলোও হলুদ। ফলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল ক্যাপ্টেন। মনে মনে ভাবতে লাগল, এত কিছু করলাম, তবু দাঁত কেন হলুদ?
তোমাদেরও কারও মাথায় কি এই ক্লাস ক্যাপ্টেনের মতো ভাবনা উঁকি দেয়? ধরেই নিচ্ছি দেয় না। কিন্তু আমার যে খুব বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে দুই পাতা জায়গা পেলে চুপচাপ বসে থাকা খুব কঠিন। তাই আমি জ্ঞান দিয়েই দিই, নাকি? কথা দিচ্ছি, সহজ ভাষায় লিখব। স্যার যেমন বলেন ‘পয়েন্ট করে করে লিখবি’, সে রকম। পড়তে গিয়ে তোমাদের দাঁত ভেঙে যাবে না, এ বিষয়ে ভরসা রাখতে পারো।

দাঁত যেসব কারণে হলদে হয়
• গোপনে ধূমপান করলেও প্রমাণ থেকে যায় দাঁতে। নিয়মিত ধূমপানে দাঁতের রং দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
• অতিরিক্ত মাত্রায় চা কিংবা কফি পানে দাঁত হলদেটে হয়ে ওঠে। এই সরল পানীয় দাঁতে জটিল দাগ ফেলে দেয়।
• তাড়াহুড়ো করে দায়সারা দাঁত ব্রাশে মুখে খাদ্যকণা থেকে যায়। আস্তে–ধীরে দাঁত হয়ে ওঠে হলদেটে।
• নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের প্রভাবেও দাঁত হলুদ হয়ে উঠতে পারে।
• জিনগত কারণেও কারও কারও দাঁত হলুদ হয়।
• কোমল পানীয় ও কৃত্রিম ফলের রসও দাঁতের রং পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

দাঁতের বাইরের অংশ এনামেলে তৈরি। এনামেল শরীরের সবচেয়ে শক্ত অংশ। অযত্নে এই মজবুত অংশও দুর্বল হয়ে যায়। প্রথমে দাঁত সুস্থ রাখতে হবে, তারপর তার সৌন্দর্য। এবার সুস্থ দাঁতের জন্য করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
• প্রতিদিন সকালে খাওয়ার পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
• দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার পরিষ্কারের জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে।
• তিন মাস অন্তর অন্তর ব্রাশ বদলে ফেলা ভালো। ব্রাশের ব্রিসেল রোগ ছড়াতে পারে।
• ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহারে দাঁতের ক্ষয় এড়ানো যায়।
• শর্করাজাতীয় খাদ্য যেমন ভাত–রুটি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারের পর খুব ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
• ছয় মাস অন্তর অন্তর স্কেলিং করলে দাঁতের মূলে ক্যালকুলাসা জমতে পারে না।
• আপেলকে বলা হয় প্রাকৃতিক টুথব্রাশ, নিয়মিত আপেল খেলে দাঁত পরিষ্কার থাকবে, পুষ্টিচাহিদাও মিটবে।
ঝকঝকে দাঁতের জন্য
• দাঁত ঝকঝকে রাখতে স্ট্রবেরি চমত্কার ফল। স্ট্রবেরিতে আছে ম্যালিক অ্যাসিড নামের একধরনের উপাদান। এ উপাদানটি দাঁতের ওপর জমে থাকা হলুদ আস্তরণ সরাতে সাহায্য করে।
• লেবুতে প্রাকৃতিকভাবেই ব্লিচিং উপাদান থাকে। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতে পারে লেবু। লেবুর খোসা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত সাদা হবে। সঙ্গে ভিটামিন সির চাহিদাও পূরণ হবে।
• খাবারে ব্যবহৃত বেকিং সোডাও দাঁত সাদা করতে পারে। পেস্টের ওপর খানিকটা বেকিং সোডা ছিটিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত হবে সাদা।
• সাধারণ লবণ দিয়েও দাঁত সাদা করা যায়। লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত সাদা হবে, সঙ্গে মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া দূর হবে। অবশ্য যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, লবণ দিয়ে দাঁত মাজা তাদের জন্য একেবারেই নিষেধ।
• ক্যালসিয়াম দাঁতের গঠনের একটি অন্যতম উপাদান। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে দাঁতের রং পরিবর্তিত হতে থাকে। দাঁতের সুস্থতা ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
• কমলালেবুর খোসা ফেলে না দিয়ে খানিকটা কাজে লাগাতে পারো। খোসায় থাকা উপাদানগুলো খুব সহজেই দাঁত পরিষ্কার করতে পারে।
• দাঁত সাদা করতে নিয়মিত মাশরুম খেতে পারো। মাশরুম মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং দাঁতে প্লাক হতে বাধা দেয়। দাঁতে প্লাক না জমলে দাঁত তো সাদা দেখাবেই।
• দাঁতের বাইরের যে আবরণ, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাঁতের রং হলদেটে হয়ে যায়। দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম ও প্রোবায়োটিকস দাঁতের এনামেলের সুরক্ষা দেয়। তাই দইও হতে পারে দাঁত সাদা রাখার আরেক সহজ দাওয়াই।