টাইম মেশিন

লেখক: এইচ জি ওয়েলস | প্রথম প্রকাশ: ১৮৯৫ | মূল ভাষা: ইংরেজি

ছেলেবেলা থেকে শুনে এসেছ, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। দৈনন্দিন জীবনে তো আমরা এমনটাই দেখি। কিন্তু কেমন হতো যদি অতীতে চলে যাওয়া যেত? একেবারে ছোট্টবেলার সেই দিনগুলোতে, যখন স্কুলে বা কলেজে যেতে হতো না? কিংবা কেমন হতো যদি ঘুরে আসা যেত সুদূর ভবিষ্যতে, যেখানে কারও পক্ষে যাওয়া কোনো দিনই সম্ভব ছিল না?

জানি, তুমি নাক-মুখ কুঁচকে বলবে, এ তো অসম্ভব! কিন্তু একটা কথা জানো তো, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্রমাণ করে গেছেন, সময়ও শাশ্বত নয়। কারও বেলায় সময় খুব দ্রুত, আবার কারও বেলায় সময় বেশ ধীরে চলে। অর্থাৎ সময়ের এই বেগ বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতও পরিভ্রমণ করা সম্ভব।

অবশ্য আইনস্টাইন এ কথা বলার অনেক আগেই বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীসহ অনেকেই বলেছিলেন সে কথা। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ এক লেখক হারবার্ট জর্জ ওয়েলস। লোকে তাঁকে এইচ জি ওয়েলস বা ওয়েলস নামেই বেশি চেনে। জুল ভার্ন, হুগো গার্নসব্যাকসহ তাঁকেও বলা হয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জনক। ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়েলসের দ্য টাইম মেশিন। এই বইতে কল্পনায় সময় পরিভ্রমণের এক আশ্চর্য গল্প শুনিয়েছেন ওয়েলস। গল্পে সময় পর্যটক একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। প্রাদেশিক মেয়র, একজন ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানীসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে এনে এই সময় পরিভ্রমণের ধারণা তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু কেউই তাঁর কথায় বিশ্বাস করে না। অবশেষে পরের বৃহস্পতিবার সবাইকে আরেকবার ডেকে আনেন বিজ্ঞানী। সবাই রাতের খাবার সেরে নেওয়ার পরে তিনি কোথা থেকে যেন ফিরে আসেন। তাঁকে সে সময় বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। এর কারণ হিসেবে তিনি উপস্থিত সবাইকে শোনান এক আশ্চর্য কাহিনি। জানান তাঁর অবিশ্বাস্য টাইম ট্রাভেলের কথা। ভবিষ্যতের অজানা পৃথিবীতে পাড়ি জমানোর পর চুরি হয়ে যায় তাঁর টাইম মেশিন। ভীষণ বিপদে পড়ল পর্যটক। রোমাঞ্চকর সেই কাহিনি শুনতে শুনতে বিস্ময়ে হা হয়ে যান উপস্থিত সবাই। তারপর? তারপর কীভাবে বর্তমানে ফিরে এলেন তিনি? কেমন ছিল সে সময়কার অভিজ্ঞতা? কী পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে মানুষ ভবিষ্যতে? কে-ই বা চুরি করল তাঁর টাইম মেশিন? সব প্রশ্নের জবাব মিলবে এইচ জি ওয়েলসের এ উপন্যাসটি পড়লে।

প্রতি মুহূর্তেই পাঠকের জন্য রয়েছে চমক। টান টান উত্তেজনা। একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা অসম্ভবই বটে। আর গল্পের শেষটা এমনভাবে করেছেন ওয়েলস, যেন পড়ার পরেও রেশটা রয়ে যাবে অনেকক্ষণ। পাঠকের সব কৌতূহল মিটিয়ে অজানা রহস্যের সন্ধান দিয়ে লেখা শেষ করেন ওয়েলস।

সাবলীল বাংলায় এই বইয়ের বেশ কয়েকটি অনুবাদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সেবা প্রকাশনী, বর্ণায়ন, সন্দেশসহ কয়েকটি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে বইটির অনুবাদ। যেটি ইচ্ছে সংগ্রহ করে পড়ে ফেলো। বই পড়া হলে বইটি অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটিও দেখে ফেলতে পারো। ভবিষ্যতে যাওয়া আসলেই মানুষের পক্ষে সম্ভব কি না তা নিয়ে এখনো সন্দিহান বিজ্ঞানীরা। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তিতর্কের শেষ নেই বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের। তবে এটুকু বলা যায়, ওয়েলসের দ্য টাইম মেশিন পড়ার সময় তুমি বর্তমানে থাকবে না, এটা এক শ ভাগ সত্যি!